‘জ্বর না মেপেই’ ওষুধ দেয়া হয় বাকৃবির মেডিকেলে সেন্টারে

নিয়মিত থাকেন না ডাক্তার, সঙ্কট পর্যাপ্ত ওষুধেরও

বাকৃবি হেলথ কেয়ার সেন্টার
বাকৃবি হেলথ কেয়ার সেন্টার  © টিডিসি ফটো

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য প্রতিষ্ঠিত হেলথ কেয়ার সেন্টার নানা সমস্যায় জর্জরিত রয়েছে। সময়মতো ডাক্তার না থাকা, ওষুধ না থাকা, ডাক্তারদের দূর্ব্যহারসহ নানা অভিযোগ তুলেছেন এখানে সেবা নিতে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা কিছু সমস্যা সমাধানে ইতিমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছেন। বাকি সমস্যাও দ্রুত সমাধান করতে সক্ষম হবেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ কেয়ারে সার্বক্ষণিক ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও সবসময় ডাক্তার পাওয়া যায় না। সাধারণ ওষুধগুলোও সবসময় পাওয়া যায় না। মানসম্পন্ন কোম্পানিগুলোর ওষুধ নেই বললেই চলে। যা আছে সবই নিম্নমানের কোম্পানিগুলোর।

হেলথ কেয়ারের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আমি অবগত আছি। একে একে সকল বিষয়ে সমাধান করার চেষ্টা করছি। একে একে সকল বিষয়ে সমাধান করার চেষ্টা করছি। -অধ্যাপক এমদাদুল হক, উপাচার্য, বাকৃবি

সাম্প্রতিক সময়ে ভাইরাল জ্বরের প্রকোপে পড়া অনেক শিক্ষার্থীই অভিযোগ করেছেন যে জ্বরের পরিমাণ (তাপমাত্রা) না মেপেই তাদের ওষুধ দিয়ে দেওয়া হয়। জরুরি প্রয়োজনে তাৎক্ষনিক অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায় না। বারবারই চালক সংকটের কথা শুনতে হয় তাদের।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, সাপ্তাহিকভাবে বিশেষজ্ঞ একজন ডাক্তার বসার কথা থাকলেও এখনও পর্যন্ত এরকম কোনো সেবা পাওয়া যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে বাইরের তথা আশেপাশের এলাকার মানুষদের চিকিৎসা দেওয়ার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তৎক্ষণাত চিকিৎসা পান না।

সার্বক্ষণিক ডাক্তার না থাকার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চীফ মেডিকেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. সাঈদুর রহমান বলেন, বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পক্ষ থেকে জরুরী ভিত্তিক কল আসলে তখন তাদের বাসায় গিয়ে চিকিৎসা দিতে হয়। ওই সময় কোন শিক্ষার্থী মেডিকেলে আসলে তখন ডাক্তারের সংকট হয়।

পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমাদের কাছে প্রয়োজনীয় সকল ওষুধের সংগ্রহ আছে। মাঝে বাজেট সংকটের কারণে দুই-একটি ওষুধ সরবরাহ কমানো হয়েছিল। তবে বর্তমানে প্রয়োজনের সফল ওষুধি সংগ্রহে রাখা হয়েছে।

‘‘হেলথ কেয়ারের অধীনে ৫৩ প্রকারের ট্যাবলেট, ১১ প্রকারের ক্যাপসুল, ১২ প্রকারের ইঞ্জেকশন এবং ২২ প্রকারের ড্রপ ও ক্রিম সংগ্রহে রাখা হয়। এসব ওষুধ মানসম্মত। তবে বাজেট বাড়ালে আমরা শিক্ষার্থীরে প্রয়োজনীয় আরও বেশি ওষুধ সরবরাহ করতে পারবো।’’-যোগ করেন সাঈদুর রহমান

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথকেয়ারের অধীনে থাকা অ্যাম্বুলেন্স নিয়ন্ত্রণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহণ শাখা। সাঈদুর রহমান বলেন, এখানে মেডিকেল অফিসারের কোন হস্তক্ষেপ নেই। অনেক সময় পরিবহণ শাখায় চালকের সংকটের কারণে জরুরি ভিত্তিতে সেবা দেওয়া মাঝে মধ্য সম্ভব হয়ে ওঠে না। আবার বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তারা বিনা প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্স দাবি করেন। এ সময় আমাদের করার কিছু থাকে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ কেয়ারে সার্বক্ষণিক ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও সবসময় ডাক্তার পাওয়া যায় না। সাধারণ ওষুধগুলোও সবসময় পাওয়া যায় না। -শিক্ষার্থীদের অভিযোগ

সাপ্তাহিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের ব্যাপারে সাঈদুর রহমান বলেন, আমরা বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে আলোচনা করেছি। তারা আসলে পুরো সপ্তাহেই ব্যস্ত থাকেন। কাজেই হেলকেয়ারে কাজ করতে হলে তাদের সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে ছুটির দিনে কাজ করতে অনেকেই নারাজ। এ বিষয়ে আরেকটি বড় বাধা হলো আর্থিক বরাদ্ধ।

বর্তমানে হেলথ কেয়ারের অধীনে ইসিজি, আল্ট্রাসেনোগ্রাফি, এক্সরে ও বিভিন্ন প্যাথলোজি টেস্ট চালু রয়েছে। প্যাথলজি টেস্টের মধ্যে রয়েছে- টিসি, ডিসি, এইচবি, ইএসআর, ব্লাড গ্লুকোজ, বিলিরুবিন, ক্রিয়েটিনিন, কোলেস্টেরল, লিপিড প্রোফাইল, এইচবিএএলসি, এএসও টাইটার, আরএ টেস্ট, সিআরপি, ভিডিআরএল, এইচ বিএস এজি, ওয়াইডাল, ট্রিপল এন্টিজেন, ব্লাড গ্রুপ, প্রেগনেন্সি, আইসিটি ডেঙ্গু টেস্ট। তবে এসব টেস্ট পরিচালনার জন্য দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি চীফ মেডিকেল অফিসার ডা. পার্থ সেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হেলথ কেয়ার সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সকলের জন্যই। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্বাস্থ্যসেবা পাবেন। তবে আশেপাশের এলাকা থেকে অসুস্থ কেউ আসলে মানবিকতার খাতিরে আমাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে আমাদের না করার কোন সুযোগ থাকে না। হেলকেয়ারের সার্বিক বিষয় সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। পরবর্তীতে তারা এ সকল বিষয়ের জন্য নিয়মনীতি নির্ধারণ করবেন।

এ সময় তিনি কিছু দাবি তুলে ধরে বলেন, আমাদের আরো জনবল দরকার। শুধুমাত্র ডাক্তার সংখ্যা বাড়ানোই যথেষ্ট নয়। ডাক্তারের সকল কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য নার্স, ডাক্তারের সহকারী এদেরও প্রয়োজন হয়। এছাড়া আমরা বছরে ৩৬৩ দিন ডিউটি করি। সেক্ষেত্রে আমাদের জন্য আলাদা কোন ভাতার ব্যবস্থা নাই। কোন বিশেষ সুযোগ-সুবিধাই আমরা পাই না।

ডা. পার্থ সেন বলেন, একজন ডাক্তার বা কর্মচারী যদি অসুস্থ হয়ে পড়েন, তবে তার বিপরীতে আলাদা করে কোন জনবল নেই। ২০১৯ সালের ডাক্তার সার্কুলার হলেও এখনো পর্যন্ত কোনো ডাক্তার নিয়োগ হয়নি। এই বিষয়গুলো দ্রুত সমাধান করা গেলে আরও উন্নত সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের সহ-সভাপতি মো. তারিক জামান জয় বলেন, আমরা সোমবার এক বেলার জন্য হেলথ কেয়ার বন্ধ করে রাখি। আমাদের দাবি ছিল তিনটি অ্যাম্বুলেন্স চালু করা পর্যাপ্ত পরিমাণ ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া এবং শিক্ষার্থীদের সাথে ডাক্তারের অসৌজন্যমূলক আচরণের বিচার করা। এ সময় অ্যাম্বুলেন্সের বিষয়টি উপাচার্য তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান করে দিয়ে বলেন তিনটি অ্যাম্বুলেন্স চালু রাখা হবে।

আমাদের আরো জনবল দরকার। শুধুমাত্র ডাক্তার সংখ্যা বাড়ানোই যথেষ্ট নয়। ডাক্তারের সকল কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য নার্স, ডাক্তারের সহকারী এদেরও প্রয়োজন হয়। -ডা. পার্থ সেন, ডেপুটি চীফ মেডিকেল অফিসার

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, হেলথ কেয়ারের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আমি অবগত আছি। একে একে সকল বিষয়ে সমাধান করার চেষ্টা করছি। এর মধ্যে অ্যাম্বুলেন্সের বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে।

সংকট সমাধানের আশ্বাস দিয়ে তিনি আরও বলেন, ডাক্তার ও ডাক্তারের সাহায্যকারীদের নিয়োগের বিষয়টি একটু সময় সাপেক্ষ। আমরা ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নিয়োগের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী বাজেটের তুলনায় অর্থ বরাদ্দ বাড়াতে হবে।


সর্বশেষ সংবাদ