নামের ভুল বানানে চলছে বশেমুরবিপ্রবির কার্যক্রম

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো, একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট, মিডিয়াম অব ইন্সট্রাকশন, রেজিস্ট্রার দপ্তরের প্যাড, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের প্যাডসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নথিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ৩ ধরনের ভুল বানান দেখা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেন অতিদ্রুত বিষয়গুলো সমাধান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কাগজপত্রের জন্য একই ধরনের নামের বানান নির্ধারণের ব্যবস্থা করে।

২০০১ সালে জাতীয় সংসদে পাশকৃত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারা ৩ এর ১নং উপধারা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বাংলায় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়' এবং ইংরেজিতে ‘Bangabondhu Sheikh Mujibur Rahman Science and Technology University'।

আরও পড়ুন: বশেমুরবিপ্রবির একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ‘ভুল’

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তর ও বিভাগের প্রায় ৪৫টি নথি পর্যালোচনা করে এই নাম বিভিন্নভাবে লেখার প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোতে লেখা হয়েছে, ‘Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman Science & Technology University’, বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে লেখা হয়েছে, ‘Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman Science and Technology University, Gopalganj’, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরের ইংরেজি ও বাংলা প্যাডে যথাক্রমে লেখা হয়েছে, ‘Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman Science & Technology University,Gopalganj' এবং ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ’, একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট এবং মিডিয়াম অব ইনস্ট্রাক্টশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম লেখা হয়েছে ‘Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman Science & Technology University, Gopalganj’।

৩ ধরনের ভুলের মধ্যে প্রথমে রয়েছে 'বঙ্গবন্ধু' শব্দের ইংরেজি নামের বানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে 'Bangabondhu' লেখা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কাগজপত্রে 'Bangabandhu' লেখা রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে, অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের বানানে 'Bangabondhu' লেখা হলেও বাংলাদেশের সংবিধানসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে 'বঙ্গবন্ধু' শব্দের ইংরেজি বানান 'Bangabandhu' লেখা রয়েছে।

 

দ্বিতীয়ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে নামের ইংরেজি বানানে 'and' লেখা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কাগজপত্রে কোথাও 'and' আবার কোথাও '&' লেখার প্রচলন রয়েছে।

তৃতীয়ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বা ইংরেজি নামের বানানে 'গোপালগঞ্জ' শব্দটি উল্লেখ না থাকলেও বিভিন্ন কাগজপত্রে নামের অংশ হিসেবে গোপালগঞ্জ শব্দটি লেখা হয়। এখানে উল্লেখ যে, অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশে একটি প্রতিষ্ঠানের নামের শেষে পরবর্তী লাইনে জেলা এবং দেশের নাম প্রতিষ্ঠানটির পরিচয়ের স্বার্থে লেখা হয় কিন্তু একই লাইনে লেখলে তা নাম হিসেবে গণ্য করা হয়।    

      
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় সরবরাহকৃত ট্রান্সক্রিপ্ট, মিডিয়াম অব ইন্সট্রাকশন সহ বিভিন্ন নথিতে নামের ভিন্নতা থাকায় চাকরি ও বিদেশে উচ্চশিক্ষার আবেদন করতে গিয়ে তাদের ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। এমনকি অনেকসময় ভাইভা বোর্ডেও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছেন তারা। এছাড়া তারা আশঙ্কা করছেন, সম্প্রতি পিরোজপুরেও একই নামে নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করায় নামের বিষয়টি দ্রুত সমাধান না হলে ভবিষ্যতে এই ভোগান্তি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।

বর্তমানে পিরোজপুর এবং গোপালগঞ্জে প্রায় একই নামে দুটো বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হলেও এই দুটো বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে নামের শেষ অংশে। গোপালগঞ্জে ২০১১ সালে শিক্ষাক্রম শুরু করা বিশ্ববিদ্যালয়টির নামের সাথে জেলার নাম যুক্ত করা না হলেও সম্প্রতি পিরোজপুরে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টির নামের সাথে জেলার নাম যুক্ত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পিরোজপুর-২০২২ আইনের ধারা ৩ এর ১নং উপধারা অনুযায়ী এই বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পিরোজপুর (Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman Science and Technology University, Pirojpur)।

নাম নিয়ে ভোগান্তির বিষয়ে বর্তমানে জার্মানিতে অধ্যয়নরত বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক শিক্ষার্থী সুমাইয়া রশিদ বলেন, ‘আমি যখন জার্মান দূতাবাসে ভাইভা দিতে গিয়েছিলাম তখন তারা আমার দেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের সাথে ওয়েবসাইটে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের হুবহু মিল পাচ্ছিলো না এবং তারা ধরেই নিয়েছিলো আমি হয়তো ভুয়া কাগজপত্র প্রদান করেছি। ফলে আমার বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছিলো কারণ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামতো দুই রকমের হতে পারে না।’

এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশের কর্তৃপক্ষ সাধারণত শিক্ষার্থীর প্রদানকৃত কাগজপত্র এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কিছু বিষয় ক্রসচেক করে। এসময় কোথাও কোনো অমিল পাওয়া গেলে এবং তাদের সন্দেহজনক মনে হলো ওই শিক্ষার্থীর পরবর্তী ধাপে যেতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। এমনকি আবেদনও বাতিল হতে পারে। তাই একজন শিক্ষার্থী হিসেবে চাইবো নাম নিয়ে এই জটিলতা প্রশাসন যেনো দ্রুত সমাধান করে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের অপর এক শিক্ষার্থী মানস তালুকদার বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম প্রধান পরিচয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বত্র যেভাবে ভুল নাম ব্যবহার করা হচ্ছে এতে করে প্রমাণ হয় দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা কতটুকু অবহেলা এবং অদক্ষতার সাথে বঙ্গবন্ধুর নামে তাঁর পূণ্যভূমিতে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিচালনা করে যাচ্ছে! বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বিকৃত করার মতো জঘন্য অপরাধে জড়িতদের তদন্ত সাপেক্ষে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।'

এ বিষয়ে বশেমুরবিপ্রবির উপাচার্য ড. একিউএম মাহবুব বলেন, ‘বিষয়টি ইতোমধ্যে আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সোমবার এ বিষয়ে কথা বলে দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা করবো।’


সর্বশেষ সংবাদ