দুই মাসে বাল্যবিয়ের শিকার এক স্কুলের ১৯ ছাত্রী
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০৬ AM , আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:২৪ AM
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চাঁচকৈড় শাহীদা কাশেম পৌর বালিকা বিদ্যালয়ে দুই মাসে ১৯ জন ছাত্রীর বাল্যবিবাহ হয়ে গেছে। তাদের কয়েকজন ছিল এসএসসি পরীক্ষার্থী। অন্যরা ছিল ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ক্লাসের ছাত্রী বলে জানা গেছে। আন্দোলনের সময় স্কুল বন্ধ থাকার সময়ে সবার বাল্যবিয়ে হয়ে গেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নেগার সুলতানা।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, অপ্রাপ্ত বয়সী ছাত্রীদের বিয়ে হয়ে গেলেও শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, উপজেলা প্রশাসনসহ কিছু ক্ষেত্রে পাড়া-প্রতিবেশীরাও জানতে পারেননি। স্কুল খোলার পর ছাত্রীরা অনুপস্থিত থাকার কারণে করা তালিকা অনুযায়ী খোঁজ খবর নিতে গেলে বিয়ে হওয়ার বিষয়গুলো জানাজানি হয়। তারা সবাই সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণি পড়ুয়া।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অভিভাবকরা তথ্য গোপন করে তাদের বিয়ে দিয়েছেন। তাদের সহযোগিতা করেছেন এক শ্রেণির বিবাহ রেজিস্ট্রার ও নোটারি পাবলিকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। তারা জাল কাগজপত্র তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন।
এদিকে অপ্রাপ্ত বয়সে মেয়েদের বাল্যবিয়ে দেওয়ার কারন হিসাবে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়েছেন অভিভাবকরা। তারা বলছেন, এলাকায় বখাটেদের উৎপাত, উত্ত্যক্ত করা, অপহরণচেষ্ঠা এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিজেদের পছন্দের ছেলের সঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার আতঙ্কে তারা তাদের মেয়েকে বয়স পূর্ণ না হতেই বিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
বাল্যবিয়ে হওয়া অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীর ভ্যানচালক বাবা বলেন, ভালো পরিবার থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসায় রাজি হয়ে যান। তবে বিয়ে না দিয়ে পড়াশোনা করানো ভালো ছিল। আরেক ছাত্রীর বাবার ভাষ্য, তিনি মেয়েকে বাল্যবিয়ে দিতে চাননি। কিন্তু বিদ্যালয়ে যাতায়াতের সময় মেয়েকে উত্ত্যক্তের শিকার হতে হয়। প্রতিবেশী অনেক মেয়ে পছন্দের ছেলের সঙ্গে পালিয়ে গেছে। এসব ভেবে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন তিনি।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক নেগার সুলতানা বলেন,‘বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৫০ জন। তার মধ্যে দুই মাসেই ১৯ জনের বিয়ে হয়ে গেছে। এর আগেও অনেক শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়েছে। এ বিষয়ে গত ১৯ আগস্ট উপজেলা প্রশাসনের আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে তিনি সবাইকে বিষয়টি অবগত করেছেন।
তিনি জানান, বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে ৭ম শ্রেণির ৪, অষ্টম শ্রেণির ২, নবম শ্রেণির ৬ ও দশম শ্রেণির ৭ জন। স্কুলে উপস্থিতির সংখ্যা কম। অভিভাবক সমাবেশ আয়োজন করলেও অভিভাবকরা আসতে চান না। শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে বিদ্যালয়ে সচেতনতামূলক সেমিনার করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সালমা আক্তার গণমাধ্যমকে বলেন, শাহিদা কাশেম পৌর বালিকা বিদ্যালয়ে জনসচেতনতামূল অভিভাবক সমাবেশ এ সপ্তাহেই করা হবে। বাল্যবিয়ে বন্ধে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে কার্যক্রম গ্রহণ করা প্রয়োজন, তা নেওয়া হচ্ছে।