চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিল ভারত 

চাল
চাল  © সংগৃহীত

চাল উৎপাদনে প্রথম অবস্থানে রয়েছে চীন। দেশটি প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১৪ কোটি ৮৮ লাখ ৭৩ হাজার টন চাল উৎপাদন করে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত প্রতি বছর গড়ে ১১ কোটি ২৯ লাখ ১০ হাজার টন চাল উৎপাদন করে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। উৎপাদনে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকার পরও বাসমতি ছাড়া অন্য সব ধরনের চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ভারত সরকার। বর্ষা মৌসুমে ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। ভারতের এই পদক্ষেপের ফলে খাদ্য বাজারে মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

বৃহস্পতিবার দেশটির খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, "ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের সরবরাহ স্থিতিশীল রাখতে এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্যবৃদ্ধি রোধ করতে চাল রপ্তানি নীতিতে পরিবর্তন এনেছে সরকার।" বিবৃতিতে এও উল্লেখ করা হয় যে গত এক বছরে খুচরা মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ১১.৫ শতাংশ। ২০ জুলাই থেকেই রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।

উল্লেখ্য যে, গতবছর ভারতের রপ্তানি করা ২২ মিলিয়ন টন চালের মধ্যে নন-বাসমতি সাদা চাল এবং ভাঙা চাল ছিল প্রায় ১০ মিলিয়ন।

আগামী বছর নির্বাচনকে সামনে রেখে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার এই সিদ্ধান্ত খাদ্য মূল্যস্ফীতির প্রতি নরেন্দ্র মোদি সরকারের সংবেদনশীলতাকেই প্রকাশ করে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। 

মোদি সরকার ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে চাল রপ্তানি সীমাবদ্ধ করার পর গম রপ্তানির উপরেও নিষেধাজ্ঞা বৃদ্ধি করেছে। এদিকে, আখের ফলন কমে যাওয়ায় দেশটি এবছর চিনি রপ্তানিও সীমাবদ্ধ করেছে।

আরও পড়ুন: শত বছরের মধ্যে উষ্ণতম মাস হতে পারে চলতি জুলাই

এদিকে , কেন্দ্রীয় সরকারের চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে ভারতের চাল রপ্তানিকারীদের সংস্থা রাইস এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন। এই সংস্থার সভাপতি বি. ভি. কৃষ্ণা রাও বলেন, "রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর গমের আন্তর্জাতিক বাজার যেভাবে এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল, কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তের কারণে চালের আন্তর্জাতিক বাজারে তার চেয়েও বড় বিপর্যয় দেখা দেবে।"

কৃষ্ণা রাও বলেন, "হঠাত করে চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা ক্রেতাদের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে, কারণ তারা এত কম সময়ের মধ্যে অন্য দেশ থেকেও চাল আনতে পারবে না।"

থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামের এই ঘাটতি পূরণের জন্য যথেষ্ট মজুদ নেই। তাই আফ্রিকান ক্রেতারা ভারতের এই সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। রাও আরও যোগ করেন, অনেক দেশ হয়তো নয়াদিল্লিকে শিপমেন্ট পুনরায় সচল করার জন্য আহ্বান জানাবে। ভারত থেকে চাল কেনার ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে বেনিন, সেনেগাল, আইভরি কোস্ট, টোগো, গিনি, বাংলাদেশ এবং নেপাল।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের ৩ বিলিয়নের বেশি মানুষের প্রধান খাদ্য হলো ভাত এবং প্রতিবছর বিশ্বে যে পরিমাণ চাল উৎপাদিত হয়, তার প্রায় ৯০ শতাংশই হয় এশিয়ায়- যে অঞ্চলে এল নিনো আবহাওয়ার প্যাটার্নের কারণে সাধারণত কম বৃষ্টিপাত হয়। বাজারে বর্তমানে চালের যে দাম, তা ইতোমধ্যে গত ১১ বছরের রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে।


সর্বশেষ সংবাদ