চার অ্যাওয়ার্ডে মেধার স্বীকৃতি পাবে হাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়   © টিডিসি ফটো

দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রমে উৎসাহিত করতে মেধার স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে চারটি অ্যাওয়ার্ড দেবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

দীর্ঘ দিন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধুমাত্র ডিন’স লিস্ট অ্যাওয়ার্ড চালু থাকলেও ৫৪তম রিজেন্ট বোর্ডে নতুন তিনটি অ্যাওয়ার্ড চালু করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ডের সভায় প্রবর্তিত নতুন তিনটি অ্যাওয়ার্ড হলো, ডিন’স মেরিট অ্যাওয়ার্ড, ভাইস-চ্যান্সেলর্স মেরিট অ্যাওয়ার্ড এবং চ্যান্সেলর্স গোল্ড মেডেল অ্যাওয়ার্ড। 

কোনো শিক্ষার্থী একটি একাডেমিক বর্ষে পরপর দুটি সেমিস্টারে কোনো কোর্সে এফ গ্রেড ছাড়া গড় সিজিপিএ ৩.৭৫ (৪ এর মধ্যে) বা এর বেশি পেলে সে শিক্ষার্থী ডিন’স লিস্ট অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হবে। এর আগে এই অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা বছরে বারোশত টাকার মেধাবৃত্তি পেতো। রিজেন্ট বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তা বাড়িয়ে দশ হাজার টাকা করা হয়েছে। 

তবে, একই একাডেমিক বর্ষে ডিন’স মেরিট অ্যাওয়ার্ড পাওয়া শিক্ষার্থী ডিন’স লিস্ট অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হবে না। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম না মানায় শাস্তিপ্রাপ্ত কিংবা কারণ দর্শানো নোটিশ পাওয়া শিক্ষার্থীরা এই পুরস্কার পাবেন না।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রবর্তিত নতুন এ্যাওয়ার্ডগুলোর মধ্যে ডিন’স মেরিট অ্যাওয়ার্ড পেতে হলে শিক্ষার্থীদেরকে একটি একাডেমিক বর্ষে পরপর দুটি সেমিস্টারের প্রতিটিতে কোনো এফ গ্রেড ছাড়া সর্বোচ্চ গড় সিজিপিএ অর্জন করতে হবে এবং পরপর দুটি সেমিস্টারেই সিজিপিএ ৩.৭৫ বা এর বেশি পেতে হবে। সেই সাথে দুটি সেমিস্টারের সিজিপিএ এর যোগফল টিসিজিপিএ ৭.৫ বা তার বেশি হতে হবে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ টিসিজিপিএ অর্জনকারী শিক্ষার্থী এই পুরস্কার পাবেন। তবে এতে একাধিক শিক্ষার্থীর টিসিজিপিএ সমান হলে শতকরা অনুপাতে বেশি মার্কস পাওয়া শিক্ষার্থী এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত হবেন। এই অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা পনেরো হাজার টাকার মেধাবৃত্তি পাবেন। 

একটি অনুষদের  একটি ব্যাচের সকল সেমিস্টারের ফলাফলে কোনো এফ গ্রেড ছাড়া সর্বোচ্চ সিজিপিএ অর্জনকারী শিক্ষার্থী পাবেন ভাই-চ্যান্সেলর্স মেরিট অ্যাওয়ার্ড। তবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবনের প্রতিটি সেমিস্টারে শিক্ষার্থীদেরকে নূন্যতম ৩.৭৫ সিজিপিএ পেতে হবে। সর্বোচ্চ সিজিপিএ (অনুষদের সর্বোচ্চ সিজিপিএ) অর্জনকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা একাধিক হলে শতকরা মার্কসে এগিয়ে থাকা শিক্ষার্থীরা এই পুরস্কার পাবেন। ভাইস-চ্যান্সেলর্স মেরিট অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা বিশ হাজার টাকার মেধাবৃত্তি পাবেন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ব্যাচের সকল সেমিস্টারের ফলাফলে কোনো এফ গ্রেড ছাড়া সকল অনুষদের মধ্যে সর্বোচ্চ সিজিপিএ অর্জনকারী শিক্ষার্থী পাবেন চ্যান্সেলর্স গোল্ড মেডেল অ্যাওয়ার্ড। তবে, এই পুরস্কার পেতে হলে প্রতিটি সেমিস্টারেই শিক্ষার্থীদেরকে নূন্যতম সিজিপিএ ৩.৭৫ করে পেতে হবে। এই অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা একুশ ক্যারেটের পাঁচ গ্রাম সোনাসহ নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকার মেধাবৃত্তি পাবেন। সর্বোচ্চ সিজিপিএ অর্জনকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা একাধিক হলে শিক্ষার্থী শতকরা অনুপাতে বেশি মার্কস পাওয়া শিক্ষার্থী এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত হবেন। এরপরও দু'জন শিক্ষার্থী সমান স্থান অর্জন করলে দু'জনই এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত হবেন। 

নতুন তিনটি অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সেমিস্টারে কোনো 'এফ' গ্রেড থাকলে এবং রিপিট সেমিস্টার থাকা শিক্ষার্থীরা এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত হবেন না।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে শাস্তিপ্রাপ্ত, লিখিত সর্তকতা পাওয়া শিক্ষার্থীরাও এই পুরস্কারের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না। এছাড়াও এসব পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হতে হলে শিক্ষার্থীদেরকে প্রতিটি একাডেমিক বর্ষের একটি সেমিস্টারে কমপক্ষে একটি ক্লাবে বা কো-কারিকুলার কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করতে হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। 

শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পড়াশোনায় উৎসাহিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুল আল হাসিব সরকার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন উদ্যোগে আমরা পড়াশোনায় আরো উৎসাহিত হচ্ছি। এমন দারুন উদ্যোগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। প্রশাসনের শিক্ষার্থীবান্ধব চিন্তার এমন প্রতিফলনের ধারা অব্যাহত থাকুক এই প্রত্যাশা করি। 

রসায়ন বিভাগের ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী ফারজানা তানজিম বলেন, আমি মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ের এরকম শিক্ষার্থীবান্ধব চিন্তা শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত ও উৎসাহিত করবে এমন না বরং তাদের আর্থিকভাবেও সচ্ছলতার জন্য সহায়ক হবে। এরকম সুযোগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বাড়াবে এবং সেই সাথে তাদের জীবনের বড় একটি অর্জনের তালিকায় তারা নিজেদের নাম পেয়ে তাদের মধ্যে ভালো কিছু করার সংকল্প দৃঢ় হবে বলে মনে করছি।

বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো: ইয়াছিন প্রধান বলেন, এধরনের পুরস্কারের প্রচলন অত্যন্ত যুগোপযোগী ও আনন্দের।  এতে মেধাবী শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় উৎসাহিত হবে এবং  শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়বে। এর ফলশ্রুতিতে, শিক্ষার মান বাড়বে। সেই সাথে মেধাবীদের জন্য এটি  ভালো অর্থনৈতিক সহযোগিতা হিসেবে থাকবে। শিক্ষার্থীদের জন্য এধরনের পুরস্কারের প্রচলন করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভাইস- চ্যান্সেলর মহোদয়কে অসংখ্য ধন্যবাদ।


সর্বশেষ সংবাদ