জুলাই আন্দোলনে প্রকাশ্যে অস্ত্র চালানো চেয়ারম্যানের তথ্য এখনও ওয়েবসাইটে
- মো. আবদুর রহমান
- প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:২৭ PM , আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৫, ০৪:১৯ PM
গত ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর দেশের ৪৯৩টি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের অপসারণ করে প্রশাসকদের দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলেও লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার সরকারি ওয়েবসাইটে এখনো অপসারিত চেয়ারম্যান এবং জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থী হত্যার আসামী একে এম সালাহ উদ্দিন টিপুর তথ্য রয়ে গেছে। এ নিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বসহ সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সাড়ে ৫ মাস পর আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে দেখা যায়, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের প্রতিটি উপজেলার ওয়েবসাইটে উপজেলা চেয়ারম্যানের পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নাম প্রদর্শন করা হয়েছে। তবে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ওয়েবসাইটে এখনো অপসারিত চেয়ারম্যানের নাম প্রদর্শিত হচ্ছে।
উপজেলা ওয়েবসাইটে প্রাক্তন চেয়ারম্যানদের তালিকায় দেখা যায় মাত্র চারজনের নাম রয়েছে—আ,ও,ম শফিক উল্যা, জনাব মোসলেহ উদ্দিন নিজাম, জনাব মহি উদ্দিন বকুল (ভারপ্রাপ্ত), এবং বেগম ফরিদা ইয়াসমিন লিকা (ভারপ্রাপ্ত)। কিন্তু সদ্য অপসারিত চেয়ারম্যান একেএম সালাহ উদ্দিন টিপুর নাম তালিকায় যুক্ত করা হয়নি, এই নিয়ে আরো বেশি প্রশ্ন তুলেছে।

অপসারিত চেয়ারম্যান জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর প্রকাশ্যে গুলি চালানোর ঘটনায় সমালোচিত ছিলেন। ওই ঘটনার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠতে থাকে। অনেকেই দাবি করেন, এই ঘটনায় তার নাম সরকারি ওয়েবসাইটে রাখা আরো বেশি অগ্রহণযোগ্য।
এ বিষয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা অভিযোগ করে বলেছেন, প্রশাসনের দুর্বলতা এবং গাফিলতির কারণেই এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তারা দ্রুত সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা বলেন, সরকারের এমন সিদ্ধান্ত কার্যকরে যেখানে সব উপজেলায় সঠিক তথ্য আপডেট হয়েছে, সেখানে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় এখনো অপসারিত চেয়ারম্যানের নাম থাকার বিষয়টি দুঃখজনক। এটি সংশোধন না করা প্রশাসনের অবহেলার পরিচায়ক।
উপজেলা জামায়াতের থানা আমির নুর মো. রাছেল দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানায়, আমরা বিষয়টিকে প্রশাষনের অদক্ষতা বলে মনে করছি। আন্দোলনের ৬/৭ মাস অতিক্রম হলেও তারা তথ্যটি এখনো পরিবর্তন করতে পারেনি। যতদ্রুত সম্ভব ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সড়িয়ে নিতে জোর দাবি জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, প্রশাসন গত ৫ আগষ্টের পর থেকে শিক্ষার্থী হত্যার এই আসামীকে গ্রেফতারে গড়িমসি করে। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরা জানতে পারি সে এখন সৌদি আরব আছে।
উপজেলা আইসিটি অফিসার মো. জাহিদুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, এটি একটি টেকনিক্যাল গ্লিচ। খুব দ্রুত এটি নিরসনে আমরা সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করছি।
এই বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে লক্ষীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জামশেদ আলম রানা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানায়, আমি নতুন এসেছি তাই বিষয়টি আমার নজরে ছিল না। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে যতদ্রুত সম্ভব ওয়েবসাইট থেকে নাম সরানো হবে।
প্রসঙ্গত, ৪ আগস্ট আন্দোলন চলাকালে বাসভবনের ছাদের ওপর থেকে টানা চার ঘণ্টা গুলি চালিয়ে শতাধিক ছাত্র-জনতাকে আহত করেন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি একেএম সালাহ উদ্দিন টিপু এবং তার অন্য সহযোগীরা। যদিও হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত অস্ত্রধারী আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। যদিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সম্প্রতি তার একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে, যেখানে তাকে সৌদি আরবে হজ্ব পালন করতে দেখা যায়।