রজতজয়ন্তী পেরিয়ে ২৬ বছরে পদার্পণ করল মাভাবিপ্রবি

মাভাবিপ্রবি
মাভাবিপ্রবি  © সংগৃহীত

আজ ১২ অক্টোবর, টাঙ্গাইলের শহরে বুকে মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও কাশ্মীরের পীর শাহ জামানের স্মৃতিবিজড়িত সন্তোষে শিক্ষার প্রসারে স্থাপিত মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) রজতজয়ন্তী। প্রতিষ্ঠার ২৫ বছর পেরিয়ে ২৬তম বর্ষে পদার্পণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী কর্তৃক স্থাপিত সন্তোষ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড সরকারের কাছে সন্তোষেই একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব পেশ করে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৯ সালের ১২ অক্টোবর মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক সন্তোষে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এটি কোনো গতানুগতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার নেপথ্যে রয়েছে অসংখ্য জ্ঞানী-গুণী, রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ ও সাধারণ মানুষের অবদান। 

মওলানা ভাসানী তার জীবদ্দশায় সন্তোষ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের নানামুখী উদ্যোগ নিলেও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তার কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। মৃত্যুর পর তার মাজার প্রাঙ্গণে তারই নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হলো। শুরু হয় বাংলাদেশের ১২তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পথচলা।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের কিংবদন্তি মওলানা ভাসানী মানেই-এক কর্মোদ্যোগী, সংগ্রামী, মানবতাবাদী ও মুক্তিকামী মানুষের মুক্তির দিশারী, গতানুগতিক ধারার বাইরে ভিন্নধর্মী, বিস্তৃত ও সুদূরপ্রসারি চিন্তাধারার এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। গরীব ও অসহায় জনগণ কীভাবে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজেদের উন্নয়ন তথা বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরবে এটাই ছিল তাঁর চিন্তা-চেতনার কেন্দ্রবিন্দু।

আর পড়ুন: মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিসহ ৬ শিক্ষকের পদত্যাগ

২০০৩-০৪ শিক্ষাবর্ষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগ দুটিতে ৮৩ শিক্ষার্থী ও পাঁচ শিক্ষক নিয়ে ২০০৩ সালের ২৫ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। প্রায় ছয় মাস পর একই শিক্ষাবর্ষে এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট এবং ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগ দুটি খোলা হয়।

দক্ষিণ এশিয়া মহাদেশের মধ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগ। এখানের আরও অনেক পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়  ক্রিমিনোলজি বিভাগ চালু করেছে। বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এখানে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগই প্রথম এ বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি প্রদান শুরু করেছে। বেশ কয়েকটি বিভাগ ইতোমধ্যেই এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামে গবেষক ভর্তি করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে গবেষণাগার, লাইব্রেরি, মেডিকেল সেন্টার, অ্যাকাডেমিক ভবন, দশতলা প্রশাসনিক ভবন, পাঁচতলা মাল্টিপারপাস ভবন, শিক্ষক, উপাচার্যের বাসভবন, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসিক ভবন, অতিথি ভবন। রয়েছে ভাসানীর জাদুঘর, রিসার্চ সেন্টার, দরবার হল ইত্যাদি। ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগব্যবস্থা। বর্তমানে আবাসিক হল রয়েছে ছাত্রদের চারটি এবং ছাত্রীদের তিনটি।

দেশের গবেষণা খাতে বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। চলতি বছরে প্রকাশিত স্পেন‌ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিমাগো ইনস্টিটিউট দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম ও সারাদেশে পঞ্চম স্থান অর্জন করে। চলতি বছরের জুন মাসে প্রকাশিত অ্যালপার ডগার (এডি) সায়েন্টিফিক ইনডেক্সের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিশ্বসেরা গবেষকদের তালিকায় স্থান পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭৫ জন গবেষক। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান (নাসা) এ কর্মরত এবং ইনফরমেশন, কমিনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একজন শিক্ষার্থী বর্তমানে গুগলে কর্মরত ও বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ।

আর পড়ুন: মাভাবিপ্রবিতে সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারকে সমুন্নত রাখতে পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করে যাচ্ছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক, সৃজনশীল ও সাহিত্য সংগঠন। এসব সংগঠনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য গুলো হলো, ধ্রুবতারা কালচারাল ক্লাব, মাভাবিপ্রবি ফিল্ম সোসাইটি, মাভাবিপ্রবি ডিবেটিং সোসাইটি ,রোটারেক্ট ক্লাব অব মাওলানা ভাসানী, মাভাবিপ্রবি বিজ্ঞান ক্লাব, মাভাবিপ্রবি ক্যারিয়ার ক্লাব, প্রথম আলো বন্ধুসভা, মাভাবিপ্রবি লিও ক্লাব, ফটোগ্রাফিক সোসাইটি, গ্রিন ক্লাব, রক্তদান সংগঠন বাঁধন, নৃত্যধারা, কাম ফর রোড চাইল্ড, মাভাবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতি, মাভাবিপ্রবি সাহিত্য সংসদসহ বেশ কিছু সংগঠন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষার্থীবান্ধব ও শিক্ষার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। যেহেতু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় তাই দেশের জন্য উপযোগী রিসার্চ,যা দেশের সমস্যার সমাধানে কাজে আসবে, এসব ক্ষেত্রে কাজ করতে চাই। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলের পরিবেশ উন্নত করা,ক্লাস রুম সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য কাজ করব।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence