সাদা ভাত ১ প্লেট ২০ টাকা, মোরগ পোলাও ২০০ চুয়েট ক্যান্টিনে

খাবারের দাম নিয়ে ক্ষোভ শিক্ষার্থীদের

টিএসসি ক্যাফেটেরিয়া
টিএসসি ক্যাফেটেরিয়া  © সংগৃহীত

খাবারের অতিরিক্ত মূল্য নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) শিক্ষার্থীদের মধ্যে। চুয়েটের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) ক্যাফেটেরিয়া শিক্ষার্থীদের অসন্তুষ্টির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। খাবারের অতিরিক্ত দাম ও নিম্নগামী মান ক্ষোভের মূল কারণ বলে জানা যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন উপায়ে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে খাবারের এই চড়া দাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ খাবারের দামের বিষয়ে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।  

বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে টিএসসি ক্যাফেটেরিয়ার খাবার শিক্ষার্থীদের নাগালের মধ্যে থাকে। কিন্তু ব্যতিক্রম চুয়েট টিএসসি কাফেটেরিয়া। ঢাবি টিএসসি ক্যাফেটেরিয়ায় খাবারের রুটিন থেকে জানা যায়, ২০ টাকা মূল্যে দুপুরে সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে পোলাও মুরগি, মুরগি-খিচুড়ি দেওয়া হয়। একই মূল্য  রাতে প্রতিদিন মুরগি-ভাত সাথে ডাল দেওয়া হয়। এছাড়াও ৩ টাকা মূল্যের ছোলা, সিঙ্গারা ও চপ থাকে। এক টাকা মূল্যের লাল চা এবং ৭ টাকা মূল্যের কেক পাওয়া যায়। 

চুয়েটের ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মেন্যুতে দেখা যায়, এক প্লেট সাদা ভাত ২০ টাকা, আরেকবার নিলে ১০ টাকা ধরা হয়। তাছাড়া মোরগ পোলাও ডিমসহ ২০০ টাকা। এক খণ্ড মুরগী ৭০ টাকা, একটা সবজি ৩০ টাকা। পরটার দাম ১০ টাকা। প্রত্যেকটি খাবারের দাম সাধারণ শিক্ষার্থীদের নাগালের বাহিরে।  

জানা গেছে,  চুয়েট ক্যাম্পাসে ১টি কাফেটেরিয়া ও ১টি ক্যান্টিন এবং ৭ টি আবাসিক হলে ৭ টি ক্যান্টিন রয়েছে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, চুয়েটের শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ অনাবাসিক। আবাসিক শিক্ষার্থীরা হলে খাবারদাবার করলেও ক্লাস করতে আসা শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাবারের জন্যে ক্যাফেটেরিয়ার ওপর নির্ভর করতে হয়।  বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নাম্বার ও দুই নাম্বার ক্যান্টিন বন্ধ হওয়ার পর টিএসসি ক্যাফেটেরিয়া একচেটিয়া ব্যবসা করার সুযোগ পাওয়ায় এই সমস্যা বেড়েই চলেছে।

চুয়েটের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী অভিষেক তালুকদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "আমাদের ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের দামগুলো আরো সহজলভ্য হওয়া উচিত ছিল। খাবারের পরিমাণের তুলনায় দাম অনেক বেশি। যেদিকে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর খাবারের দাম তুলনামূলক কম সেদিকে আমাদেরকে বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত দাম দিয়ে খাবার কিনে খেতে হচ্ছে।"

পানিসম্পদ কৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফারজিয়া আহমেদ রাফা বলেন,  "আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট,  বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্যান্টিন এ খেয়েছি। খাবারের মান এবং দাম তুলনা করলে সব দিক থেকেই চুয়েটে অতিরিক্ত দাম মনে হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর খাবারের দাম শিক্ষার্থীবান্ধব হওয়া উচিত ছিল।"

এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে ক্যাফেটেরিয়ার ম্যানেজার খাইরুল হোসেন বলেন, "বাজারের উঠতি মূল্যের কারণে আমাদের এখানে দাম এমন । আমরা চেষ্টা করি খাবারের দাম আর মানের যাতে ভারসাম্য থাকে। আমাদের এখানের সকল মূল্য ছাত্রকল্যাণ দপ্তর কর্তৃক অনুমোদিত এবং মূল্যের তালিকা সবসময় টাঙানো থাকে। এই দাম থেকে কম দামে খাবার বিক্রি করার কোনো সুযোগ আমাদের কাছে নেই। "

টিএসসি ক্যাফেটেরিয়া খাবারের মেন্যু

দামের দিক থেকে একই অবস্থা চুয়েটের তিন নম্বর ক্যান্টিনেরও। বাড়তি দামের পাশাপাশি অব্যবস্থাপনা নিয়েও মিলছে নানান অভিযোগ। তাছাড়া শ্রেণি কার্যক্রম চলাকালীন সাধারণত  চালু থাকে এই ক্যান্টিনটি। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের আলাদা তেমন কোনো আয়ের উৎস থাকে না। অনেকেই পড়াশুনার পাশাপাশি টিউশনি করিয়ে নিজের ভরণপোষণ করেন। অল্প টাকায় অধিক মূল্যে খাবার গ্রহণ করতে গিয়ে অনেকে খাবার গ্রহণ কমিয়ে দিয়েছে। 

চুয়েটের আবাসিক হল ক্যান্টিনগুলোতে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় খাবারের দাম তুলনামূলক বেড়েছে এবং কমেছে খাবারের প্রাপ্যতা। 

চুয়েট শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই দুইবেলা আবাসিক হল ডাইনিংয়ে খেয়ে থাকেন। চুয়েটের কয়েকটি হলের ডাইনিং ম্যানেজারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে তাদের পক্ষে ৪০ টাকায় প্রতিবেলা সুষম খাবার সরবরাহ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।  প্রাপ্তবয়স্ক একজন ব্যক্তি যে খাবার খান তাতে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, স্নেহ জাতীয় উপাদানের অনুপাত ৪:৪:১ হওয়া প্রয়োজন। পরিমাণ কম হওয়ায় ডাইনিং এর খাবারের মাধ্যমে এই চাহিদা পূরণ করা কষ্টসাধ্য।

শামসুন নাহার খান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সাদিয়া ইসলাম  বলেন, "হলের ক্যান্টিনে খাবারের দাম খুব একটা বেশি নয়। তবে মান কিছুটা অস্বাস্থ্যকর। আগে মোটামুটি ভালো খাবার পাওয়া গেলে এখন সবসময় খাবার পাওয়া যায় না। রাত ৮ টার পর এই সমস্যা আরো বেশি দেখা যায়। খাবারের এই অপ্রাপ্যতার কারণে আমরা শিক্ষার্থীরাই সমস্যায় ভুগছি। "

চুয়েটের প্রধান ফটকের বাইরের দোকানগুলোতে চওড়া দামে বিক্রি হচ্ছে খাবার। দোকানগুলোতে  পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে রয়েছে ব্যাপক অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। 

পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাতিন ইশতিয়াক বলেন, "চুয়েটের ভিতরে দাম আর মানের সামঞ্জস্য না থাকায় আমরা অনেকেই বিকালের নাস্তার জন্যে চুয়েটের গেইটের সামনের দোকানগুলোতে যাই। কিন্তু সেখানেও একই অবস্থা। অতিরিক্ত দামের কারণে আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। গত ১-২ বছর ধরে সকল ধরনের খাবারের দাম শুধু বেড়েই চলেছে। "

এ ব্যাপারে ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, খাবারের মান ঠিক রাখতে গেলে এর চেয়ে দাম কমানো সম্ভব নয়। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বিষয়টিও সবার মাথায় রাখতে হবে। তাও শিক্ষার্থীদের সাথে আমরা এ ব্যাপারে আলোচনা করে দেখবো কোন সমাধানে আসা যায় কি না। ১ ও ২নং ক্যান্টিনের বিষয়ে তিনি বলেন, মুক্তমঞ্চ করার জন্য এগুলো ভেঙে ফেলা হবে। তাই এগুলো বন্ধ করে দিতে হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ