৪১তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডার হওয়ার গল্প শোনালেন বাকৃবির মশিউর 

৪১তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত মো. মশিউর রহমান
৪১তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত মো. মশিউর রহমান  © টিডিসি ফটো

ছোটবেলায় হাইস্কুলে পড়াকালীন সময়ে স্কুল পালিয়ে বন্ধুদের সাথে ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস মাঠে খেলাধুলা করার সময় পুলিশের এসপিদের সম্মান করতে দেখতাম। বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে পুলিশ অফিসাররা ইউনিফর্ম পরে প্রধান অতিথির চেয়ারে বসতেন, তখন তাদের দেখে খুবই ভালো লাগতো। সেখান থেকে ইউনিফর্ম জবের প্রতি দূর্বলতা। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাইদের বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়া দেখে বিসিএস পুলিশ ক্যাডার হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া’। এভাবেই নিজের স্বপ্নের কথা বলছিলেন মো. মশিউর রহমান। তিনি ৪১তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। যেখানে তার মেধাক্রম ছিলো ৩২। 
 
মো. মশিউর রহমানের জন্ম ময়মনসিংহ জেলার সদর উপজেলার ভাবখালী গ্রামে। বাবা ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার জনতা মহাবিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক। মা গৃহিনী। ২০১০ সালে গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল থেকে এসএসসি এবং ২০১২ সালে আনন্দ মোহন কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন মশিউর। এরপর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। 

২০১৮ সালে স্নাতকের ফলাফল যেদিন প্রকাশ করা হয় সেদিন থেকেই বিসিএস প্রস্তুতির সূচনা করেন মশিউর। হলের বড় ভাইদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করেন তিনি। তারপর ৪১ তম বিসিএস এর সাকুর্লার প্রকাশ করা হলে আবেদনের সময় প্রথম পছন্দ হিসেবে বিসিএস পুলিশ রাখেন তিনি। একে একে প্রিলি, রিটেন ও ভাইভায় উত্তীর্ণ হন। 

মশিউর বলেন, প্রস্তুতির শুরু থেকে আমার দিক থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, কিন্তু প্রত্যাশা রেখেছি সর্বনিন্ম। সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস ছিল আমার রিজিক যদি লেখা থাকে তবে আমি পারবো। 

বিসিএস ক্যাডার হওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে মশিউর বলেন, চাকরির সুবাদে শ্রীমঙ্গল থাকায় ফলাফল প্রকাশের দিন অফিস থেকে বাসায় ফিরে ফলাফলে নিজের রোল পুলিশ ক্যাডারে দেখে চোখে পানি চলে আসে। আমার বাবা-মার নিরলস পরিশ্রম, আমার একাগ্রতা, সকলের দোয়া এবং পরম করুণাময়ের করুণায় আমার এ সাফল্যের মূলমন্ত্র। রেজাল্ট শোনার পর আমার বাবা-মার চোখে মুখে যে আনন্দ আমি দেখেছি এবং আমার জন্য তারা যে সম্মানিত হয়েছেন এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কিছু হতে পারে না । 

তিনি বলেন, সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস রেখে ধৈর্য নিয়ে একাগ্রতার সাথে অনুশীলন করলে সফলতা আসবেই। অনেকের শুধু বিসিএস এর নতুন বই কেনার নেশা থাকে কিন্তু পড়ার ইচ্ছা থাকে না। প্রত্যেক বিষয়ের জন্য ৪/৫ টা বই না পড়ে ভালো মানের একটি বা দুটি বই বার বার পড়া উচিত। 

মশিউর প্রিলি, রিটেন ও ভাইভার জন্য সবকিছুই লিখে নোট করে পড়তেন। এতে পরীক্ষার আগের রাতে রিভিশন দেয়া সহজ হতো। কারণ প্রস্তুতি যতই ভালো থাকুক পরীক্ষার আগে ভা্লো করে রিভিশন দিতে না পারলে ভালো ফলাফল আশা করা কঠিন। তাই নিজের মত করে নিজে হ্যান্ড নোট তৈরী করে পড়লে সুবিধা হবে। আর বিসিএস একটা লম্বা প্রক্রিয়া হওয়ায় অবশ্যই প্ল্যান বি রাখা উচিত প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর। এমনটাই পরামর্শ তার।

মো. মশিউর রহমান সততা ও দক্ষতা আর দেশপ্রেমের সাথে দায়িত্ব পালন করতে চান। তিনি বলেন, দেশের এবং জনগণের সেবা করার যে সুযোগ পেয়েছি সকলের দোয়ায় তা যেন আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে করতে পারি। অহংকার যেন কখনো আমাকে স্পর্শ করতে না পারে। বিনয়ী থেকে নিজের কর্তব্য পালন করতে পারি সে ব্রত নিয়েই পুলিশ সার্ভিসের নতুন জীবন শুরু করার প্রহর গুনছি।   


সর্বশেষ সংবাদ