হত্যা নয়, আত্মহত্যাই করেছিলেন ঢাবি ছাত্রী মেঘলা

এলমা চৌধুরী মেঘলা
এলমা চৌধুরী মেঘলা  © ফাইল ছবি

শরীরে প্রচুর আঘাতের চিহ্ন নিয়ে মারা যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নৃত্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী এলমা চৌধুরী মেঘলা। গত বছরের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে এ ঘটনার পর অভিযোগ উঠেছিল, তাকে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছিল।

প্রায় চার মাস তদন্তের পর ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) জানায়, মেঘলাকে হত্যা করা হননি, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। স্বামী-শ্বশুর-শাশুড়ির অসৌজন্যমূলক আচরণ ও মারধর সহ্য করতে না পেরে তিনি করেন। তাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিয়েছেন স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ি। এ মামলায় যেকোনো দিন আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেবে ডিবি।

ডিবির গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান বলেন, ডিজিটাল-ফরেনসিক প্রমাণের পাশাপাশি আসামি ও অন্য সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ থেকে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, মেঘলা আত্মহত্যা করেছেন। তাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিয়েছেন স্বামী ইফতেখার আবেদীন, শাশুড়ি শিরিন আমিন ও শ্বশুর মো. আমিন। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তিনি আত্মহত্যা করেন।

আরও পড়ুন: ঢাবি ছাত্রী মেঘলাকে হত্যার অভিযোগ

প্রবাসী স্বামী ইফতেখার আবেদীন  কানাডা থেকে দেশে ফেরার তিন দিনের মাথায় গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর মেঘলার মৃত্যু হয়। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের দাগ ছিল। তার  মৃত্যুর এক দিন পর বাবা সাইফুল রাজধানীর বনানী থানায় হত্যা মামলা করেন। এতে মেঘলার স্বামী, শাশুড়ি ও শ্বশুরকে আসামি করা হয়। এই তিনজন পারস্পরিক যোগসাজশে মেঘলাকে হত্যা করেছেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।

আরও পড়ুন: ফেসবুকে পরিচয়-প্রেম, বিয়ের ৬ মাস না যেতেই লাশ হলেন ঢাবি ছাত্রী

সুরতহাল প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে মেঘলার বাবা সাইফুল মামলার এজাহারে লেখেন, মেঘলার নাকে, ওপরের ঠোঁটে, ঘাড়ে, গলার উপরিভাগে থুতনিতে, পিঠের ডান পাশে, দুই হাতে, দুই পায়ের বিভিন্ন জায়গায় জখমের কালচে দাগ ছিল। এ ছাড়া তাঁর বাঁ কানে আঘাত ছিল। দুই হাতের আঙুল কাটাছেঁড়া ছিল। পায়ের বুড়ো আঙুল ছেলা ছিল।

মেঘলার লাশের ময়নাতদন্ত করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন ও টক্সিকোলজি বিভাগের প্রভাষক ফারহানা ইয়াসমীন। তিনি লিখেছেন, মৃত্যুর ধরন বলছে, মেঘলা আত্মহত্যা করেছেন। ঝুলে থাকায় শ্বাসরোধে তিনি মারা যান। তবে তার শরীরের নানা জায়গায় আঘাতের অসংখ্য দাগ রয়েছে।

মেঘলার মৃত্যুর পরপরই তার স্বামী ইফতেখারকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানা-পুলিশ। পরে মামলাটির তদন্তভার পায় ডিবি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইফতেখারকে চার দফায় রিমান্ডে নেয় ডিবি। তদন্তের অংশ হিসেবে তারা মেঘলার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনসহ অন্যান্য আলামত ও তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে।

তদন্তে ডিবি জানতে পারে, মেঘলার সঙ্গে বিয়ের দুই মাস পর ইফতেখার কানাডায় চলে যান। দেশে আসেন গত বছরের ১১ ডিসেম্বর। এই দম্পতি একে অন্যকে বিশ্বাস করতেন না। ১৩ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে মেঘলা ও ইফতেখারের মধ্যে ঝগড়া হয়। মেঘলা রাতেই স্বামীর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ইফতেখার বাড়ি থেকে বের হওয়ার সব পথ তালা দিয়ে বন্ধ করে দেন। একপর্যায়ে মেঘলা ছবির অ্যালবাম ভেঙে নিজের গলা কেটে ফেলার চেষ্টা করেন। তখন মেঘলাকে বেধড়ক মারধর করেন ইফতেখার।

আরও পড়ুন: তিন দিনের অত্যাচারে ইলমার মৃত্যু, প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার দাবি বাবার

পরদিন সকালে আবার দুজনের মধ্যে ঝগড়া হয়। মেঘলা জানিয়ে দেন, তিনি আর ইফতেখারের সঙ্গে থাকতে চান না। ইফতেখার নিজেদের শোবার ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। মিনিট দশেক বাদে ঘরে ঢুকতে গিয়ে দেখেন দরজা লাগানো। চাবি দিয়ে লক খুলতে গিয়ে গৃহকর্মী দেখেন, দরজায় ছিটকিনি দেওয়া। পরে গাড়িচালককে সঙ্গে নিয়ে ইফতেখারের বাবা মো. আমিন দরজা ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেন। নিচ থেকে কুড়াল নিয়ে এসে দরজা কেটে তাঁরা ভেতরে ঢোকেন।

ভেতরে ঢুকে দেখেন, গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় মেঘলার দেহ ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আছে। মেঘলার পা উঁচু করে তুলে ধরেন ইফতেখার। গৃহকর্মী বঁটি দিয়ে ওড়না কেটে ফেলেন। মেঘলাকে পরে ধরাধরি করে গাড়িতে তোলা হয়। ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা মেঘলাকে মৃত ঘোষণা করেন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence