প্রাক বাজেটে কাগজ আমদানিতে শুল্ক ৫ শতাংশ করার দাবি
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:২২ PM , আপডেট: ২৪ জুন ২০২৫, ১২:৫৪ PM
আসন্ন প্রাক বাজেটে কাগজ ও পেপার বোর্ড আমদানিতে প্লাস্টিক শিল্পের মতো সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের দাবি জানিয়েছে কাগজ আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা। আয়কর আপত্তির বিপরীতে আপিল দায়েরে ১০ শতাংশ ও ২৫ শতাংশের বিপরীতে ৫ শতাংশ এবং সরকার নির্ধারিত ১০ শতাংশের বিপরীতে ৫ শতাংশ করার দাবি জানান তারা। অর্থাৎ আমদানি কর, আয়করের আপত্তি কর এবং মূসকের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ করে শুল্ক করারোপ করার দাবি করা হয়।
রবিবার (২৭ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১১ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক প্রাক বাজেট সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পেপার ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, দি বাংলাদেশ পেপার মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, মেট্রোপলিটন প্রেস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ এবং চট্টগ্রাম কাগজ ও সেলোফিন ব্যবসায়ী গ্রুপের নেতারা উন্নতমানের কাগজ ও পেপার বোর্ড আমদানিতে প্লাস্টিক শিল্পের মতো সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের দাবি জানিয়েছেন।
সংগঠনগুলোর নেতারা বলেন, প্রকাশনা, মোড়কজাত ও ওষুধ শিল্পের প্রধান কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত উন্নতমানের কাগজ ও পেপার বোর্ড দেশীয় উৎপাদনে না থাকায় আমদানির ওপর কম শুল্ক আরোপ করা প্রয়োজন। তাদের মতে, আমদানিতে শুল্ক কমালে ব্যবসায় শৃঙ্খলা বৃদ্ধি পাবে, দুর্নীতি ও কর ফাঁকি কমবে এবং সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করতে পারবে, যা হাজার কোটি টাকারও বেশি হতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা ব্যক্তিগত ও কোম্পানির আয়করের আপত্তির বিপরীতে আপিল দায়েরের ক্ষেত্রে বর্তমানে প্রযোজ্য ১০%-২৫% সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা কমিয়ে ৫% করার দাবি জানান। তাদের অভিযোগ, কিছু অসাধু কর্মকর্তা ইচ্ছাকৃতভাবে অযাচিত অডিট আপত্তি দিয়ে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করে থাকেন। এ হার কমালে এ ধরনের অনৈতিক কার্যক্রম কমে আসবে বলে তারা মনে করেন।
ভ্যাট কমিশনার কর্তৃক দাবিকৃত মূসকের আপিলের ক্ষেত্রেও একইভাবে ১০% বিধিবদ্ধ জমা কমিয়ে ৫% করার দাবি তোলা হয়। এ প্রসঙ্গে বক্তারা বলেন, আইন সংশোধন করা হলে ব্যবসায়ীরা হয়রানি থেকে রক্ষা পাবে এবং একটি স্বাস্থ্যকর ব্যবসা পরিবেশ গড়ে উঠবে।
এছাড়া, ডুপ্লেক্স বোর্ড ও আর্টকার্ডের (HS Code 4810) আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য কমে যাওয়ায় এসব পণ্যের প্রকৃত বিনিময় মূল্য অনুযায়ী শুল্কায়ন করার আবেদন জানানো হয়। বক্তাদের মতে, প্রকৃত মূল্য অনুযায়ী শুল্কায়ন না হলে ব্যবসায়ীদের বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে এবং বন্ড সুবিধার অপব্যবহার বাড়তে পারে, ফলে সরকারও রাজস্ব হারাবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের স্টোর রেন্ট চার গুণ বৃদ্ধির সিদ্ধান্তেরও প্রতিবাদ জানানো হয় সম্মেলনে। বক্তারা বলেন, ঈদের ছুটির সময়সহ বিভিন্ন কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কনটেইনার খালাস করা সম্ভব হয় না। ফলে অযৌক্তিকভাবে চার গুণ স্টোর রেন্ট আরোপ ব্যবসায়ীদের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে। এ সিদ্ধান্ত বাতিল করে পূর্বের নিয়ম বহাল রাখার জোর দাবি জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশের পেপার আমদানি ও বিপণন খাতে সরাসরি ও পরোক্ষভাবে অন্তত পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ কর্মরত। বক্তারা আসন্ন বাজেটে তাদের উত্থাপিত দাবিগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই বিশাল জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা অব্যাহত রাখার জন্যও সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
এ সময় বাংলাদেশ পেপার ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম ভরসা বলেন, বন্ড ব্যবসায়ীরা খোলা বাজারে পণ্য ছেড়ে দেয়। এতে তাদের সঙ্গে বাজারে পেরে ওঠা যায় না। যদি শুল্ক কর ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়, তাহলে দেশের রাজস্বে হাজার কোটি টাকা যুক্ত হবে।
অন্য ব্যবসায়ীদের আঘাত দিয়ে ব্যবসা করতে চান না জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা কাউকে ব্যবসায়িক কথাবার্তায় আঘাত দিতে চাই না। তাই আমরা নীতিমালাগত সহায়তা চাই। প্লাস্টিক সেক্টরের এখন প্রায় সবাই বৈধভাবে ব্যবসা করছে ৫ শতাংশ শুল্ক কর নামিয়ে আনার জন্য।
নিজেদের কাগজ উৎপাদনের বিষয়ে তিনি বলেন, এটি হাজার কোটি টাকার বিষয়। চীনে যারা কাগজ উৎপাদন করে, সেখানে বিশাল অর্থ বিনিয়োগ হয়েছে। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাব রয়েছে। তারা কাগজের জন্য ১০টা গাঁট কাটলে ১০০টি গাছ লাগানোর সক্ষমতা রাখে। আমাদের দেশে এমন সুযোগ নেই।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম কাগজ ও সেলোফিন ব্যবসায়ী গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ বেলাল, বাংলাদেশ পেপার ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সহ বিভিন্ন পর্যায়ের কাগজ আমদানিকারকগণ।