বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও কথা রাখেনি যবিপ্রবি প্রশাসন

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

চলতি বছরের মার্চে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) একাডেমিক ভবনগুলোতে বিশুদ্ধ পানি এবং স্যানিটেশন সংকট সমাধানের আশ্বাস দেয়া হয়েছিল শিক্ষার্থীদের। দীর্ঘদিনের এ সমস্যা সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা পরিচালক ড. মো. আলম হোসেন বলেছিলেন এক মাসের মধ্যে সংকটের সমাধান করবেন। কিন্তু ছয়মাস পেরিয়ে গেলেও সংকটের ন্যুনতম সমাধানও করেনি যবিপ্রবি প্রশাসন।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতি ফ্লোরে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সংখ্যা কমপক্ষে ৪০০-৪৫০ জন। তার বিপরীতে ৯তলা বিশিষ্ট ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমিক ভবনের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য ফ্লোর প্রতি খাওয়ার পানির ট্যাপ ১টি। এছাড়া তিনটি ফ্লোরের ফিল্টার অকেজো হয়ে আছে। যে ফিল্টারগুলো সচল, সেগুলোর পিপির মধ্যে আবার জীবাণুর কালো স্তর পড়ে আছে। পানি সরবরাহ হচ্ছে অতীব ধীরে, নেই পানি পান করার মতো গ্লাস বা কোনো মাধ্যম। নাম মাত্র ফিল্টার বা বিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে ব্যবহার করা হচ্ছে এসব ট্যাপের পানি।

শিক্ষার্থীরা জানান, একাডেমিক এবং লাইব্রেরি ভবনের টয়লেটগুলো বেশিরভাগ সময় থাকে অপরিষ্কার। টয়লেটগুলো থেকে ভেসে আসে উৎকট দুর্গন্ধ। কয়েকটি ফ্লোরের টয়লেটগুলোতে দূষিত পানিতে ভেসে গেছে। কয়েকটি টয়লেটে নেই দরজা। কিছু টয়লেটে নেই পানির পাত্র। কিছুতে নেই পানির ট্যাপ। হাই কমোড টয়লেটগুলোর অবস্থা আরও করুন। এছাড়া শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য অধিকাংশ বেসিনগুলোতে নেই পানির ট্যাপ। নেই টয়লেট পরবর্তী জীবাণুমুক্ত হওয়ার জন্য সাবান বা হ্যান্ডওয়াশের মতো কোনো ব্যবস্থা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি গত ফেব্রুয়ারি মাসে ক্যাম্পাসে আসি। প্রথম দিকে ৮ তলার ফিল্টার নষ্ট থাকায় অন্য ফ্লোর থেকে পানি এনে পিপাসা মেটাতাম। এখন ফিল্টার সচল হলেও পিপিগুলোর মধ্যে জীবাণুর কালো স্তর দেখতে পেয়ে এখন আর ফিল্টার থেকে পানি নেই না। ফিল্টারের কিটগুলো ১ মাস পরপর পরিবর্তন করার নিয়ম থাকলেও কর্তৃপক্ষকে ৮ মাসে একবারও পরিবর্তন করতে দেখিনি।’

আরও পড়ুন: ইয়েস প্রোগ্রামে আমেরিকায় পড়ার সুযোগ

২য় বর্ষের দোলেনুর করিম জানান, ‘আমাদের ফ্লোরের টয়লেটগুলোর অবস্থা অত্যন্ত নাজুক থাকায় অন্য ফ্লোরের টয়লেটে গিয়ে একই পরিস্থিতি দেখি। আবার বেসিনগুলোতে নেই ট্যাপ ও সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ। বাসায় থেকে হ্যান্ডওয়াশ বা সাবান নিয়ে আসাও সম্ভব নয়। একটি পাবলিক ভার্সিটিতে এই ধরনের পরিবেশ মানা যায় না। কর্তৃপক্ষের উচিত শীঘ্রই এ বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা।’

শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, যবিপ্রবি প্রশাসন শিক্ষার্থীদের এসব সমস্যাগুলো সমাধানের প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপ করে না। তাদের সু-স্বাস্থ্যের বিষয়টি অবহেলা করেই যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ফিল্টার দিয়ে আর কত জীবাণুযুক্ত পানি খেলে কর্তৃপক্ষের নজর কাড়বে? তাদের জিজ্ঞাসা, এই সংকটের আদৌও কি সমাধান করবে প্রশাসন?

এ বিষয়ে ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা পরিচালক ড. মো. আলম হোসেন বলেন, একাডেমিক এবং লাইব্রেরি ভবনের পানির ফিল্টার ও স্যানিটেশন সমস্যা সমাধানের জন্য লিখিত এবং মৌখিকভাবে দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলীকে জানালে তিনি তখন কিছু সমস্যার সমাধান করেন। তবে এখনও যেসব সমস্যা আছে সেবিষয়ে আমি সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীকে আবারও জানাবো।

৬ মাস আগে শিক্ষার্থীরা সমস্যার কথা জানালেও এতদিনে সমস্যা সমাধান না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, সমস্যা সমাধানের বিষয়টি প্রকৌশলী নাজমুস সাকিবের দায়িত্ব।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমিক ভবনের দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী নাজমুস সাকিবের অফিসে বারবার গিয়েও তাকে অফিসে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়েও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ আজকেও তাকে অফিসে না পেয়ে কল দিলে তিনি অফিস সময়ে পাসপোর্ট অফিসে আছেন বলে জানিয়েছেন।


সর্বশেষ সংবাদ