নিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাভাবিপ্রবিতে উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগের দাবি
- সুজন চন্দ্র দাস, মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:১২ PM , আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:১২ PM
প্রায় দুই যুগেও নিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য নিয়োগ না দেওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে। এ ব্যাপারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নানা যুক্তি তুলে ধরে ক্ষোভ প্রকাশ করার চিত্র দেখা গেছে। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল আজীম আখন্দকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। আওয়ামী সরকার পরবর্তী নতুন সময়ে নিয়োগ পাওয়া অধ্যাপক ড. আখন্দকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সাদরে গ্রহণ করেছেন। এবার নিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগের দাবি প্রকট হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে থেকে প্রায় দুইযুগেও কোনো উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে দুইজন উপ-উপাচার্য ও আট (৮) জন উপাচার্য নিয়োগ পেয়েছেন। সকলেই অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়োগ পেয়েছেন। প্রতিষ্ঠার দীর্ঘদিন পর ২০০৯ সালে প্রথম কোষাধ্যক্ষ, পরে ২০১০ সালে উপ-উপাচার্য হিসেবে ২০১০ সালে নিয়োগ পায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান। তার দীর্ঘদিন পর দ্বিতীয় উপ-উপাচার্য হিসেবে ২০২১ সালে দায়িত্ব পান সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. আর. এম সোলাইমান। এরপর ২০২১ সালে দ্বিতীয় কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান মাভাবিপ্রবির এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. সিরাজুল ইসলাম। তাদের পদত্যাগের কারণে বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ পদশূন্য।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে আরো জানা যায়, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন রাতে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পদত্যাগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ফরহাদ হোসেন। এরপর ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে একে একে পদত্যাগ করেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. আর. এম সোলাইমান এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. সিরাজুল ইসলাম।
জুলাই-আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ও ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী হেনামুল ইসলাম হিমু বলেন, মাভাবিপ্রবি শিক্ষকদের মধ্যে থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো উপ-উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এখন আমাদের একটাই দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্য থেকে উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়া হোক।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী অন্নপূর্ণা দেবনাথ রিয়া বলেন, বর্তমান ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ স্যার খুবই ভালো মানুষ। বিশ্ববিদ্যালয়কে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন। শিক্ষার্থীদের ক্যাফেটেরিয়া বা হলে গিয়েও খোঁজখবর রাখছেন। তবে এবার আমাদের শিক্ষকদের মধ্য থেকে উপ-উপাচার্য আর কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়া হোক।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী আখিল আহমেদ বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স প্রায় দুই যুগ হতে চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে অনেক যোগ্যতাসম্পন্ন, প্রশাসনিকভাবে অভিজ্ঞ শিক্ষক রয়েছেন । তাই নিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসব পদে নিয়োগ চাই। এছাড়া অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ আসলে অনেক ধরনের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হয়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর থেকে সৎ ও ছাত্রবান্ধব শিক্ষকদের উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ দিতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মেহেদী হাসান তালুকদার বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক যোগ্য ও সিনিয়র (গ্রেড-১) শিক্ষক আছেন। যারা সুনামের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা, গবেষণা ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেছেন। এসব যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শিক্ষকদের মধ্য থেকে প্রো-ভিসি, ট্রেজারার নিয়োগ দাবি জানাই।
ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. ইসতিয়াক আহমেদ তালুকদার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব সিনিয়র শিক্ষক রয়েছেন, তাদের মধ্যে থেকে শিক্ষার্থীবান্ধব, গবেষক, পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উৎসাহ প্রদান করেন। এসব যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষকদের মধ্যে থেকে প্রো-ভিসি, ট্রেজারার নিয়োগ দেয়া হোক।
উল্লেখ্য, মাভাবিপ্রবির উপ-উপাচার্য ২৩ সেপ্টেম্বর ও কোষাধ্যক্ষ ১০ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করেছেন।