সব বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার সুযোগ দাবিতে অনশনে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২২, ০৯:২০ AM , আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২২, ০৯:৪৪ AM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ রাখার দাবিতে সমাবেশ ও অনশন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ২০২০ সালের এইচএসসি উত্তীর্ণরা। আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি এই কর্মসূচি পালন করবেন শিক্ষার্থীরা।
দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ দাবিতে আন্দোলনরতদের একাধিক সদস্য দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তারা বলেন, আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সভা করে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনের পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেছি। সমাবেশের সম্ভাব্য স্থান ঠিক করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা। এছাড়া অনশনসহ কর্মসূচির বিস্তারিত আজ শনিবার রাতের মধ্যে সবাইকে জানিয়ে দেয়া হবে।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তারা বলেন, সবাই প্রস্তুতি নিতে থাকুন। ৩ তারিখে কোনো বাঁধা বিপত্তি না থাকে তাহলে আমরা সুশৃঙ্খলভাবে ওইদিনই আমাদের দাবি আদায় করে নিব। সবাই দোয়া রাখবেন এবং আমাদের পাশে থাকবেন। জয় আমাদের হবেই।
আরও পড়ুন: ঢাবি হলের অপরিচ্ছন্ন ও অপুষ্টিকর খাবারে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি
এদিকে ঢাবিতে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ রাখার পক্ষে ৮টি যুক্তি দেখিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। নিচে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পাঠকদের জন্য শিক্ষার্থীদের যুক্তিগুলো তুলে ধরা হলো-
১) একবার সুযোগ দিয়ে সঠিকভাবে মেধা যাচাই সম্ভব না। এরকম হলে পৃথিবীতে কোন মেধাবী তৈরি হতো না। ইতিহাসে দেখা যায় অনেক মেধাবীরাই কোন না কোনভাবে প্রথমে ব্যর্থ হয়েছেন। বিশ্বের দিকে না তাকিয়ে আমরা যদি দেশের জ্ঞানী গুনী প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের দিকে তাকাই তাহলেই দেখতে পাবো সবার সফলতার পেছনে অনেক ব্যর্থতা ছিলো। কিন্তু তাঁদের পরবর্তীতে সুযোগ না দিলে মেধা প্রমাণ করতে পারতোনা। তাই প্রতিটি ছাত্রেরই নিজের মেধার সঠিক যাচাইয়ের সুযোগ পাওয়া উচিত।
২) ইতিমধ্যে শিক্ষামন্ত্রী এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগণ দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার দাবিকে যৌক্তিক বলে উল্লেখ করেছেন যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তাঁরা মনে করেন দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেয়া একজন শিক্ষার্থীর অধিকার, কোন বিশ্ববিদ্যালয়ই সে অধিকার থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের বঞ্চিত করতে পারেনা। তাই সিদ্ধান্তগুলো পুনর্বিবেচনা করা দরকার।
৩) এই বছর প্রথমবার গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হয়েছে এবং আয়োজক কমিটি নিজেরা অনেক ভুলত্রুটি স্বীকার করে বলেছেন পরেরবার আরও সুন্দর করে গুচ্ছ পদ্ধতি আয়োজন করবেন। শিক্ষকরা যদি প্রথমবার কোনকিছুতে ভুল করে দ্বিতীয়বার সংশোধনের সুযোগ পায় তাহলে ছাত্ররাও নিশ্চয়ই দাবি করতেই পারে নিজেদের ভুলগুলো সংশোধন করার।
৪) বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলকে বিশ্বমানের হতে হলে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মতোই শিক্ষার্থীদের একাধিকবার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ দিতে হবে। যেটার উদাহরণ আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের আইআইটির দিকে তাকালেই পাওয়া যাবে, জাপানে ৭ বার পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা যায়। এছাড়াও একাধিকবার সুযোগ আছে হার্ভাদ, এমআইটির মত শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। অথচ আমাদের দেশের শীর্ষস্থানীয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সুযোগ না থাকা শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে অন্যতম বাঁধা।
আরও পড়ুন: ২৮৭ যাত্রীর ২৭৩ জনই বাংলাদেশি, সাতজনের মৃত্যু
৫) যে কারণগুলো দেখিয়ে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা বন্ধ করা হয়েছিলো তার মধ্যে অন্যতম ছিল অনেক শিক্ষার্থী দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিয়ে বিভাগ পরিবর্তন করে, যার কারণে সিটগুলো নষ্ট হয়ে যায় এবং এতে দেশ ও জাতির ক্ষতি হয়। কিন্তু এটা একটা প্রকৃতিরই নিয়ম। আমরা সবাই ভালো কিছুর সুযোগ সবসময়ই খুঁজি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক যদি হার্ভার্ডের শিক্ষক হবার সুযোগ পায় আমরা আশা করি সেই শিক্ষকও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে যাবে। তাই বলে তো আমরা তাকে সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করতে পারিনা। আবার ছাত্রদের দিক থেকে বিবেচনা করলে দেখা যায় একজন স্টুডেন্ট তাঁর নিজের পছন্দের সাবজেক্টে ভর্তি হতে না পারায় সে আবার পরীক্ষা দিয়ে যোগ্যতা প্রমাণ করেই তাঁর পছন্দের ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হতে যায়। আগের ডিপার্টমেন্টে পড়ে আনন্দ পায়না বলেই তো সে আবার সংগ্রাম করার চেষ্টা করে।
আমরা মাঝে মাঝে দেখি একাডেমিক লাইফ নিয়ে হতাশার কারণে আমাদের কিছু শিক্ষার্থী আত্মহত্যার মত জঘন্য পথ বেছে নেয়। তাই তাঁর কাছে যদি বেটার অপশন খোঁজার সুযোগ থাকে তাহলে হয়তো সে আনন্দ নিয়ে পড়ে তাঁর জীবনটা কাটাতে পারবে। তাই আমরা মনে করি যে যুক্তিটি প্রধান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিলো সেই বিষয়টা পুনর্বিবেচনা করা দরকার। আবার দেখা যায় গ্রাজুয়েশনের পরপরই অনেক শিক্ষার্থী দেশের বাইরে চলে যায় এবং এদের বিরাট একটা অংশ আর দেশে ফিরে আসেনা। এই মেধা পাচারের মাধ্যমেও তো দেশ ও জাতির বিরাট ক্ষতি হচ্ছে। সেই ক্ষতিটা নিশ্চয়ই জাতির জন্য আরও অনেক বেশি সমস্যাদায়ক। আর সে সমস্যা সমাধানের জন্য বিদেশে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ বন্ধ করে দেয়াটা কি যুক্তিযুক্ত?
৬) অন্য আরেকটা কারণ বলা হয়েছিলো যে দ্বিতীয়বার পরীক্ষার সুযোগ দিলে প্রথমবারের পরীক্ষার্থীদের ক্ষতি হবে। কিন্তু আমরা যদি মেডিকেল পরীক্ষা পদ্ধতি অনুসরণ করি তাহলেই আশা করি এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। মেডিকেলের মতো এখানেও দ্বিতীয়বার পরীক্ষার্থীদের থেকে কিছু নম্বর কর্তন করে তাদেরকে সুযোগ দেয়া যায়। কিংবা শিক্ষকরা চিন্তা-ভাবনা করে আরও ভালো কোন সমাধান খুঁজে নিতে পারেন। মাথাব্যাথার জন্য একেবারে মাথা কেটে ফেলা নিশ্চয় সঠিক কোন সমাধান হতে পারেনা।
৭) বাংলাদেশের বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের উচ্চশিক্ষার একমাত্র আশা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। প্রায় বেশিরভাগেরই সামর্থ্য নেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ নেয়ার। অসুস্থতা, দুর্ঘটনা, পারিবারিক/ব্যক্তিগত সমস্যা অথবা সামান্য ভুল বা দুর্ভাগ্যবশত তাদের এই সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার অর্থ সারাজীবনের দেখে আসা স্বপ্নের পরিসমাপ্তি। এত বছর, এত শ্রম, অর্থ ব্যয় করার পর উচ্চশিক্ষা অর্জনের সুযোগ একটিমাত্র পরীক্ষায় শেষ হয়ে গেলে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী পারিবারিক, সামাজিক চাপে পড়ে মানসিকভাবে এতটাই ক্ষতিগ্রস্থ হয় যে, তাদের দ্বারা জীবনের সম্পূর্ণ নতুন লক্ষ্য তৈরি করে এগিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন: ‘কাঁচা বাদাম’ গানে বিমানে নেচে মাতালেন বিমানবালা
৮) ছোটবেলা থেকে আমরা শিক্ষক মণ্ডলীদের কাছ থেকে শিখে এসেছি “একবার না পারিলে দেখ শতবার” কিন্তু উক্তিটি প্রয়োগের সুযোগ আমরা পাচ্ছিনা আমাদের দেশের এই শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠে। রবার্ট ব্রুসের গল্প শুনিয়ে আমাদেরকে বড় করে এখন যদি যুদ্ধ করার সুযোগই বন্ধ করে দেয়া হয় তাহলে সে শিক্ষার মূল্য কি? এটাতো এক ধরণের অধিকার হরণ করে নেয়ার মত অবস্থা।
প্রসঙ্গত, দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ রাখলে অনেক মেধাবী ছাত্র ঢাবিতে পড়ার সুযোগ পাবেন না- এ ধারণা থেকে ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর ঢাবি কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করে। ঢাবির এ সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তিচ্ছুরা তখন আন্দোলন করেছিলেন। এছাড়া ঢাবি কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে ২৬ জন অভিভাবক আদালতে রিটও করেছিলেন।