মোবাইলের অব্যবহৃত ডাটা ফেরত পাওয়া নিয়ে ধোঁয়াশা কেন?

গত মাসের শুরুর দিকে বাংলাদেশের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অব্যবহৃত ডাটা গ্রাহকদের ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন
গত মাসের শুরুর দিকে বাংলাদেশের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অব্যবহৃত ডাটা গ্রাহকদের ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন  © ফাইল ছবি

মোবাইলে ইন্টারনেটের নির্দিষ্ট ডাটা প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অব্যবহৃত ডাটা ফেরত দেয়ার নির্দেশনা থাকলেও তা নিয়ে ভোগান্তিতে পড়ার অভিযোগ করেছেন ভোক্তারা। তারা বলছেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডাটা ফেরত পেলেও এ নিয়ে জটিলতা কাটছে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অব্যবহৃত ডাটা ফেরত পাচ্ছেন না তারা।

গত মাসের শুরুর দিকে বাংলাদেশের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অব্যবহৃত ডাটা গ্রাহকদের ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশনার পর মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো ডাটা ফেরত দিতে শুরু করার কথা জানায়। তবে ভোক্তারা অভিযোগ করছেন, এই ব্যবস্থার মধ্যে নানা ফাঁক-ফোঁকর রয়ে গেছে।

বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির গত মার্চ মাসে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০ কোটি ৬৩ লাখ ৩০ হাজার।

‘মেয়াদ থাকলে ডাটা ফেরত’

ডাটা ফেরত দেয়ার ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলো কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে, যে প্যাকেজের আওতায় ডাটা অব্যবহৃত থেকে যায়, গ্রাহক যদি পরবর্তীতে সেই একই প্যাকেজ কেনেন- তাহলে নতুন প্যাকেজটির সাথে আগের অব্যবহৃত ডাটা ফেরত দেয়া হয়।

তবে এক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে আগের প্যাকেজটির মেয়াদ কিছুটা বাকি থাকতে হবে এবং গ্রাহক অন্য প্যাকেজ কিনলে তিনি আর আগের ডাটা ফেরত পাবেন না।

পড়ুন: মেয়াদ শেষ হলেও অব্যবহৃত মোবাইল ডাটা ফেরতের নির্দেশ

গ্রাহকদের অব্যবহৃত ডাটা ফেরত দেয়ার বিষয়ে একই ধরনের কথা জানিয়েছে দেশের শীর্ষ স্থানীয় মোবাইল অপারেটর কোম্পানি গ্রামীণফোন। প্রতিষ্ঠানটির অ্যাক্টিং হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স হোসেন সাদাত বলেন, গ্রামীণফোন গ্রাহকরা মেয়াদ থাকা অবস্থায় একই প্যাকেজ কিনলে আগের প্যাকেজের ডাটা পরবর্তী প্যাকেজের সাথে পেয়ে থাকেন।

তিনি বলেন, অব্যবহৃত ইন্টারনেট বিষয়ে বিটিআরসির একটি নির্দিষ্ট গাইডলাইন রয়েছে এবং গ্রামীণফোন সেটি সম্পূর্ণরূপে মেনে চলছে।

তবে প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে কিংবা একই প্যাকেজ না কিনে অন্য কোন নতুন প্যাকেজ কিনলে সে ডাটা ফেরত দেয়া হয় কিনা, বা না হলে তার কারণ কী, সে বিষয়ে কোন মন্তব্য করেনি প্রতিষ্ঠানটি।

‘ডাটা থাকলেও কাজে লাগে না’

দেশের একটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানির সিম ব্যবহার করে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন পাভেল সিদ্দিকী। নিয়মিতই বিভিন্ন মেয়াদের ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনে থাকেন তিনি।

সিদ্দিকী বলেন, টাকা এবং দিন- এই দুই ধরণের মেয়াদেই ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনে থাকেন তিনি। তবে বাসা এবং তার কর্মক্ষেত্রে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার করার কারণে প্রায় সব সময়ই মোবাইলের ইন্টারনেট প্যাকেজের অনেক ডাটা অব্যবহৃত থাকলেও মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।

তিনি বলেন, ইন্টারনেট প্যাকেজের মেয়াদ কখন শেষ হবে সে বিষয়টি মনে না থাকার কারণে বেশিরভাগ সময়েই ডাটা অব্যবহৃত থেকে যায়।

‘‘আপনি যদি সাত দিন মেয়াদের একটা প্যাকেজ কেনেন, আর ছয় দিনের দিন আপনি যদি একই প্যাকেজ কেনেন, তাহলে আগের প্যাকেজের অব্যবহৃত ডাটা ফেরত পাবেন। কিন্তু আমার তো মেসেজ আসার আগে মনেই থাকে না যে, আমার মেয়াদ কবে শেষ হবে।’’

তিনি বলেন, ‘আর এ কারণেই ডাটা থাকলেও কোন কাজে লাগে না।’

একই ধরনের কথা জানান, স্কুল শিক্ষিকা ফেন্সি দত্তও। তিনি বলেন, দুটি আলাদা মোবাইল অপারেটর কোম্পানির ইন্টারনেট সেবা ব্যবহার করেন তিনি।

সেক্ষেত্রে একটি কোম্পানির ডাটা শেষ হয়ে গেলে আরেকটা ব্যবহার করতে থাকেন। যার কারণে কখনোই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে প্যাকেজ কেনা হয় না। আর এ জন্যই অব্যবহৃত ডাটা ফেরত পান না তিনি।

সেই সাথে এক ধরণের প্যাকেজ তিনি সবসময় কেনেন না বলেও জানান। যখন যে ইন্টারনেট প্যাকেজের অফার বেশি সুবিধাজনক মনে হয়, সেটিই কিনে থাকেন মিস দত্ত।

‘শুভঙ্করের ফাঁকি’

বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমদ বলছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একজন গ্রাহক বুঝতেই পারেন না যে, তার অব্যবহৃত ডাটা তিনি ফেরত পেয়েছেন কিনা। কারণ অনেক সময় গ্রাহক ভুলে যান যে তিনি কোন প্যাকেজটি কিনেছিলেন।

মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘একজন গ্রাহক খাতা-কলম নিয়ে ঘোরে না যে সে কী ডাটা কিনেছে, সেটার তারিখ কত, মেয়াদ শেষ হচ্ছে কখন, আবার ওই ধরণের প্যাকেজ সে রিচার্জ করবে।’

এসব কারণে গ্রাহকরা অনেক সময় একই প্যাকেজ কিনতে পারেন না। আবার একই প্যাকেজ কিনলেও যে মেয়াদ থাকে তাতে সব ডাটা ব্যবহার করা সম্ভব হয়না। তিনি বলেন, অর্থাৎ অব্যবহৃত ডাটা অব্যবহৃতই থেকে গেলো। এটা একটা শুভঙ্করের ফাঁকি দেয়ার জন্যই এধরণের একটা সিস্টেম করা হয়েছে।

যেকোনো প্যাকেজের ক্ষেত্রেই যদি আগের ডাটা ফেরত দেয়া হতো তাহলেও গ্রাহকরা এই সমস্যার এক ধরণের সমাধান পেতেন বলে মনে করেন তিনি।

‘প্যাকেজ নিয়ে প্রশ্নের মধ্যে আছি’

মোবাইল ইন্টারনেটের অব্যবহৃত ডাটা ফেরত দেয়া নিয়ে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সেটি পুরনো এবং এটি আগে কার্যকর ছিল বলে জানান ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার।

তিনি বলেন, মাঝখানে মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো নিজেদের ইচ্ছামতো এই সুবিধা বন্ধ করে দেয়। আর এ কারণেই তিনি এটি আবার চালু করার নির্দেশনা দেয়া হয়।

মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এদের প্যাকেজ নিয়েও অনেক কোয়েশ্চেনের(প্রশ্নের) মধ্যে আছি। এদের একেক জনের প্যাকেজ আছে প্রায় আড়াইশর মতো।’

মোস্তফা জব্বার বলেন, একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে এই আড়াইশ প্যাকেজ থেকে ফাঁক-ফোঁকর বের করা একটা কঠিনতম লড়াই। এছাড়া ইন্টারনেট প্যাকেজের দাম নিয়েও ভাবা হচ্ছে। তারা কিনে ব্যান্ডউইথ, বিক্রি করে ডাটা, এর মধ্যে ইচ্ছামতো প্যাকেজ বানায়। এবং এই যে ইচ্ছামতো কীর্তি-কাণ্ডটা করে, সেটা দেখার জন্যই বিটিআরসিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

মন্ত্রী জানান, দেশে মোবাইল ইন্টারনেট ডাটা নিয়ে যে অবস্থার তৈরি হয়েছে সেটিকে সুশৃঙ্খল অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বিটিআরসিকে এ বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। যত দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্ভব এই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence