জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে ২৬৮ কোটি টাকার দুর্নীতি

রাজধানীর মহাখালীর জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট
রাজধানীর মহাখালীর জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট  © ফাইল ছবি

রাজধানীর মহাখালীর জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে ২৬৮ কোটি টাকার কেনাকাটায় দুর্নীতির তথ্য পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তদন্তে উঠে এসেছে, দরপত্র ছাড়া কেনাকাটা করে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। এর দায়ে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের হিসাবরক্ষক মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমানকে বিভাগীয় মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। মাহবুবুর রহমানসহ আইপিএইচের বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বশীল অন্তত ১০ কর্মকর্তা-কর্মচারী এই দুর্নীতিতে জড়িত বলে জানা গেছে। এদিকে দুদকও মাহবুবুর রহমানসহ অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে।

যার ফলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মাহবুবুর রহমানের দুটি বার্ষিক বর্ধিত বেতন-ভাতা স্থগিত করে। পাশাপাশি তাকে ঢাকার বাইরে বদলি করে তাৎক্ষণিক অবমুক্ত (স্ট্যান্ড রিলিজ) করা হয়। কিন্তু গত পাঁচ মাসেও মাহবুবুর রহমান তার নতুন কর্মস্থল পটুয়াখালীতে যোগ দেননি।

আরো পড়ুনঃ দুই লাখ করে টাকা পেল ১৫ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের (ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথ-আইপিএইচ) কর্মকর্তারা বলছেন, এই অনিয়মে শুধু মাহবুবুর রহমান নন, আইপিএইচের বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বশীল অন্তত ১০ কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত। তারা বছরের পর বছর ধরে দরপত্রে কারসাজি, দরপত্র ছাড়া কেনাকাটা ও ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করে আসছেন।

আইপিএইচের পরিচালক রাশেদা সুলতানা বলেন, তিনি শুনেছেন মাহবুব নতুন কর্মস্থলে যাচ্ছেন না। তার বিষয়ে এখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি বলেন, মাহবুবের দুর্নীতির দায় আইপিএইচ কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।

কেনাকাটায় অনিয়মের তদন্তে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কমিটি করেছিল আইপিএইচের কর্মচারীদের পক্ষ থেকে করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে কর্মচারীরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবর অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত চেয়ে আবেদন করেন। এতে বলা হয়, মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি চক্র ২০১৬-১৭ থেকে ২০১৮-১৯ পর্যন্ত ৩ অর্থবছরে আইপিএইচ ও এর বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন প্রকল্পের নামে বরাদ্দ করা ২০০ কোটি টাকার কেনাকাটায় কোনো দরপত্র আহ্বান করেনি। চক্রটি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে খাবার স্যালাইন উৎপাদন ও বিতরণে প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দ হওয়া ৬৮ কোটি টাকা টাকার কেনাকাটাও দরপত্র ছাড়া করেছে।

কোটেশন পদ্ধতিতে ছোট অঙ্কের কেনাকাটায় নির্ধারিত ঠিকাদারকে কাজ দেওয়া বোঝায়। বিধি অনুযায়ী, রাজস্ব খাতে এক দফায় সর্বোচ্চ তিন লাখ ও উন্নয়ন খাতে এক দফায় সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকার কেনাকাটা কোটেশনের মাধ্যমে করা যায়। অভিযোগ উঠেছে, আইপিএইচের চক্রটি বড় অঙ্কের কেনাকাটা কৌশলে ভাগে ভাগে করেছে, যাতে দরপত্র ডাকতে না হয়।

আইপিএইচের একাধিক সূত্র জানায়, সংস্থাটির হিসাবরক্ষক (রি-এজেন্ট শাখা), বিক্রয় ও সংগ্রহ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মাহবুবুর রহমান ১৯৯২ সাল থেকে দীর্ঘ ২৯ বছর এই প্রতিষ্ঠানে হিসাবরক্ষক পদে আছেন। অন্যদের বদলি হলেও মাহবুব সেখানেই থাকছিলেন।

মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কমিটি গঠন করে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে। গত ৪ আগস্ট স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আইপিএইচকে দেওয়া এক চিঠিতে জানায়, মাহবুবের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। অবশ্য এর আগের দিনই মাহবুবকে বদলি করা হয়। বদলির আদেশে বলা হয়, তিন কর্মদিবসের মধ্যে ছাড়পত্র না নিলে তিনি সরাসরি অব্যাহতি পেয়েছেন বলে গণ্য হবে।

মাহবুবুর রহমান কাছে দেওয়া বক্তব্যে দাবি করেন, তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তে আইপিএইচের আরেক কর্মকর্তা প্রভাব বিস্তার করেছেন। তিনি (মাহবুব) আরও বলেন, দুর্নীতি হয়ে থাকলে এর সঙ্গে তিনি একা জড়িত নন। তিনি দাবি করেন, অসুস্থতার ছুটির কারণে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিচ্ছেন না।

 


সর্বশেষ সংবাদ