জবি শিক্ষার্থী হামলার ঘটনায় তিন পুলিশ সাময়িক বরখাস্ত
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০১৯, ০৮:২৬ PM , আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৯, ০৮:২৬ PM
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ১১ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের দায়ে তিন পুলিশ সদস্যকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। একইসাথে ঘটনা তদন্তের জন্য করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এডিসি নুরুল আমিনকে তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়।
শিক্ষার্থীরা জানায়, গত মঙ্গলবার রাত ১টায় ১১ শিক্ষার্থীকে ওয়ারি থানার এএসআই নজরুল ইসলাম ও তার টিমের নেতৃতে গ্রপ্তার ও পরে নির্যাতন করা হয়। পরে বুধবার সকাল ৭টায় তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সদরঘাট-গুলিস্তান সড়কের রায় সাহেব বাজার চার রাস্তার মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এদিকে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে ও জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীরা উপাচার্য বরাবর লিখিত আবেদন করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী মহিদুল ইসলাম ও একাউন্টিং বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী নিক্সন ক্যাম্পাস থেকে বাসায় ফেরার সময় গোয়ালঘাট লেনে রাজধানীর ওয়ারী থানার পুলিশ এএসআই নজরুল ইসলাম তাদের সন্দেহমূলক তল্লাশি করেন। তাদেরকে ইয়াবা ও মাদকের ব্যবসার সাথে জড়িত আছে বলে দাবি করেন। এসময় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিচয় দিলেও তাতে কোনো লাভ হয়নি। এমনকি থানায় নিয়ে মাদক মামলার ভয় দেখিয়ে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন।
তখন তাদের কাছে যথেষ্ট টাকা নাই বলে তারা সিনিয়র কাউকে টাকা নিয়ে আসার জন্য বলে। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ জন শিক্ষার্থী খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তারা দুই শিক্ষার্থীকে আটক করার কারণ জানতে চাইলে সেখানে কথাকাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে এস আই আব্দুল আওয়াল ও এএসআই নজরুল ইসলাম নেতৃত্বে সবাইকে পুলিশের ভ্যানে উঠিয়ে থানায় নিয়ে যায়। পরে তাদের থানায় বেদড়ক মারধর ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়।
এদিকে শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের খবর ছড়িয়ে পড়লে সকাল ৮টা থেকে শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে। এ সময় সদরঘাট টু গুলিস্তান সড়কে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। পরে আটককৃত শিক্ষার্থীদের ছেড়ে দেয়া ও অপরাধীদের শাস্তির ব্যবস্থা প্রশাসনের আশ্বাস দিলে তারা অবরোধ ছেড়ে দিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে আসে।
ওয়ারি জোনের এডিসি নুরুল আমিন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের কথা স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ওয়ারী জোনের ডিসি আমাকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তদন্ত কমিটি পাঁচ কার্য দিবসের মধ্যে সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিবেন। এছাড়া এ ঘটনায় ইতোমধ্যে ওয়ারি থানার ডিউটি অফিসার এসআই অপু, এসআই আব্দুল আওয়াল ও এএসআই নজরুল ইসলামকে প্রাথমিকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমনা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কোনো শিক্ষার্থীকে আটক করা বেআইনি। এছাড়া তাদের মারধর করা চরম অন্যায়। আমরা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের থেকে বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ডিএমপি কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হবে।