হাইকোর্টের রায় প্রত্যাখ্যান করছি, এটা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা: মামুন

মানববন্ধনে বক্তব্য দিচ্ছেন হাসান আল মামুন
মানববন্ধনে বক্তব্য দিচ্ছেন হাসান আল মামুন  © টিডিসি রিপোর্ট

সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহাল সংক্রান্ত হাইকোর্টর রায় প্রত্যাখ্যান করেছেন ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন। তিনি বলেছেন, সরকারি একটা মীমাংসিত বিষয়কে হাইকোর্ট ব্যবহার করে পরিবর্তন করা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণার শামিল। শিক্ষার্থীরা কখনো এ প্রতারণা মেনে নেবে না। একজন শিক্ষার্থীকেও তার মেধার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।

বৃহস্পতিবার (০৬ জুন) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহালের প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তৎকালীন কোটাবিরোধী আন্দোলনের একাধিক নেতা অংশ নিয়েছেন।

মানববন্ধনে অংশ নিয়ে হাসান আল মামুন বলেন, মহামান্য হাইকোর্ট কোটা পুনর্বহালের যে রায় দিয়েছেন, সেটি অবৈধ ও সংবিধান পরিপন্থি। সংবিধানে স্পষ্টই উল্লেখ রয়েছে যে, প্রজাতন্ত্রে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে দেশের প্রতিটি নাগরিক সামন সুযোগ পাবেন। যদি প্রতিটি নাগরিক সব অধিকার পায়, তাহলে কেন সরকারি চাকরিতে ৬৫ শতাংশ কোটা ব্যবস্থা দেওয়া হলো? যারা এ কোটার সুবিধা ভোগ করছেন, তারা এদেশের মাত্র ২ শতাংশ মানুষ। এতো অল্প সংখ্যক মানুষ ৫৬ শতাংশ কোটার সুবিধা ভোগ করছে। অন্যদিকে ৯৮ শতাংশ মানুষের জন্য রয়েছে মাত্র ৪৪ শতাংশ।

কোটাবিরোধী পূর্বের আন্দোলনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে মামুন বলেন, ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন করতে গিয়ে আমরা রাজপথে রক্ত দিয়েছি। আজকেও ১৪টি মামলার গ্লানি টানছি। আমাদের প্রতিদিন কোর্টে হাজিরা দিতে হচ্ছে। আন্দোলনে গিয়ে সরকারের দমনপীড়নের শিকার হয়ে আমার বাঁ পাশের পাঁজরের হাড় ভেঙে গেছে। আমি সেই ভাঙা পাঁজর নিয়ে এখনো লড়ছি। আন্দোলনের পর থেকে আমি আজ পর্যন্ত কোনো সরকারি চাকরির পরীক্ষা দিতে পারিনি। তবুও এই ১৮ কোটি শিক্ষার্থীর জন্য, এদেশের বেকার যুবকদের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটামুক্ত করেছিলাম।

তিনি বলেন, কিন্তু হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছে, এটা এদেশের শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারণা। এই প্রতারণা আমরা কোনোভাবে মেনে নেব না। কোটা সংস্কার আন্দোলন করতে গিয়ে আমরা রক্ত দিয়েছি, মামলা-হামলার শিকার হয়েছি। এবার প্রয়োজনে জীবন দেব, তবু এদেশের শিক্ষার্থীদেরকে তাদের মেধার ভিত্তিতে বিসিএসের মতো জায়গায় নিয়োগের ক্ষেত্রে কাজ করে যাব। এটাতে যারা হস্তক্ষেপ করবে, তাদের হাত গুড়িয়ে দেওয়া হবে।

দেশের বেকার পরিস্থিতির চিত্র উল্লেখ করে মামুন বলেন, এখন প্রতিটি বিসিএসে প্রায় ৪-৫ লাখ শিক্ষার্থী আবেদন করেন। এই যে বেকার সংকট... শুধুমাত্র দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে প্রতি বছর লাখ লাখ বেকার মেধাবী শিক্ষার্থী বের হচ্ছেন। কিন্তু আমার দেশ এসব বেকার শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থান করতে পারছে না। সরকার এসব শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানে ব্যবস্থা না করে উল্টো কোটা প্রথা ফিরে দিতে চায়। তারা এদেশের বেকার শিক্ষার্থীদের সাথে প্রহসন করছে।

কোটা বাতিলে সরকারি সিদ্ধান্তের ফলে একাধিক বিসিএসের নিয়োগে সুফল দেখা গেছে বলে জানান মামুন। তিনি বলেন, এই কোটার বিলুপ্তির ফলে ৪০তম বিসিএস থেকে কোটাহীনভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিসিএস দিচ্ছেন। দেশের সর্বোচ্চ মেধাবীরা তাদের যোগ্যতায় তারা বিসিএসে প্রবেশ করছেন। বিশ্বের কোনো দেশে সরকারি প্রথম শ্রেণির মতো চাকরিতে কোনো ধরনের কোটা ব্যবস্থা রাখা হয়নি।

কোটা নিয়ে হাইকোর্টের রায় নিয়ে মামুন বলেন, হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছেন, সেটিকে আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা শুনেছি, রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের রায়কে আপিল বিভাগে আটকে দেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। প্রয়োজনে আমরাও এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষকে সহায়তা করতে চাই। সেইসঙ্গে এ রায়কে খারিজ করে দিয়ে সরকারি প্রথম ও দ্বিতীয়তে যে কোটা ব্যবস্থা ছিল সেটিকে সারাজীবনের জন্য কবর রচনা করবো।

 

সর্বশেষ সংবাদ