‘আইনজীবীর পরামর্শে’ ঠিক হয় কৃষি গুচ্ছের ভর্তি প্রক্রিয়া

লোগো
লোগো  © ফাইল ফটো

সরকারি সাতটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়া আইনজীবীর পরামর্শে নির্ধারিত হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি কিংবা একাডেমিক কোনো বিষয়ে আইনজীবীর পরামর্শ গ্রহণ করার কোনো এখতিয়ার নেই বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কৃষি গুচ্ছের ভর্তিতে কোটায় ফরম পূরণ করা শিক্ষার্থীদের কীভাবে ভর্তি করা হবে সেটি নির্ধারণে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে বিভিন্ন কোটায় ভর্তির ক্ষেত্রে আইনজীবীর পরামর্শ নিয়েছে ভর্তির মূল দায়িত্বে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহামন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. গিয়াসউদ্দীন মিয়া।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছক কৃষি গুচ্ছের অন্তর্ভুক্ত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিভিন্ন ধরনের কোটায় শিক্ষার্থীদের কীভাবে ভর্তি করা হবে সে বিষয়টি ‘উকিলের’ পরামর্শে নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কথা বলতে হলে আপনাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সাথে কথা বলতে হবে।

এদিকে প্রবাসী কোটায় ভর্তির সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়ার এখতিয়ার নেই জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও শিক্ষাবিদ ড. তানজিম উদ্দিন খান। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে কীভাবে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হবে সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এখানে আইনজীবীর পরামর্শ দেওয়ার এখতিয়ার নেই।

আরও পড়ুন: মেধাতালিকায় প্রথম দিকে থেকেও ভর্তির সুযোগ বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা

এদিকে কৃষি গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকার প্রথম দিকে থেকেও ভর্তির সুযোগ বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। একই সাথে মেধাক্রমে এগিয়ে থাকার পরও শিক্ষার্থীদের অনেক দূরের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে বাধ্য করারও অভিযোগ উঠেছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কৃষি গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকা না দেখে কোটা আগে দেখা হচ্ছে। এতে মেধা তালিকার প্রথম দিকে থেকেও অনেকেই ভর্তির সুযোগ বঞ্চিত হচ্ছেন। অথচ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে আগে মেধা তালিকা দেখা হয়। মেধা তালিকায় সুযোগ না পেলে তখন কোনো কোটা আছে কিনা সেটি দেখা হয়।

শিক্ষার্থীদের এসব অভিযোগের সত্যতা মিলেছে কৃষি গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষায় প্রকাশিত মেধা তালিকা থেকে। মেধা তালিকায় ২১৪৬তম স্থান অধিকার করেও প্রবাসী কোটা টিক দেওয়ায় অপেক্ষমান তালিকায় রাখা হয়েছে এক শিক্ষার্থীকে। শুধু এই এক শিক্ষার্থীই নন; মেধা তালিকায় প্রথম ৩৫০০ এর মধ্যে থেকেও প্রবাসী কোটায় টিক দেওয়ার কারণে অপেক্ষমান তালিকায় চলে গেছেন ২০ শিক্ষার্থী। যাদের প্রত্যেকেরই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্ন ভেস্তে যেতে বসেছে।

আরও পড়ুন: ঢাবিতে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার দাবিতে বড় আন্দোলনের আভাস

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, কৃষি গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষায় আরাফাত নামে এক পরীক্ষার্থী ১০৮তম স্থান অধিকার করেছেন। তবে ভর্তির সময় প্রবাসী কোটায় টিক দেওয়ায় তাকে প্রবাসী কোটায় ভর্তির জন্য বাধ্য করা হচ্ছে। একই অবস্থা ৬৮৫ মেধাক্রমে থাকা তাফহীমুল ইসলামসহ আরও ৮ শিক্ষার্থীর। এদের প্রত্যেকেই মেধা তালিকায় ভালো অবস্থানে থেকেও নিজের পছন্দ অনুযায়ী ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে না। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবাসী কোটা থাকায় তাদের সেখানে গিয়েই ভর্তি হতে হচ্ছে।

এসব বিষয়ে জানতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহামন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. গিয়াসউদ্দীন মিয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি পারিবারিক অনুষ্ঠানে থাকার কথা বলে ফোন রিসিভ করেননি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের কোটার আগে সাধারণ মেধাক্রম দেখা হয়। কোনো শিক্ষার্থী যদি সাধারণ মেধা তালিকায় চান্স পেয়ে যায় তাহলে তার ভর্তির ক্ষেত্রে কোটা অনুসরণ করা হয় না। মেধায় সুযোগ না হলে পরবর্তীতে তার কোনো কোটা আছে কিনা সেটি দেখা হয়।

আরও পড়ুন: গুচ্ছে দ্বিতীয়বার পরীক্ষার সুযোগ দিতে চান অধিকাংশ উপাচার্য

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে আগে সাধারণ মেধা দেখা হয়। কেউ যদি মেধায় সুযোগ পেয়ে যায় তাহলে তার ক্ষেত্রে কোটা অনুসরণ করা হয় না। মেধায় সুযোগ না পেলে পরবর্তীতে কোটা দেখা হয়।

এদিকে কৃষি গুচ্ছের এমন সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বলে মনে করে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। তাদের মতে, একজন শিক্ষার্থী মেধায় এগিয়ে থাকলে তাকে মেধাক্রম অনুযায়ী ভর্তি করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, কৃষি গুচ্ছের ভর্তি কমিটির এই সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই ন্যায়সঙ্গত নয়। কেননা একজন শিক্ষার্থী যদি মেধা তালিকায় এগিয়ে থাকে তাহলে সে মেধার ভিত্তিতে ভর্তি হবে। এটাই নিয়ম। কৃষি গুচ্ছ কর্তৃপক্ষ সেটি না করে তাদের বানানো নিয়ম শিক্ষার্থীদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। এটি অন্যায়।


সর্বশেষ সংবাদ