মূল্যস্ফীতি কমাতে সুুদের হার বাড়াল বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংক  © ফাইল ছবি

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম যে হারে বাড়ছে তাতে পণ্য কিনতে হিমশিম খাচ্ছে দেশের জনগণ। উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে কম পণ্য কিনতে বাধ্য হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এই চাপ কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে টাকার প্রবাহ কমে ঋণের খরচ বাড়বে। এ জন্য সুদের হার বাড়ানো হয়েছে। এখন থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিতে গুনতে হবে আরও অতিরিক্ত সুদ। তবে সুদের মাত্র সহনীয় হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়াও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার করতেও বেশি খরচ করতে হবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে।

মুদ্রানীতিতে নীতি সুদহারের করিডর প্রথা, সুদহারের সীমা প্রত্যাহার, ডলারের একক দাম, রিজার্ভের প্রকৃত হিসাবায়নসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্তের মধ্যে ছিল। ফলে পুরো মুদ্রানীতিটি হয়েছে আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি রোধে মুদ্রা সরবরাহনির্ভর নীতি থেকে সরে এসে সুদহার লক্ষ্য করে মুদ্রানীতি প্রণয়ন শুরুর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আরও পড়ুন: ঈদের ছুটি বাড়বে কি-না, জানা যাবে আজ

গতকাল রবিবার (১৮ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) মুদ্রানীতি ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান মুদ্রানীতির উল্লেখযোগ্য দিকগুলো তুলে ধরেন প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, মুদ্রানীতিটি আইএমএফের শর্ত মেনে হয়নি। অনেক দেশ এই পদ্ধতিতে মুদ্রানীতি প্রণয়ন করে, সেটা অনুসরণ করা হয়েছে। মুদ্রানীতির কাঠামোগত পরিবর্তন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাজেটে ঘোষিত মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নামিয়ে এনে ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের আশা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আগামী ৬ মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর) জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা কার্যকর হবে ১ জুলাই থেকে। ২০২০ সালের এপ্রিলে ব্যাংকঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সুদহার সর্বোচ্চ ১১ শতাংশ নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। মুদ্রানীতিতে সুদহারের সীমা তুলে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে জানানো হয়, ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় হারের সঙ্গে ব্যাংকগুলো ৩ শতাংশ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ৫ শতাংশ সুদ যুক্ত করতে পারবে। এটাই হবে সুদের সর্বোচ্চ হার। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলে গড় সুদ ছিল ৭ দশমিক ১২ শতাংশ।

আরও পড়ুন: জানা গেল দেশসেরা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নাম, ঢাকার কেউ নেই

এর ফলে নতুন নিয়মে ব্যাংকঋণের সুদহার হবে সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ১২ শতাংশ। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের সুদহার হবে সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ১২ শতাংশ। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ও ভোক্তা ঋণের তদারকি খরচের জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আরও ১ শতাংশ বেশি সুদ আরোপ করতে পারবে। ক্রেডিট কার্ডের সুদহার আগের মতোই ২০ শতাংশ থাকবে।

পাশাপাশি মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রেপো হার দশমিক ৫০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এতে রেপো হার ৬ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ হবে। রেপোর মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে টাকা ধার দিয়ে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ব্যাংকগুলোকে টাকা ধার করতে আগের চেয়ে বেশি সুদ গুনতে হবে। সেই সঙ্গে রিভার্স রেপো হার দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়ায় ৪ দশমিক ২৫ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে তা হবে ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ। এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলো থেকে টাকা তুলে নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাজেটে ব্যাংক খাত থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার কথা বলেছে সরকার।

সরকারি ঋণ এবং টাকা ছাপানেরা বিষয়ে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, টাকা ছাপানো একটা নিয়মিত প্রক্রিয়া। সরকার ঋণ নিয়ে বেতন–ভাতা, ভর্তুকি, ঋণের সুদ পরিশোধ করে না। সরকারের ব্যাংকঋণের অর্থ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) খরচ করে। এর ফলে রাস্তাঘাট, গ্যাস লাইন তৈরি হয়। অর্থনৈতিক অঞ্চল শুধু করে রাখলেই হবে না, এসব সুবিধা দিতে হবে। বেসরকারি উৎপাদন খাত, এসএমই ও কৃষি খাত যেন পর্যাপ্ত অর্থ পায়, তা নিশ্চিত করা হবে।

এদিকে মুদ্রানীতিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী ১ জুলাই থেকে ব্যাংকের দামে ডলার বিক্রি করবে। তখন থেকে ডলারের কেনা ও বেচায় এক দাম চালু হবে। এখন ব্যাংকগুলো ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা দামে প্রবাসী আয়, ১০৭ টাকা দামে রপ্তানি আয় কিনছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের ডলার বিক্রি করছে ১০৬ টাকা দামে।

প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, মুদ্রানীতিটি সংকোচনমূলক। উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও ডলারের বিনিময় হারের চাপ, রিজার্ভের পতন, লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি, উচ্চ খেলাপি ঋণ, তারল্যসংকট ও অন্যত্র উচ্চ সুদহারের বিষয়গুলো বিবেচনা করে মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ