ইউপি সচিবকে জিম্মি করে খেয়াঘাট ইজারার সই নেওয়ার অভিযোগ

  © সংগৃহীত

কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের সুতারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে সরকারি নীতিমালা অমান্য করে অবৈধভাবে পছন্দের ব্যক্তিকে খেয়াঘাট ইজারা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তিনি টেন্ডার কমিটির সভা না করে এবং টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি না দিয়েই এক ব্যক্তিকে খেয়াঘাট ইজারা দিয়েছেন।

আরও অভিযোগ উঠেছে, তার এই অপকর্মে সহযোগিতা করেছেন করিমগঞ্জ উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন আলম। চেয়ারম্যানের হয়ে তিনিসহ যুবদল ও ছাত্রদলের আরও কয়েকজন ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তার কাছ থেকে জোর করে রেজুলেশনে স্বাক্ষর নিয়েছেন।

এ বিষয়ে সুতারপাড়া ইউপি প্রশাসনিক কর্মকর্তা (সচিব) তোফায়েল আহমেদ জানান, বেশ কয়েক মাস ধরে ইউপি চেয়ারম্যান পলাতক থেকে ইউনিয়ন পরিষদের কাজকর্ম করছেন। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগে মামলা হয়েছে। মামলার পর থেকে তিনি ইউনিয়ন পরিষদে হাজির হন না। ফোনে নির্দেশনা দেন। স্বাক্ষরের প্রয়োজন হলে লোক মারফত কাজগুলো করেন। গত ৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় জেলা শহরের পুরানথানা এলাকায় ওই যুবদল নেতার নেতৃত্বে আরো কয়েকজন তাকে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দোতলায় নিয়ে জিম্মি করে রাখে। পরে জোর করে রেজুলেশনে স্বাক্ষর নেয়। 

এর আগে চেয়ারম্যান তাকে ফোন দিয়ে যুবদল নেতাকে সহযোগিতার নির্দেশ দেন বলে জানান তিনি।
 
এ ঘটনায় গত ৮ এপ্রিল ইউপি প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও পরিষদের কয়েকজন সদস্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পৃথক লিখিত অভিযোগ করেছেন। ইউপি সদস্যদের অভিযোগ, তারা টেন্ডার কমিটির সদস্য হলেও উত্তর গণেশপুর খেয়াঘাট ইজারার বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না। চেয়ারম্যান কমিটির সভা ছাড়াই ভুয়া রেজুলেশন করে পছন্দের এক ব্যক্তিকে ঘাট ইজারা দিয়েছেন।

ইউপি প্রশাসনিক কর্মকর্তার লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, সুতারপাড়া ইউনিয়নের উত্তর গণেশপুর খেয়াঘাট ১৪৩২ সালের জন্য ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় উপজেলা প্রশাসন। ১৭ মার্চ নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস থেকে একটি টেন্ডার কমিটির গঠন করে দেওয়া হয়। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী টেন্ডার কমিটি সভা করে সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সর্বোচ্চ দরদাতার মধ্যে খেয়াঘাট ইজারা দেওয়ার কথা। কিন্তু সুতারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন কমিটির সভা না করে নিজের পছন্দের কয়েকজন সদস্যের বাড়িতে খাতা পাঠিয়ে রেজুলেশন খাতায় স্বাক্ষর নেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, গত ৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় জেলা শহরের পুরান থানা থেকে প্রশাসনিক কর্মকর্তার কাছ থেকে জোর করে চেয়ারম্যানের করা রেজুলেশনে স্বাক্ষর নেন যুবদল নেতা আলমগীর হোসেন আলম, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-সম্পাদক ওমর ফারুকসহ আরো কয়েকজন। 

এ বিষয়ে যুবদল নেতা আলমগীর হোসেন আলমের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানই প্রশাসনিক কর্মকর্তার কাছ থেকে স্বাক্ষর নেওয়ার জন্য রেজুলেশন খাতাটি আমাদের দিয়েছেন। ওই কর্মকর্তা প্রথমে স্বাক্ষর দিতে গড়িমসি করে। ঘণ্টাখানেক পর স্বাক্ষর দেন। আমারা কোনো জোরজবদস্তি করিনি। যে লোককে ঘাট ইজারা দেওয়ার জন্য আমরা স্বাক্ষর নিয়েছি, বিষয়টি উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতারা অবগত আছেন। জেলা যুবদল ও ছাত্রদলেল নেতারা জানেন।

অভিযোগের বিষয়ে সুতারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সুতারপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক  মো. কামাল হোসেন প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে হুমকি এবং জোর করে স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন।

টেন্ডার কমিটির সভা না করার বিষয়টি স্বীকার করে চেয়ারম্যান বলেন, সব সদস্যের কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সময় তিনি করিমগঞ্জ উপজেলা বিএনপির কয়েকজন শীর্ষ নেতার সুপারিশে একজনকে উত্তর গণেশপুর খেয়াঘাট ইজারা দেয়া হয়েছে বলে স্বীকার করেন।

অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে করিমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, চেয়ারম্যানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ তদন্তে উপজেলা মৎস্য, সমাজসেবা কর্মকর্তা ও একাডেমিক সুপারভাইজারকে নিয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থ নেওয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ