এখনও শেকৃবির আচার্য সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ!
- আব্দুল কবীর ফারহান
- প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:২৩ PM , আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৩৪ PM
দেশের সাংবিধানিক আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ কর্তা অর্থাৎ রাষ্ট্রপতিই হবেন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর আচার্য। সে হিসেবে চলতি বছরের এপ্রিলের শেষের দিকে দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করা বর্তমান রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন বর্তমানে দেশের সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য।
গত ২৪ এপ্রিল থেকে শপথ গ্রহণের পর তিনি ৪ মাস ২০ দিন দায়িত্ব পালন করেছেন রাষ্ট্রপতি। তবে নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে আচার্য হওয়ার ১৪৩ দিনেও পার করলেও রাজধানীর শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) উপেক্ষিতই থেকে গেলেন নতুন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। শেকৃবি অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এখনও আচার্য হিসেবে দেখানো হচ্ছে সাবেক রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদকে।
শেকৃবির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা গেছে, চ্যান্সেলর বা আচার্যের স্থলে এখনও রয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের নাম। সাবেক রাষ্ট্রপতির নামসহ চ্যান্সেলরের প্রাসঙ্গিক সকল তথ্যই রয়েছে ওয়েবসাইটটিতে। নিয়মিত সাম্প্রতিক নিত্য নতুন বিভিন্ন তথ্য ওয়েবসাইটটিতে দেওয়ার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কর্মকাণ্ডের ছবি এবং নোটিশ সংক্রান্ত নানা ধরনের নতুন তথ্য সংযুক্ত হতে দেখা গেলেও নতুন চ্যান্সেলরের তথ্য সংযুক্তির বিষয়টি এই ওয়েবসাইটে গুরুত্বহীন ভাবেই পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ সাত কলেজ ছাত্রলীগের কী হবে—অপেক্ষা প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের
দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী, প্রজাতন্ত্রে রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হইবেন এবং তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ডিগ্রি ও সম্মানসূচক ডিগ্রি প্রদানের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করিবেন। তবে শর্ত থাকে যে, আচার্য অভিপ্রায় ব্যক্ত করিলে, কোনো সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করিবার জন্য অন্য কোনো ব্যক্তিকে মনোনয়ন প্রদান করিতে পারিবেন। পাশাপাশি আচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনো ঘটনার তদন্ত করাইতে পারিবেন এবং তদন্তের প্রতিবেদন আচার্যের নিকট হইতে সিন্ডিকেটে পাঠানো হইলে সিন্ডিকেট সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিয়া গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন আচার্যের নিকট প্রেরণ করিবে
এছাড়াও আচার্য আইন ও সংবিধি দ্বারা অর্পিত ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার পাশাপাশি সম্মানসূচক ডিগ্রি প্রদানের প্রতিটি প্রস্তাবে তার অনুমোদন থাকতে হবে। একই সাথে আচার্যের নিকট যদি সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হয় যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম গুরুতরভাবে বিঘ্নিত হইবার ন্যায় অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করিতেছে, তাহা হইলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু রাখিবার স্বার্থে প্রয়োজনীয় আদেশ ও নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবেন এবং অনুরূপ আদেশ ও নির্দেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য বাধ্যতামূলক হইবে এবং উপাচার্য উক্ত আদেশ ও নির্দেশ কার্যকর করার আইনি সুযোগও রাখেন।
দেশে এর আগে অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ দেশে দুইবারের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন। দেশের ২০ এবং ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্বে থাকায় দীর্ঘদিন সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ২৪ এপ্রিল নতুন রাষ্ট্রপতির শপথ পাঠের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব সম্পন্ন করে বঙ্গভবন থেকে বিদায় নিয়েছেন আব্দুল হামিদ। ২২তম রাষ্ট্রপতি ও নতুন আচার্য হয়ে ৪ মাসের অধিক সময় ধরে দায়িত্ব পালনরত থেকেও শেকৃবিতে উপেক্ষিত মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংযুক্ত হলেও ওয়েবসাইটে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সর্বোচ্চ ব্যক্তির তথ্য হালনাগাদে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে শেকৃবি প্রশাসন সংশ্লিষ্টরা।
এই বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তা ব্যক্তিরা দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের সর্বোচ্চ নির্বাহী দায়িত্ব উপাচার্য নিয়োগের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মূল সনদ নির্ভর করে একজন আচার্যের উপর। আচার্য সমাবর্তন করে গেলেই শিক্ষার্থীরা মূল সনদ তুলতে পারে। সেখানে এমন গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তির তথ্যই হালনাগাদ করার সময় পাচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা। এটি আমাদের জন্য লজ্জার বিষয়। এছাড়াও প্রশাসনের এই কাজকে দায়িত্বজ্ঞানহীন আখ্যা দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বিষয়টি ভুলে আড়ালে থেকে গেছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার শেখ রেজাউল করিম। শুরুতে তিনি ওয়েবসাইটে কোন সমস্যা থাকতে পারে বলে মন্তব্য করলেও পরে ভুলের বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমরা এই বিষয়ে শীঘ্রই উদ্যোগ গ্রহণ করবো।