বাকৃবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগের পর দেশ ছেড়েছেন মালয়েশিয়ান শিক্ষার্থী

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হারুন-অর-রশিদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও লাঞ্ছনার অভিযোগ করে দেশ ছেড়েছেন মালয়েশিয়ান এক নারী শিক্ষার্থী। ভেটেরিনারি অনুষদের প্রথম বর্ষের ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ওই শিক্ষকের প্রতিবেশী ছিলেন। বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) তিনি উপাচার্য বরাবর ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। 

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়ার নাগরিক ওই শিক্ষার্থী গত শুক্রবার বাংলাদেশ ত্যাগ করেছেন। তিনি মালয়েশিয়ায় এরই মধ্যে পৌঁছেছেন বলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। এর আগে মালয়েশিয়ান হাইকমিশন ও পুলিশের কাছেও অভিযোগ করেছেন তিনি। এরপর ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে নীরবে দেশ ছেড়ে চলে যান তিনি। 

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে ওই কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষক অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ বাকৃবির বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘সোনালি দলের’ নির্বাচিত সভাপতি। 

তদন্ত কমিটির আহবায়ক করা হয়েছে- মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুব আলম। সদস্য সচিব হয়েছে বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. শহিদুল ইসলাম। সদস্যরা হলেন অধ্যাপক ড. মনির হোসেন, অধ্যাপক ড. মিনারা খাতুন ও অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ ইকবাল।

জানা গেছে, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বাংলাদেশে মালয়েশীয় হাইকমিশনকে যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার কথা জানিয়ে প্রতিকার চান। তিনি ময়মনসিংহ সদর থানা পুলিশের কাছেও একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অভিভাবকসহ থানায় এসেছিলেন। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে বিস্তারিত জেনেছেন। তারা জানিয়েছেন বৈধ উপায়ে হাইকমিশনের মাধ্যমে লিখিত অভিযোগ করবেন।

উপাচার্যকে দেওয়া অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, ‘এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি হলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ, যিনি আমার প্রতিবেশী হিসেবে বাস করছেন। তিনি আমার বাড়িতে প্রবেশ করে আমাকে একাধিকবার যৌন হয়রানি করেছেন।’

ভুক্তভোগী ছাত্রী আরো বলেছেন, ‘তিনি প্রয়োজন ছাড়াই আমাকে মেসেজ পাঠিয়েছেন এবং রাতে অস্বাভাবিক সময়ে আমার বাসায় ঢোকার চেষ্টা করেছেন। এ ঘটনায় আমার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে এবং আমি শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। ফলে আমি পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারছি না এবং পরীক্ষায়ও অংশগ্রহণ করতে পারিনি।’

আরো পড়ুন: শিক্ষার্থীদের ‌‘মীরজাফর’ বলা চবির সেই ছাত্রলীগ কর্মীকে মারধর

ঘটনার বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদকে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে বাকৃবির ইন্টারন্যাশনাল ডেস্কের পরিচালক এবং তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মো শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানার পরেই তদন্ত কমিটি গঠন করছে। তাৎক্ষণিক তদন্তের কাজ শুরু হয়েছে এবং খুব দ্রুতই সুপারিশ আসবে। তদন্তের সাপেক্ষে দোষী হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’

তদন্ত কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. মাহবুব আলম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। আমরা যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার চেষ্টা করব।’

বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীর অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা দ্রুত একটি তদন্ত কমিটি করেছি। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।’


সর্বশেষ সংবাদ