ছাত্রলীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে রাতভর উত্তপ্ত মাভাবিপ্রবি, আহত ১০

ছাত্রলীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে রাতভর উত্তপ্ত মাভাবিপ্রবি, আহত ১০
ছাত্রলীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে রাতভর উত্তপ্ত মাভাবিপ্রবি, আহত ১০  © টিডিসি ফটো

টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে গুরুতর আহত ২ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় রাতভর উত্তপ্ত ছিল পুরো ক্যাম্পাস। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টার পর জননেতা আব্দুল মান্নান হলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এরপর ক্যাম্পাসজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মানিক শীল ও সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ূন কবীরের অনুসারীদের মধ্যে রাতভর চলে এ সংঘর্ষ। বিষয়টি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর শাকিল মাহমুদ শাওন।

গুরুতর আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। সংঘর্ষে তিন তলার ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের সোহানুর রহমান সোহান নামের ওই শিক্ষার্থীর দুই পা ও কোমর ভেঙে গেছে। পরে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে টাঙ্গাইলের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত সোহান শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী বলে ক্যাম্পাসে পরিচিত।

এই ঘটনায় গুরুতর আহত হন পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের রকি নামের আরেক শিক্ষার্থী। তাকে টাঙ্গাইল থেকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়। রকি ছাত্রলীগের সভাপতির অনুসারী বলে জানা গেছে। এছাড়া সংঘর্ষের ঘটনায়, আইসিটি বিভাগের জয় ধর ও সৌরভ, রসায়ন বিভাগের সজিব শেখ, অর্থনীতি বিভাগের সৌরভ, মিনার, নাঈম রাজসহ আরও বেশ কয়েকজন আহত হন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সূত্রে জানা যায়, শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মানিক শীলের গ্রুপের বেশ কয়েকজন নতুন কর্মীকে নিজেদের মিছিল-মিটিংয়ে যোগ দেওয়ার জন্য চাপ দেয় সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ূন কবীরের অনুসারীরা। এসময় সভাপতি গ্রুপের কর্মীরা এমন চাপ প্রয়োগ থেকে বিরত থাকার জন্যে বলেন। এতে ক্ষীপ্ত হয়ে সভাপতি গ্রুপের এক কর্মীকে মারধর করেন সম্পাদক গ্রুপের অনুসারীরা।

পরবর্তীতে এ মারধরের ঘটনা উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে রূপ নেয়। এরপর রাত ১১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত চলে এই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুলিশের সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

এ ঘটনায় নিজের কর্মী সোহানকে তিনতলার ছাদ থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ূন কবীর। তিনি বলেন, ঘটনার সাথে সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ সুন্দর রাখতে এ ধরনের ঘটনা ক্যাম্পাসে কোনোভাবে কাম্য নয়।

এদিকে, সংঘর্ষ ঠেকাতে গিয়ে নিজেও আহত হয়েছেন বলে জানান মাভাবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মানিক শীল। তিনি বলেন, ছোটদের মধ্যে একটি ঘটনা ঘটেছে। আমরা কেউ চাই না এমন কিছু হোক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। আমরাও সাংগঠনিকভাবে বসে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেব। 

সোহানের গুরুতর আহত হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আগে শুনেছি যে তাকে ছাদ থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারি সে ভয়ে ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়েছে। এটারও এখনো সত্যতা জানা যায়নি। যেহেতু হলে সিসিটিভি ফুটেজ আছে, তাই সেগুলো দেখলে আসল সত্য বেরিয়ে আসবে।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর শাকিল মাহমুদ শাওন বলেন, হল প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের সহায়তায় উভয় পক্ষের সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। আমরা এই ঘটনার পর রাতেই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে বসেছিলাম। সবাই একমত হয়েছেন যে দোষী যেই হোক না কেনো, সকলকে খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নিতে হবে। এখন যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে এবং ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় ৭-১০ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে ১ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আরেকজনের অবস্থাও গুরুতর দেখে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়। তবে তাকে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আর বাকিদের টাঙ্গাইল ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, গুরুতর আহত ওই শিক্ষার্থীকে তিনতলার ছাদ থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে কিনা সে বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনার বিষয়ে উপাচার্য স্যার অবগত আছেন। তিনি আজ বিকালে জরুরি রিজেন্ট বোর্ড ডেকেছেন। সেখান থেকে এ ঘটনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে। এছাড়া উপাচার্য স্যার গুরুতর আহত ওই শিক্ষার্থীর খোঁজ খবর নিচ্ছেন। তার চিকিৎসার যথাযথ সহায়তার আশ্বাসও তিনি দিয়েছেন।

জানতে চাইলে টাঙ্গাইল সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাদিকুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। এই ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি, মামলা পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


সর্বশেষ সংবাদ