ভর্তিচ্ছুদের পছন্দ টেক্সটাইল কলেজ, কেন?

সম্প্রতি বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে
সম্প্রতি বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে  © টিডিসি ফটো

সম্প্রতি বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজসমূহে চার বছর মেয়াদি বিএসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে লেভেল-১ এর ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছে। এর মাধ্যমে আটটি কলেজে ভর্তি করা হচ্ছে। জিপিএর শর্ত কিছুটা শিথিল করায় আরও বেশি শিক্ষার্থী এতে ভর্তির সুযোগ পাবেন।

টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পেশাটি বাংলাদেশে বেশ সম্মানজনক হিসেবেই বিবেচিত। এ কারণে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ এই বিষয়ে ভর্তি হতে চান ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে। কারণ দেশে বিশাল গার্মেন্টস খাত ও এ সংশ্লিষ্ট ইন্ডাস্ট্রি রয়েছে। একটি ভুল ধারণা প্রচলিত আছে যে, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে শুধু কাপড় বানানো শেখানো হয়। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। এতে মূলত টেক্সটাইলের মৌলিক বিষয় পড়ানো হয়।

তন্তু থেকে সুতা তৈরি, ফেব্রিককে আরামদায়ক করার পদ্ধতি, অদাহ্য, তাপরোধী, রাসায়নিকরোধী কিংবা পানিরোধী ফেব্রিকের সম্ভাবনা ও ব্যবহার পড়ানো হয় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। শুধু প্রকৌশল নয়, দৈনন্দিন জীবনের পোশাক থেকে শুরু করে বিশেষায়িত সবকিছুই টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অন্তর্ভুক্ত। যেমন অগ্নিনির্বাপণকর্মীদের জন্য জ্যাকেট কিংবা মহাকাশচারীদের স্যুট। শত শত কোটি মানুষের জন্য টেক্সটাইল সেক্টরের জোগান দিতে পরিবেশের ওপর যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে, তা  প্রতিরোধ করাও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অংশ।

সম্ভাবনা: নিত্যনতুন ডিজাইনের ফ্যাশন উদ্ভাবন থেকে শুরু করে যন্ত্র রক্ষণাবেক্ষণ বা পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করাও পড়ানো হয় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। এখান থেকে পাস করে বের হওয়া শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বলই বলা জলে। এই খাতা প্রতিনিয়ত বড় হচ্ছে। মেডিকেলের উপকরণ, অটোমোবাইল, মহাকাশ, জিও টেক্সটাইলসহ বিভিন্ন খাতে টেক্সটাইলের ব্যবহার বাড়ছে। মাইক্রোচিপ থেকে শুরু করে বিশাল ভবন, সেতু, অস্ত্রের কাঠামো, বুলেটরোধী পোশাকও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ফাইবার দিয়ে করা হচ্ছে।

দেশে চাকরির বাজার: বাংলাদেশে চাহিদার তুলনায় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারের অর্ধেকও আমরা জোগান দিতে পারছি না। এ কারণে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পাস করে খুব সহজেই নিজেকে পোশাকশিল্পে জড়াতে পারেন। শিক্ষার্থীরা সাধারণত দুই ধরনের চাকরিতে অভ্যস্ত। কারখানায় উৎপাদন ও বায়িং হাউসের মার্চেন্ডাইজার। মার্চেন্ডাইজারদের বেতন তুলনামূলকভাবে বেশি হলেও উৎপাদনে জড়িতরা অভিজ্ঞ হওয়া শুরু করলে চাহিদা বাড়তে থাকে। তখন বেতনও বাড়ে।

উদ্যোক্তা হওয়ার অপার সম্ভাবনা: টেক্সটাইল মিল, কারখানা, বায়িং হাউস, মানবসম্পদ, ফ্যাশন ডিজাইনিং, বিপণনে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য দরজা খোলা। ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন কিংবা মেশিন ডিজাইন, মেশিন রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা অন্যান্য ক্ষেত্রেও অবদান রাখতে পারেন। কেউ যদি উদ্যোক্তা হতে চান, তাদের জন্য রয়েছে বিশাল সুযোগ। দেশে টেক্সটাইল যন্ত্রের নকশা কেউ করে না। যন্ত্রের জন্য বিদেশিদের ওপর নির্ভর করতে হয়।

কোনো যন্ত্র নষ্ট হয়ে গেলে বিদেশি কোম্পানি থেকে লোক এসে ঠিক করছেন। সব মিলিয়ে ২০-২৫ দিনের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিদেশিদের উচ্চ পারিশ্রমিক তো আছেই। দেশে এখনো তৈরি পণ্যের মান রক্ষণাবেক্ষণে নিজস্ব যন্ত্র বা প্রতিষ্ঠান নেই। যা আছে, সবই বিদেশি। সেখানে দেশের প্রকৌশলীরাই কাজ করলেও মালিক বিদেশিরা। নিজেদের তৈরি কোনো ভালো মানের ডাইস কেমিক্যাল নেই, আমদানি করে কাজ চলছে। তরুণ উদ্যোক্তারা চাইলে এ নিয়ে ভাবতে পারেন।

বিদেশে সম্ভাবনা: টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক শেষ করে অনেকে দেশের বাইরে পড়তে যাচ্ছেন। স্নাতকোত্তর, পিএইচডি করে দেশে ফিরে চাকরিতে যোগ দিচ্ছেন। অনেকে বিদেশে চাকরি খুঁজে নিচ্ছেন। বিসিএসও দিয়ে ভালো করছেন অনেকে।

আরো পড়ুন: টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সংশোধিত ভর্তি বিজ্ঞপ্তি, কমেছে জিপিএর শর্ত

যাদের জন্য টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং: টেক্সটাইল খাতে সফল হতে চাইলে চ্যালেঞ্জটা বেশি নিতে হয়। যাঁরা চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসেন, তাঁদেরই এ খাতে আসা উচিৎ। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বড় অংশজুড়ে আছে রসায়ন। যন্ত্রপাতির জন্য প্রয়োজন পদার্থবিজ্ঞান। রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান পড়তে কিংবা ভাবতে যাঁদের ভালো লাগে, তাঁরাও পড়তে পারেন। বিজ্ঞানের বিষয়ে যাঁদের ভীতি নেই, তাঁদের জন্য টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং খুব ভালো একটি বিষয়।

ভর্তির যোগ্যতা: আবেদনকারীকে অবশ্যই জন্মসূত্রে অথবা নাগরিকত্ব গ্রহণসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। আবেদনকারীকে বাংলাদেশের যে কোন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড/মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড/কারিগরি শিক্ষা বোর্ড হতে বিজ্ঞান বিভাগে ২০১৮ অথবা ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি/সমমানের পরীক্ষায় গ্রেডিং পদ্ধতিতে ৫.০০ এর স্কেলে জিপিএ ৪.০০ পেয়ে পাস অথবা বিদেশি শিক্ষা বোর্ড হতে সমমানের পরীক্ষায় সমতুল্য গ্রেড পেয়ে পাশ হতে হবে।

আবেদনকারীকে বাংলাদেশের যে কোন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড/মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড/কারিগরি শিক্ষা বোর্ড হতে বিজ্ঞান বিভাগে ২০২০ অথবা ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত এইচএসসি/সমমানের পরীক্ষায় গ্রেডিং পদ্ধতিতে ৫.০০ এর স্কেলে জিপিএ ৪.০০ পেয়ে পাস অথবা বিদেশি শিক্ষা বোর্ড হতে সমমানের পরীক্ষায় সমতুল্য গ্রেড পেয়ে পাস হতে হবে।

এছাড়া আবেদনকারীকে এইচএসসি পরীক্ষায় গণিত, পদার্থ ও রসায়নে আলাদাভাবে ন্যূনতম ৩.৫০ গ্রেড পয়েন্ট এবং ইংরেজিতে ৩.০০ গ্রেড পয়েন্টসহ উল্লিখিত বিষয়সমূহে মোট গ্রেড পয়েন্ট কমপক্ষে ১৫.৫০ থাকতে হবে। আগের বিজ্ঞপ্তি ১৬.৫০ চাওয়া হয়েছিল।

জিসিই ও-লেভেল এবং এ-লেভেল পাশ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ও-লেভেল পরীক্ষায় কমপক্ষে ৫টি পেপারে গড়ে বি এবং এ-লেভেল পরীক্ষায় পদার্থ, রসায়ন ও গণিতে এ বি-গ্রেড পেয়ে পাস করতে হবে। কোনও বিষয়ে ডি-গ্রেড গ্রহণযোগ্য হবে না। ইকুইভ্যালেন্স সার্টিফিকেট প্রাপ্তির জন্য বস্ত্র অধিদপ্তরের পরিচালকের (শিক্ষা) এর নিকট নগদ ১৫০০ (এক হাজার পাঁচশত) টাকা দিয়ে ও-লেভেল এবং এ-লেভেল পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ড, নম্বরপত্র ও সার্টিফিকেটের সত্যায়িত অনুলিপিসহ, মহাপরিচালক, বস্ত্র অধিদপ্তর বরাবরে ২০ আগস্টের মধ্যে আবেদন করতে হবে।


সর্বশেষ সংবাদ