দুই মাস ধরে বেতন বন্ধ

ইএফটি জটিলতায় ফেনীর মাধ্যমিক শিক্ষকদের ঈদ আনন্দ ম্লান 

শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক
শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক  © ফাইল ছবি

আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে দেশের অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন-বোনাস পেলেও ফেনীর অনেক মাধ্যমিক শিক্ষক এখনও নিজেদের বেতন-বোনাস পায়নি। ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) সংক্রান্ত জটিলতায় তাদের বেতন-বোনাস আটকে আছে, যা ঈদের আনন্দকে ম্লান করে দিয়েছে।

শিক্ষকরা বলছেন, ইএফটি জটিলতার কারণে গত দুই মাস ধরে বেতন উত্তোলন করতে পারছেন না তারা। ঈদের আগে বেতন-বোনাস উত্তোলন করতে না পারায় পরিবারে ঈদের আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে। 

জানা যায়, ফেনীর প্রায় ৩ হাজার ৩০০ শিক্ষকের ইএফটিএ জটিলতার কারণে বেতন-বোনাস আটকে আছে। শিক্ষকরা অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছেন বেতন-বোনাসের মেসেজটি পাওয়ার জন্য। আজ বুধবার (২৬ মার্চ) এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শিক্ষকরা এখনও বেতন-বোনাসের মেসেজ পাননি। ফলে তারা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। গত কয়েক মাস ধরে বেতন না পাওয়ায় ঈদকে কেন্দ্র করে স্বাভাবিক কেনাকাটাও করতে পারছেন না শিক্ষকরা। এতে তাদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

ফেনী জেলা শিক্ষক সমিতির সদস্য সচিব ও ফকিরহাট আবু বক্কর উচ্চ বিদ্যলয়ের প্রধান শিক্ষক মোহা. আলমগীর হোসেন চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, গত ডিসেম্বর বেতন পেয়েছিলাম এরপর থেকে আর বেতন পাইনি। ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার সমস্যার সমাধান করতে পারিনি। তিনি আরও বলেন, ইএফটি জটিলতায় বেতন না পেয়ে শিক্ষকরা তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন পার করছেন। ঈদের আগে বেতন-বোনাস পাওয়ার সম্ভবনা নাই। আমাদের বিদ্যালয়ে ১৮ শিক্ষক জানুয়ারি মাস থেকে তাদের বেতন পায়নি। যার কারণে শিক্ষকদের মাঝে ঈদের কোনো আনন্দ নেই।

ফেনী সদর উপজেলার ছনুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এনামুল হক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তার এক পোস্টে লেখেন, ‘বেতন পেতে মেসেজ পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছি’। শুধু এনামুল হক নন, তার মতো আরও অনেক শিক্ষক ও কর্মচারীর একই পরিস্থিতির মুখোমুখি। 

একই প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন শিক্ষক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, গত কয়েক মাস ধরে বেতন বন্ধ রয়েছে। এখন শুধু বেতনের মেসেজের অপেক্ষায় আছি। বেতন পেলেই ঈদের কেনাকাটা শুরু করবো, কিন্তু সেই মেসেজ কবে আসবে তা অনিশ্চিত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রধান শিক্ষক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, কোনো তথ্যগত অসংগতির কারণে ইএফটিতে বেতন না দিতে পারলে আগের পদ্ধতিতে পরিশোধ করা হোক। পরে তথ্য সংশোধন সাপেক্ষে ইএফটিতে দেওয়া যেতে পারে।

এদিকে, ফেনী জেলা শিক্ষক সমিতির নেতারা বলেন, রোজার মাস চলছে, আর কয়েক দিন পর ঈদ। এ অবস্থায় সামান্য বেতন পাওয়া শিক্ষকরা কষ্টে দিন পার করেছেন। শিক্ষক-কর্মচারীদের দুর্বিষহ অবস্থা। অথচ কথা দেওয়া হয়েছিল, আইবাস ডাবল প্লাস সফটওয়্যারে ইলেকট্রনিকস ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) মাধ্যমে শিক্ষক-কর্মচারীরা প্রত্যেক মাসের শুরুতেই বেতন-ভাতা পাবেন।

ফেনী জেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোঃ হারুন অর রশীদ ভূইয়া দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ইএফটি জটিলতার কারণে আমাদের বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক বেতন পাচ্ছে না। আশা করি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে।

এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফী উল্লাহ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) জটিলতার কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। অনেক শিক্ষক বেতন পাচ্ছেন, তবে যাদের নাম, মোবাইল নম্বর অথবা এনআইডি কার্ডে ভুল রয়েছে, তারা এখনও বেতন পাননি। যাদের তথ্য সংশোধন হয়েছে, তারা বেতন পাচ্ছেন।

জেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী পরিদর্শক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন আশরাফী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ফেনীতে প্রায় ৩৩ হাজার মাধ্যমিক শিক্ষক রয়েছেন, এর মধ্যে ৫০ শতাংশ শিক্ষক বেতন পাচ্ছেন। যাদের ইএফটি সংশোধন করা হয়েছে, তারা ঈদের আগেই বেতন পাবেন। ২০ মার্চ পর্যন্ত সংশোধনের সময় দেওয়া হয়েছিল। সংশোধন সম্পন্ন হলে সকল শিক্ষক তাদের বেতন ও বোনাস পাবেন।


সর্বশেষ সংবাদ