রাবি ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সির নেতৃত্বে ছাত্রলীগের তন্ময়

রাবির ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সির হোতা ছাত্রলীগ নেতা মুশফিক তাহমিদ তন্ময়
রাবির ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সির হোতা ছাত্রলীগ নেতা মুশফিক তাহমিদ তন্ময়  © ফাইল ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় সন্ধান মিলেছে একটি প্রক্সি চক্রের। শক্তিশালী এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুশফিক তাহমিদ তন্ময়। আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ও নিয়োগ পরীক্ষায়ও জালিয়াতির হোতা তিনি। এ তিনি পান মোটা অঙ্কের টাকা। তার একটি অ্যাকাউন্টেই ঢুকেছে অন্তত ৪২ লাখ টাকা।

রাবির ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে গিয়ে গত মঙ্গলবার ধরা পড়েন তন্ময়ের বন্ধু বায়েজিদ খান। তিনি ফোকলোর বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। জিজ্ঞাসাবাদে চক্রের হোতা তন্ময়ের নাম বলে দেন। সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এতে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘তন্ময় এ কাজ (প্রক্সি) দিয়েছেন। তিনি এসএম হলের দোতলায় থাকেন।’

তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী শাহ মখদুম বা এসএম হলের দ্বিতীয় তলার তন্ময় হচ্ছেন ছাত্রলীগের ওই নেতা। বায়েজিদ দীর্ঘদিন তন্ময়ের মাধ্যমে প্রক্সি দিতেন। অনেকের ধারণা, তন্ময়ের পাশাপিাশি চক্রে আরও অনেকে জড়িত। শীর্ষস্থানীয় একটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

শাখা ছাত্রলীগের প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক আসাদুল্লাহ-হিল-গালিব বলেন, তন্ময় রাবিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্সি নিয়ন্ত্রণ করেন। লোক ভাড়া করে প্রক্সি দিয়ে লাখ লাখ টাকা কামাচ্ছেন। তাঁর মাদক কারবারও আছে। সহসভাপতি কাজী আমিনুল ইসলাম লিংকন বলেন, ভিডিওটি সত্যি হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

ছাত্রলীগের আরেক নেতা মেহেদী হাসান মিশু বলেন, এর আগেও তাঁকে ডিবি পুলিশ আটক করেছিল। তবে কোনো মাধ্যমে বের হয়ে আসেন। তাঁর অনেক টাকা রয়েছে। গাইবান্ধায় তিনি বেসরকারি হাসপাতাল করেছেন বলেও শুনেছি।

জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২২ মার্চ রাবির অগ্রণী ব্যাংকে নামে সঞ্চয়ী হিসাব খোলেন মুশফিক তাহমিদ তন্ময়। ২০১৭ সালের ৭ মার্চ থেকে গত ১৮ জুলাই পর্যন্ত ওই হিসাবে ৪২ লাখ ২৪ হাজার টাকা জমা হয়েছে। তবে সব টাকা তুলে নিয়েছেন তিনি। ছাত্র হয়েও এত টাকা জমার বিষয়টি খতিয়ে দেখছে সংশ্নিষ্টরা।

আরো পড়ুন: ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শুরু কাল

তন্ময়ের ব্যাংক হিসাবে টাকা পাঠানো নীলফামারীর অরনা কান্ত দাসকে ফোন করা হলে তিনি 'পরে কথা বলি' বলে কেটে দেন। নাজমুল নামে আরেক ব্যক্তি ফোন ধরে জানান, তিনি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন। টাকা পাঠানোর কথা অস্বীকারও করেন।

তন্ময়কে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় এক নেতার বিরুদ্ধে। ঘণিষ্ট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়ারও। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে । ২০১৭ সালে রাবি ও রুয়েট ঘিরে গড়ে ওঠা ইয়াবা চক্রের ৪৪ জনের নামে প্রতিবেদন দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের মাদক অধিশাখা। এতে ১৬ নম্বরে ছিল তন্ময়ের নাম।

রাবিতে এবারের ভর্তি পরীক্ষার পর থেকে তন্ময় ক্যাম্পাস থেকে উধাও হয়ে গেছেন। তাঁকে হলেও দেখা যায়নি। দুটি মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্যও জানা যায়নি। একাধিক গোয়েন্দা ও সরকারি সংস্থা তাঁকে খুঁজছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আসাবুল হক বলেন, বায়েজিদ একেক সময় একেক জনের নাম বলেছে। তন্ময়ের নামটি আসায় তদন্ত করে সত্যতা যাচাইয়ের কাজ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে বিশ্ববিদ্যালয় আইনেও বিচার হবে।

ছাত্রলীগ সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, তন্ময়ের বিষয়ে অভিযোগ জানা ছিল না। কেন্দ্রের কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হবে। সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, তন্ময়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করব।


সর্বশেষ সংবাদ