প্রশ্নফাঁসে জড়িতরা ফেইম, মেডিকো, থ্রি ডক্টরস কোচিং সেন্টারে যুক্ত ছিলেন

প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১২ জন
প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১২ জন  © ফাইল ছবি

প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় সাত চিকিৎসকসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ২০২০ সালের একটি মামলায় তদন্তে নেমে চক্রে জড়িতদের শনাক্ত করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা বিভিন্ন চিকিৎসাকেন্দ্র ও কোচিংয়ে জড়িত। ঢাকা, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ ও বরিশাল জেলার বিভিন্ন এলাকায় গত ৩০ জুলাই থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডির সাইবার টিম।

রোববার (১৩ আগস্ট) রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া। তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দেওয়া বিপুল সংখ্যক ব্যাংকচেক ও প্রবেশপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। তারা মানিলন্ডারিং আইনে অপরাধ করেছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা হবে। 

তিনি জানান, চক্রের ৮০ জন সদস্য বিগত ১৬ বছরে হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে অবৈধভাবে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করিয়ে শত কোটি টাকা আয় করেছে। অধিকাংশই বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতিতে যুক্ত। চক্রের মাস্টারমাইন্ড জসীম উদ্দিন ভূঁইয়ার কাছ থেকে গোপন ডায়রি উদ্ধার করা হয়েছে। যেখানে অন্য সদস্যদের নাম রয়েছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। প্রশ্ন ফাঁস করে মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন এমন শতাধিক শিক্ষার্থীর নামও পেয়েছেন। অনেকে পাস করে ডাক্তারও হয়েছেন।

গ্রেপ্তারদের মধ্যে ময়েজ উদ্দিন আহমেদ প্রধান (৫০) ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। পরে ফেইম নামে কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়ান শিবিরের এই নেতা। প্রশ্নপত্র ফাঁস করে ২০ বছরে শত শত শিক্ষার্থীকে ভর্তি করিয়েছেন। তিনি প্রশ্ন ফাঁস ও মানি লন্ডারিংয়ের মামলার এজাহারভুক্ত আাসামি।

আরেক সদস্য সোহেলী জামান (৪০) জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক। তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করে ফেইম কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে স্বামী ময়েজের সঙ্গে চক্রে জড়ান। মো. আবু রায়হান ঢাকা ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০০৫ সালে প্রশ্ন পেয়ে ভর্তি হন তিনি। পরে চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তিনি প্রাইমেট কোচিং সেন্টার চালাতেন। কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যুক্ত আছেন।

আরেক আসামি জেড এম সালেহীন শোভন (৪৮) এজহারভুক্ত আসামি। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করে থ্রি ডক্টরস কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে চক্রের সঙ্গে জড়ান। তিনি ২০১৫ সালে র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তিনি ছাত্রদলের পদধারী নেতা ছিলেন। মেডিকো কোচিং সেন্টারের মালিক মো. জোবাইদুর রহমান জনি (৩৮)। তিনি ২০০৫ সাল থেকে চক্রে জড়িত। তিনি কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছেন। প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে শত শত শিক্ষার্থীকে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করিয়েছেন। তিনিও ছাত্রদলের নেতা ছিলেন।

আরেক সদস্য জিল্লুর হাসান রনি (৩৭) পঙ্গু হাসপাতালের (নিটোর) চিকিৎসক। তিনি ২০০৫ সাল থেকে চক্রের সঙ্গে জড়িত। ২০১৫ সালে রংপুর থেকে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ছাত্রদলের এই নেতা বর্তমানে ড্যাবের সঙ্গে জড়িত। ইমরুল কায়েস হিমেল (৩২) চক্রের সঙ্গে জড়ান তার বাবা আব্দুল কুদ্দুস সরকারের মাধ্যমে। তিনি ময়মনসিংহের বেসরকারি কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করেন। ২০১৫ সালে টাঙ্গাইলে শ্বশুর বাড়িতে প্রশ্ন পড়িয়ে শিক্ষার্থীদের অবৈধভাবে মেডিকেলে ভর্তি করান।

গ্রেপ্তার অন্যদের মধ্যে রয়েছেন- জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া মুক্তার, আক্তারুজ্জামান তুষার, রওশন আলী হিমু, জহির উদ্দিন আহমেদ বাপ্পী ও আব্দুল কুদ্দুস সরকার।


সর্বশেষ সংবাদ