গেস্টরুম-গণরুমে নির্যাতনের ভয়, ঢাবি ছেড়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি  © সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে নবীন শিক্ষার্থীদের ‘ম্যানার’ শেখানোর নামে গেস্টরুম পরিচালনা করে ছাত্রলীগ। হলের কক্ষগুলোতেও একক নিয়ন্ত্রণ সংগঠনটির নেতাকর্মীদের। ফলে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের হলে উঠতে হলে নির্ভর করতে হয় ছাত্রলীগের ওপর। এসব ক্ষেত্রে হল প্রশাসনকে দর্শকের ভূমিকায় দেখা যায়।

সম্প্রতি গেস্টরুম ও গণরুমের সঙ্গে ‘মানিয়ে নিতে না পেরে’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে গেছেন এক শিক্ষার্থী। তিনি স্যার এফ রহমান হলের ১০৮ নম্বর কক্ষে থাকতেন। কক্ষটি ছাত্রলীগের উত্তরবঙ্গ গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী তারা। সাদ্দাম নিজেও এই হলের শিক্ষার্থী।

২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে ইতিহাস বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন মোহাম্মদ আলী রানা। বর্তমানে রানা সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে ইংরেজি বিষয়ে পড়াশোনা করছেন। এই কলেজ থেকেই তিনি এইচএসসি পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভর্তি বাতিলের বিষয়টি রানা নিজেই নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পারার কারণে ভর্তি বাতিল করেছি। এখন সিরাজগঞ্জ চলে এসেছি। টিউশনি করাবো আর পড়াশোনা করবো। এর বেশি কিছু বলতে চাই না।

আরও পড়ুন- গেস্টরুমে ছাত্রকে ‘ধোয়া না ছেড়ে সিগারেট শেষ করতে’ বাধ্য করলো ছাত্রলীগ নেতারা

ভর্তি বাতিলের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে বিভাগ থেকেও। একাধিক কর্মকর্তা জানান, ভর্তি বাতিল করার জন্য আসার পর তাকে আমরা বুঝিয়েছি। ভর্তি বাতিল না করার অনুরোধ করি। তার পরিবারের সঙ্গেও কথা হয়েছে। কিন্তু তিনি তড়িঘড়ি করেই ভর্তি বাতিল করে চলে যান। ভর্তি বাতিলের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন, সিরাজগঞ্জ কলেজে ইংরেজি বিভাগে পড়বেন তিনি। তাই ভর্তি বাতিল করছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম বর্ষের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, হলে প্রায় রাতেই তাদের গেস্টরুম করানো হয়। বড় ভাইরা গেস্টরুমে ‘ম্যানার’ শেখান। প্রোগ্রামে না গেলে কৈফিয়ত জানতে চান। এসময় অনেককেই তারা গালমন্দ করেন, মারধর করেন। এসব দেখে বিমর্ষ হয়ে পড়েন রানা। সেই সঙ্গে গণরুমে গাদাগাদি করে অনেকজনকে থাকতে হতো। এটাও তার ভালো লাগতো না। যে কারণে ক্লাস চালুর পর প্রায় সময়ই রানা বাইরে থাকতো। অন্য হলে থাকতো বা বাড়ি চলে যেতো।

আরও পড়ুন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হলে হলে ছাত্রলীগের ‘গেস্টরুম আদালত’

ওই দুই শিক্ষার্থী আরও বলেন, রানাকে আমরা ভর্তি বাতিল করতে নিষেধ করি। প্রয়োজনে হলের বাইরে বাসা কিংবা মেসে থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পরামর্শ দেই। তার পরিবার থেকেও বলা হয়েছিলো, যাতে ভর্তি বাতিল না করে। কিন্তু সে নীরবেই ভর্তি বাতিল করে চলে যায়। তারা আরও বলেন, গেস্টরুমে রানা কখনো নির্যাতনের শিকার হয়নি। তবে পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেনি।

রানার কলেজ বন্ধু সাকিবও (ছদ্মনাম) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের পরিবেশ নিয়ে সে খুব ডিপ্রেশনে ছিল। যে কারণে ভর্তি বাতিল করেছে। এ ছাড়া আর কোনো কারণ নেই।

বিষয়টি নিয়ে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে ইতিহাস বিভাগের এক শিক্ষকের কথা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘ভর্তি বাতিলের বিষয়টি শুনে খুব অবাক হয়েছি। হলের পরিবেশ নিয়ে হতাশার কথা জানতাম না। মনে করেছিলাম অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে চায়। একটি কলেজে যাওয়ার কথা শুনে বুঝানোর চেষ্টা করেছি।’

এ বিষয়ে স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মুনেম শাহরিয়ার মুন বলেন, আমাদের হলে গেস্টরুম শব্দটাই নেই। গণরুম তো আসলে ছাত্রলীগের হাতে নেই। দুই একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে অস্বীকার করছি না। আমরাও চাই প্রশাসন এই গণরুম সমস্যা সমাধান করুক।

বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনকে প্রশ্ন করা হলে কিছু না বলেই ফোন কেটে দেন তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ