এক নজরে শান্তি নিকেতনে নির্মিত ’বাংলাদেশ ভবন’

পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে নবাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সার্বিক তত্তাবধানে নির্মিত হয়েছে ’বাংলাদেশ ভবন’।  শুক্রবার এ ভবনের উদ্বোধন করলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়সহ বাংলাদেশের মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিনিধিরা।

বাংলাদেশ ও ভারতের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ভবনটি নির্মাণ করেছে ভারতীয় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ’ন্যাশনাল বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন (এনবিসিসি)’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধ-শত জন্মবার্ষিকীর স্মারক হিসেবে শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবন নির্মানের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২০১১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষরিত ’ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট অন কো-অপারেশন ফর ডেভেলপমেন্ট’-এ তার এই আগ্রহ লিখিতরূপে স্থান পায়। সেই ধারাবাহিকতায় ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা ও মতবিনিময়ের পর প্রাসঙ্গিক ধারনাপত্র তৈরি, স্থান নির্বাচন, কারিগরি নকশা প্রণয়ন, ব্যয় প্রাক্কলন তেরি ইত্যাদি সম্পন্ন করে ২০১৬ সালের শেষভাগে বাংলাদেশ ভবনের নির্মান কাজ শুরু করা হয়।

বাংলাদেশের পক্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ভবন নির্মানের জন্য ৪৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা অর্থায়ন করে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত প্রতিনিধিদল, যার প্রধান ছিলেন শিক্ষাসচিব মো. সোহরাব হোসাইন, বেশ কয়েকবার সরেজমিন নির্মান কাজ পরিদর্শন করেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই ভবন নির্মানকাজসহ সার্বিক বিষয়াদির তদারকি করে। এই ভবন সম্পর্কিত তথ্যাদি নিচে দেওয়া হল:

  • বাংলাদেশ ভবনের জন্য জমির পরিমান ৮ বিঘা সমপরিমান বা প্রায় ২.৭৫ একর।
  • ভবনে ৪৫৩ আসনবিশিষ্ট একটি আধুনিক অডিটোরিয়াম, দু’টি সেমিনার হল, গ্রন্থাগার, জাদুঘর, ক্যাফেটোরিয়া ও আর্কাইভ স্টুডিও রয়েছে। অডিটোরিয়ামে আলো ও শব্দের যথাযথ প্রক্ষেপণ সংস্থান করা হয়েছে। অডিটোরিয়ামের ছাদ বাংলাদেশের নৌকার ছৈ-এর আদলে তৈরি।
  • ভবনের নীচতলায় অবস্থিত প্রতিটি ১৬০ আসন বিশিষ্ট ২টি সেমিনার হল। প্রয়োজনে সেমিনার হল দুইটির অন্তর্বর্তী ¯øাইডিং ফোল্ডিং পার্টিশন সরিয়ে একটি মাল্টিপারপাস হল হিসেবে পুরো হল ব্যবহার সম্ভব।
  • ভবনের নীচতলায় দক্ষিণ পার্শ্বে প্রায় ৩০০০ বর্গফুট বিশিষ্ট একটি জাদুঘর আছে যেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশ ও কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কিত বিষয়াদি প্রদর্শনীর জন্য স্থান পাবে।
  • নীচতলায় প্রধান প্রবেশের পরে ভবনের অভ্যন্তরে দৃশ্যমান একটি উঠান আছে। উঠানে প্রাকৃতিক অলো আসার ব্যবস্থা রয়েছে এবং বর্ষাকালে ঐ উঠানে বসে বর্ষাও শব্দ ও আমেজ উপভোগ সম্ভব। বাংলাদেশের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির প্রচারের জন্য এই উঠানে কোন মেলার আয়োজন হতে পারে বা একটি মিলনমেলার স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
  • প্রধান প্রবেশ পথের উপরের পোর্চটি বাংলাদেশের চৌচালা ছাদের অনুরূপ করে লাল টালি দিয়ে আচ্ছাদিত করা হয়েছে।
  •  ভবনের দোতলায় প্রায় ১৩০০ বর্গফুটের লাইব্রেরি অবস্থিত। এছাড়াও একটি স্টুডিও ও একটি ফ্যাকাল্টি কক্ষের সংস্থান দোতলাতে রয়েছে।
  • দোতলার বামপার্শ্বে প্রায় ১০০০ বর্গফুটের একটি ক্যাফে আছে। অনুষ্ঠানের দিনে এ ক্যাফে ব্যবহার সম্ভব হবে। ক্যাফের বাইরে খোলা ছাদে বসার ব্যবস্থা রয়েছে।
  • পুরো ভবনটি প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রবেশগম্য হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছে। ভবনে ব্যবহৃত উপকরণসমূহে মাটি পোড়ানো ইট ব্যবহার না করে স্যান্ড সিমেন্ট দ্বারা তৈরি ইট ব্যবহার করা হয়েছে এবং চৌচালা ছাদে ইটের টালির পরিবর্তে পিভিসি লাল টালি ব্যবহার করা হয়েছে।

সর্বশেষ সংবাদ