চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা হবে ‘অত্যন্ত মূর্খতা’: ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী
- টিডিসি ডেস্ক:
- প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৩৬ PM , আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৩৬ PM

যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী র্যাচেল রিভস বলেছেন, ব্রিটেন যদি চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে, তবে তা হবে ‘অত্যন্ত মূর্খতা’। একইসাথে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেইজিংকে একঘরে করার প্রচেষ্টাকেও তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন এবং চীনের সাথে দূরত্ব তৈরির পরিবর্তে সম্পর্ক আরও জোরদার করার কথা বলেন।
তিনি চীনা ফাস্ট ফ্যাশন কোম্পানি শিন- কে লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্তির পক্ষে মত দেন এবং চীনের গুপ্তচরবৃত্তির শঙ্কা থাকা সত্ত্বেও তাদের তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়িতে চড়তে তিনি আপত্তি করবেন না বলে জানান।
ট্রাম্পকে খুশি করতে তিনি চীনের সঙ্গে সম্পর্ক কমাতে প্রস্তুত কি না, এমন প্রশ্নে রিভস বলেন ‘চীন হলো বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখাটা হবে অত্যন্ত মূর্খতা। এই সরকারও এমনটাই মনে করে।’
চীনের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতের চেষ্টা
রিভসের এই মন্তব্য ইঙ্গিত দেয় যে তিনি ব্রিটিশ স্টিল নিয়ে উদ্ভূত দ্বন্দ্বের পরেও বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ। তবে আগামী সপ্তাহে তার যুক্তরাষ্ট্র সফর তার এই অবস্থানের কারণে ট্রাম্পের সাথে তার বিরোধ বাঁধতে পারে। সেখানে যুক্তরাজ্য-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে রিভস আরও জানান, ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়তে চাওয়া উদ্যোক্তাদের তিনি (অর্থমন্ত্রী) ব্রিটেনে স্বাগত জানাবেন। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন তাদের মিত্রদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চায় যাতে তারা চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক সীমিত করে।
রিভস বলেন, ‘এই বছর আমি চীনে গিয়েছিলাম অর্থনৈতিক ও আর্থিক সংলাপের অংশ হিসেবে। আমার সঙ্গে ছিল এইচএসবিসি, লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, প্রুডেনশিয়ালসহ ইউকের বড় আর্থিক সংস্থাগুলো। আমরা সেখানে ব্রিটিশ ব্যবসাগুলোর জন্য আরও লাইসেন্স, কোটা এবং ৬০০ মিলিয়ন ইউরোর একটি চুক্তির জন্য কাজ করেছি।’
তিনি স্পষ্ট করে বলেন, এই ধরনের উদ্যোগ ব্রিটেনের জাতীয় স্বার্থের মধ্যে পড়ে এবং এমন দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি বিশ্বের যেকোনো দেশের সঙ্গে আলোচনা করবেন।
লেবার পার্টি সরকার গঠনের পর থেকে প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার নেতৃত্বে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে অনেক মন্ত্রী চীন সফর করেছেন। যার মধ্যে রয়েছেন রিভস, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি, জ্বালানিমন্ত্রী এড মিলিব্যান্ড এবং বাণিজ্যমন্ত্রী ডগলাস আলেকজান্ডার।
এদিকে চীনা ফ্যাশন কোম্পানি শিন- কে লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হওয়া নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, রিভস সমর্থন জানান। তিনি বলেন, ‘এই ধরনের সিদ্ধান্ত এফসিএ ও লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জের উপর নির্ভর করে। যাদের খুব কঠোর নিয়মনীতি রয়েছে। কিন্তু আমরা অবশ্যই চাই নতুন কোম্পানিগুলো আমাদের স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হোক।’
ব্রিটিশ স্টিল ও নিরাপত্তা ইস্যু
চীনা বিনিয়োগ সংস্থা জিংয়ে ব্রিটিশ স্টিলের স্কানথর্প প্ল্যান্টের দুইটি ব্লাস্ট ফার্নেস বন্ধ করতে চেয়েছিল, যার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার কোম্পানিটির নিয়ন্ত্রণ নেয়।
রিভস বলেন ‘এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কারণ এটি আমাদের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর অংশ।’ এছাড়াও ‘সাইজওয়েল স ‘ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প থেকেও চীনা অর্থায়নকে বাদ দেওয়া হয়েছে। চীনা দূতাবাস এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলে, ‘কিছু ব্রিটিশ এমপিরা উদ্ধত, অজ্ঞ এবং বিকৃত মানসিকতা সম্পন্ন।’
এদিকে গত শুক্রবার ট্রাম্প এবং কেয়ার স্টারমারের মধ্যে একটি ফোনালাপ হয়, যেখানে বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা হয় এবং ইতিবাচক অগ্রগতির ইঙ্গিত মেলে। আগামী সপ্তাহে রিভস হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং যুক্তরাজ্য-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করবেন।
তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের চাপ থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাজ্য এখনও চায় ১০% আমদানি শুল্ক সরিয়ে ফেলা হোক। রিভস যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় খাদ্য নিরাপত্তা মান বজায় রাখার সিদ্ধান্তের পক্ষে বলেন. ‘চলুন স্পষ্ট হই, আমাদের খাদ্য ও কৃষিনীতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতোই।’
উদ্যোক্তাদের স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, যে-সব উদ্যোক্তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে চলে যেতে চাচ্ছেন, তাদের তিনি ব্রিটেনে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, ‘আমরা সর্বদা বৈশ্বিক প্রতিভাকে ব্রিটেনে স্বাগত জানাই।’
প্রাক্তন ব্রিটিশ কূটনীতিক লর্ড ম্যান্ডেলসনের বিখ্যাত উক্তির আলোকে তিনি বলেন, ‘আমি চাই ব্রিটেন হোক বিশ্বের সেরা স্থান যেখানে একজন ব্যবসায়ী ব্যবসা শুরু করতে এবং বড় হতে পারেন। তারা যেন এখানে কর দেন, এবং ব্রিটিশদের চাকরি দেন—আমার মনে হয় এতে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। আমার তো একেবারেই নয়।’