২১ বছর পর ভালোবাসার টানে বাংলাদেশি সাংবাদিকের কাছে ছুটে এলেন ডেনিশ নারী
- বরগুনা প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:১৯ AM

মহাসাগর কিংবা সাগর দূরত্ব যা-ই হোক, প্রেমের কাছে হার মানতেই হয়—এমনটাই প্রমাণ করলেন সাংবাদিক মান্নু ও রুমানা মারিয়া দম্পতি। গত ২১ বছর যোগাযোগ না থাকার পরেও ফেসবুকের বদৌলতে বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) একে অপরকে খুঁজে পেয়ে ডেনমার্ক থেকে বাংলাদেশে ছুটে এসেছেন রুমানা মারিয়া নামের এক ডেনিশ নারী।
জানা গেছে, মনের মানুষকে অভ্যর্থনা জানাতে বরগুনা থেকে রাজধানী ঢাকায় ছুটে এসেছেন সাংবাদিক মাহবুবুল আলম মান্নু। পরে তাকে নিজ বাসায় নিয়ে এসেছেন তিনি। মাহবুবুল আলম মান্নু দৈনিক আমাদের সময়ের বরগুনা প্রতিনিধি ও বরগুনা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি।
এর আগে সদর উপজেলার পাজরাভাঙ্গা এলাকার তরুণ মান্নু নব্বইয়ের দশকে জীবিকার তাগিদে পাড়ি জমান ডেনমার্কে। সেখানেই বন্ধুর ফাস্টফুডের দোকানে আসা ক্রেতা তরুণী রুমানা মারিয়ার সঙ্গে পরিচয় হয় মান্নুর। পরিচয় থেকে প্রথমে বন্ধুত্ব ও পরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে দুজনের মধ্যে। বন্ধুত্ব ও প্রেমের সম্পর্কের দেড় বছর অতিবাহিত হওয়ার পরে ১৯৯৭ সালে বিয়ে করেন মান্নু ও রুমানা।
ওই বছরই ডেনিশ নাগরিক স্ত্রী রুমানা মারিয়াকে নিয়ে বাংলাদেশে এসে নিজ জেলা বরগুনার সদর থানার পেছনে নিজস্ব ভবনে আকন ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার খুলে নামমাত্র ফি নিয়ে উপকূলীয় এ জেলার দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের সেবা করতে শুরু করেন। স্থানীয় রাজনৈতিক ও চিকিৎসক নেতাদের চাপে ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে ২০০০ সালে স্ত্রীকে তার বাবা-মায়ের কাছে পাঠিয়ে দিয়ে নিজে সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত হন। দাম্পত্য জীবনে তাদের একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়।
এরপরেও প্রায় তিন বছর টেলিফোনে যোগাযোগ থাকলেও পরবর্তীতে তাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ সময় পরিবারের চাপে মান্নুর সঙ্গে বিবাহ বন্ধন ছিন্ন করে নতুন করে বিয়ে করেন রুমানা মারিয়া। তবে বনিবনা না হওয়ায় সেখানেও বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটান তিনি।
পরে ডেনমার্কে অবস্থানরত প্রবাসী বাঙালিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং ফেসবুকের মাধ্যমে প্রায় ২১ বছর পরে মাহবুবুল আলম মান্নুর সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হন ডেনিশ এই নারী। পরে তাদের দুজনের কথা হয়। বৃহস্পতিবার প্রিয় মানুষের একটু সান্নিধ্য লাভের জন্য ২৪ বছর পরে কর্মস্থল থেকে মাত্র দশ দিনের ছুটি নিয়ে ডেনমার্ক থেকে বাংলাদেশে ছুটে আসেন রুমানা মারিয়া।
এদিন বিকেলে এক লাখ টাকা দেনমোহরে মান্নু ও রুমানার আবার বিয়ে হয়। এ সময় মান্নুর আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীসহ শুভাকাঙ্ক্ষীরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদকর্মী মাহবুবুল আলম মান্নু বলেন, তিন বছর যোগাযোগ থাকলেও পরে প্রায় ২১ বছর আমাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। গত জানুয়ারিতে ফেসবুকের মাধ্যমে আমাদের যোগাযোগ হয় এবং তাকে আমি চিনতে পারি।
তিনি আরও বলেন, অ্যাম্বাসির সঙ্গে কথা হয়েছে, আমাদের ম্যারেজ সার্টিফিকেট জমা দিলে তার দীর্ঘ সময় বাংলাদেশে থাকার ব্যবস্থা হয়ে যাবে। এ ছাড়া আমি যদি তার সঙ্গে ডেনমার্কে চলে যাই, তাতেও তার কোনো আপত্তি নেই। না গেলে সে আগামী মাসে তার কর্মস্থল থেকে অব্যাহতি নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসবে।