কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

শান্তি মিছিলে অংশ নিয়েও উপাচার্য বহাল, ক্ষোভ শিক্ষার্থীদের

কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে এম জাকির হোসেন
কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে এম জাকির হোসেন  © সংগৃহীত

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রেখে শান্তি মিছিলে সামনের সারিতে দেখা গিয়েছিল কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে এম জাকির হোসেন। গত ৪ আগস্ট বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) তিনি ‘শেখ হাসিনাতেই আস্থা’ শীর্ষক গমাধ্যমে উঠেছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। শান্তি মিছিলে অংশ নেওয়ার সে ছবিও ছড়িয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, ২০২৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর গণমাধ্যমে পাঠানো শান্তিতে নোবেল জয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসের বিচার প্রক্রিয়া স্থগিতের দাবির প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন। তিনি আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায়বিষয়ক উপকমিটির একজন সদস্য। আগস্টে ‘এক দফার কবর দে, শেখ হাসিনাতেই আস্থা’সহ তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের সমর্থনে তিনি আন্দোলন করেছিলেন। তার এ ধরনের কর্মকাণ্ড নৈতিকতা বিরুদ্ধ বলে অভিহিত করছেন শিক্ষার্থীরা।

বাকৃবির কৃষি রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী মাহামুদুর রহমান তুষার বলেন, শিক্ষকের দায়িত্ব সবসময় শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো। আমরা দেখেছি, জুলাই মাসের গণহত্যা এবং শিক্ষার্থীদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছিল। সে সময় কিছু আওয়ামীপন্থী শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। দীর্ঘ ১৫ বছরের আওয়ামী দুঃশাসনের সময় তারা সব দিক থেকে সরকারের সমর্থক হিসেবে কাজ করেছেন। শিক্ষক হিসেবে তিনি স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সমর্থনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের রক্তে যখন রাজপথ রঞ্জিত হচ্ছিল, তখনও তিনি শেখ হাসিনার পক্ষে দাঁড়িয়ে ক্যাম্পাসে ‘এক দফার কবর দে’ আন্দোলন করে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন।

কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয়। সদর উপজেলায় অব্যবহিত টেক্সটাইল মিলে অস্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রথম উপাচার্য বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম জাকির হোসেন। তিনি ২০২২ সালের ২৬ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রথম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান। এছাড়া তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদ এবং মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিনের (ভারপ্রাপ্ত) ডিনের দায়িত্ব পালন করছেন।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা চান না যে এ ধরনের শিক্ষকেরা তাদের পদে বহাল থাকুক, যেহেতু তারা তাদের নৈতিকতা হারিয়ে ফেলেছেন। তাদের সেই পদে থাকার কোনো যোগ্যতা নেই। যদি এখনও তারা সেই পদে বহাল থাকেন, তবে শিক্ষার্থীদের মনে বারবার ফ্যাসিজমের স্মৃতি ফিরে আসবে। এ ধরনের শিক্ষকদের মধ্যে যারা এখনো পদে রয়েছেন, তারা যেন নিজের ইচ্ছায় পদত্যাগ করেন। 

আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এমন নীতি-নৈতিকতা-বিবর্জিত একজন মানুষ যদি ভিসির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল থাকে, তা নতুন স্বাধীনতার সাথে বেইমানি করার শামিল। এটি শহীদের রক্তের সাথে বেইমানি করার মতো। আমরা আশা করি, তিনি খুব দ্রুত পদত্যাগ করবেন। শুধু তিনিই নন, এরকম যারা স্বৈরাচারকে সমর্থন করেছেন, প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদের পদত্যাগ করা উচিত। এ শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন। নৈতিকভাবে আপনারা পরাজিত হয়েছেন।’

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে এম জাকির হোসেন বলেন, ‘আমার এখানে কোনও শিক্ষক ও রেজিস্ট্রার নেই। আমি তো পদত্যাগ করার জন্য প্রস্তুত আছি। ২৫ অক্টোবরের কৃষিগুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার জন্যে কাজ করছি। পরীক্ষা হয়ে গেলে আর থাকব না। কোনো কারণে ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত থাকুক, এটা আমি চাই না। হুট করে যদি ভর্তি পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে পুরো দায়ভার আমার ঘাড়ে এসে পড়বে।’ 

আরো পড়ুন: এইচএসসি ফল প্রকাশের তারিখ নির্ধারণ

অধ্যাপক জাকির হোসেন আরও বলেন, ‘শান্তি সমাবেশ ছাত্রদের বিপক্ষে ছিল না। ওটা আমি আয়োজন করিনি; আয়োজন করেছেন স্থানীয় কৃষিবিদরা। আমি ময়মনসিংহে ছিলাম, তাই তারা আমাকে ডাকলে আমি গিয়েছি। আমি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ছিলাম। সেখানে যে বক্তব্য দিয়েছি, সেখানে ছাত্র হত্যার বিচার চেয়েছি এবং শান্তির আহবান করেছি। আমি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য। বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো কোনো নিয়োগ দিইনি। আমি শুধু দু’জনকে চাকরি দিয়েছি— বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের ভাই ও বোনকে।’

ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্যে কুড়িগ্রামের সবাই তাকে ভর্তি পরীক্ষার আগে পদত্যাগ না করার জন্য বলেছে জানিয়ে তিনি বলেন, তারা বলেছে আগে ভর্তি পরীক্ষা হয়ে যায়। যদি দায়িত্ব দেওয়ার মতো লোক থাকত, আমি এতদিন থাকতাম না। এখন কাজ করা খুবই কঠিন হয়ে গেছে। মন্ত্রণালয়ে আমি জানিয়ে রেখেছি, আপনারা ভিসি দিয়ে দেন। যতদিন আছি, ততদিন ভর্তি পরীক্ষার জন্য কাজ করছি।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence