গুচ্ছে চান্স না পেয়ে পদ্মায় ঝাঁপ দিয়ে ভর্তিচ্ছুর আত্মহত্যা

পিউ কর্মকার
পিউ কর্মকার  © সংগৃহীত

২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞান ইউনিটে চান্স হয়নি রাজবাড়ী সরকারি কলেজছাত্রী পিউ কর্মকারের। পরীক্ষা ভালো হলেও নিজের ভুলে এমন অবস্থা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। ফলে চান্স হবে না জেনে অভিমানে পদ্মা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। আত্মহত্যার পূর্বে ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত বয়ান লিখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দীর্ঘ একটি পোস্ট লিখে গেছেন পিউ কর্মকার।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) রাত সোয়া আটটার দিকে তার লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। পরে তাকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত পিউ কর্মকার (২০) রাজবাড়ী পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড বিনোদপুর গ্রামের কৃষ্ণপদ কর্মকারের মেয়ে। পিউ রাজবাড়ী সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এ বছর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা অংশ নিয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দিলেও কোথাও চান্স পাননি তিনি।

পিউয়ের চাচি জানান, মঙ্গলবার বিকেলের দিকে বাড়ি থেকে বের হন পিউ। সন্ধ্যার পরও বাড়ি ফেরেননি। এরপর ফেসবুকে পিউর পোস্ট দেখতে পেয়ে স্বজনেরা শহরের গোদারবাজার ও সোনাকান্দর ঘাট এলাকায় খোঁজাখুঁজি করেন। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। রাত সোয়া আটটার দিকে সোনাকান্দর ঘাট এলাকা থেকে তাঁকে উদ্ধার করা হয়। পরে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

সদর হাসপাতালের নার্সিং সুপারভাইজার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই ওই তরুণী মারা গেছে।

আত্মহত্যার পূর্বে নিজের ভুলের কথা নিশ্চিত হতে ভর্তি সহায়তা সংক্রান্ত একটি গ্রুপে পোস্ট করেছিলেন পিউ

আত্মহত্যার আগে এক ফেসবুক পোস্টে ওই তরুণী লিখেছেন, ‘গুচ্ছ আমার শেষ ভরসা ছিল। জানি না কবে রেজাল্ট দিবে। পরীক্ষাও মোটামুটি হয়েছিল একটা আশা ছিল কিন্তু আমার ভাগ্য সেই আশাটাও পূরণ করতে দিল না। ৫টা অপশন থাকে তার মধ্যে আমি বায়োলজি আর ইংরেজি এর বৃত্ত ভরাট করে ফেলেছিলাম ভুল করে, আজকে সেটা দেখলাম। কিন্তু আমি উত্তর করেছিলাম বাংলার। আমার সব স্বপ্ন শেষ। একে একে ঢাবি, রাবি, জাবি থেকে একটু একটুর জন্য ধাক্কা খাই। সারাদিন রাত এক করে পড়তাম। বাবা মার অনেক স্বপ্ন ছিল আমাকে নিয়ে, কিন্তু আমি কিচ্ছু দিতে পারি নাই। দাদার ইচ্ছা ছিল আমাকে ডাক্তার বানাবে। আমারও স্বপ্ন ছিল ছোট থেকেই যে ডাক্তার হবো। আমার ভাগ্য এতটাই খারাপ ছিল মেডিকেল অ্যাডমিশনের প্রিপারেশন নেওয়াও শুরু করি কিন্তু মেডিকেলেও বসতে পারিনি। এটা থেকেও বিশাল একটা ধাক্কা খাই। অনেক ভেঙে পড়েছিলাম তাও হাল ছাড়ি নাই। এই অ্যাডমিশন পিরিয়ডটা যে কতটা কষ্ট দিয়েছে আমাকে।’

তিনি আরও লেখেন, ‘এই সব আর আমি নিতে পারতেছি না। আমি শুধু একটা আশ্রয় খুঁজছিলাম শেষ আশ্রয় এটাও শেষ হইল। অনেক মানুষ অনেক আত্মীয়ের অনেক কথা শোনা লাগছে। বাবার একটু ফিন্যানসিয়াল সমস্যা ছিল এ জন্য ঢাকা গিয়ে পড়তে হবে কেন। কিন্তু আমি ধৈর্য ধরে ছিলাম যে পারব। কিন্তু আমি আর পারলাম না। সারাটা দিন ঘরের মধ্যে একা একা বসে থাকি। মানুষের কত ফ্রেন্ড কত কিছু কিন্তু আমি আমার পাশে কাউকে পাই নাই। সব থেকে প্রয়োজন ছিল যাকে, যাকে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবতাম তাকেও আমি আমার পাশে পাই নাই। হইত আমাকে সাপোর্ট করার মতো কেউ থাকলে আজকে এই মৃত্যুটা আমার হইতো না। সেকেন্ড টাইমের প্রিপারেশন নেওয়ারও আমার কোনো মানসিক বা শারীরিক শক্তি নাই। আমার জীবনটা এখানেই থেমে গেল।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘মায়ের কাছে গিয়ে মাঝে-মধ্যে কাঁদতাম মাও বুঝে নাই আমাকে। আমি একটা বোঝা সবার কাছে। আমার মৃত্যুর জন্য আমার এই বড় বড় স্বপ্নগুলোই দায়ী। আমি আমার বাবা, মার স্বপ্ন পূরণ করতে পারি নাই। আমাকে শেষবারের মতো দেখতে চাইলে নদীর জলেই খুঁজো। আমার মৃত্যুটা এভাবেও চাই নাই ভালো থাইকো সবাই। আমি আমার এই জীবনটা আর নিতে পারছি না। আমারে মাফ করে দিও সবাই। এভাবে দম বন্ধ করে বাঁচতে পারতেছি না আর।’

রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন তিনি। মেয়েটি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ায় নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন।

এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৩-২৪  শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথমবর্ষের সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (জিএসটি) গুচ্ছের ‘এ’ ইউনিটের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে পাস করেছেন ৫০ হাজার ৭৬০ জন।

 

সর্বশেষ সংবাদ