যৌতুকের দাবিতে ঢাবি ছাত্রীকে স্বামীর মারধর, বিচার দাবি

বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
বিচারের দাবিতে মানববন্ধন  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের মামলার পরও পুলিশের গড়িমশির কারণে বিচার না পাওয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ লবিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো।

বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।

জানা যায়, ওই শিক্ষার্থীর নাম কানিজ ফাতেমা। তিনি ঢাবির সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৩-১৪ বর্ষের শিক্ষার্থী। ২০১৯ সালে তার বিয়ে হয় সহকারী জজ নজরুল ইসলামের সাথে। তবে বিয়ের পর থেকেই নজরুল ইসলাম যৌতুকের দাবিতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছেন বলে দাবি ফাতেমার।

ড. চন্দনা রাণী বিশ্বাস তার বক্তব্যে বলেন,"একবিংশ শতাব্দীতে এসেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক শিক্ষার্থী যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার হবেন, সেটা কখনই আমারা কল্পনাও করতে পারি না। তার গলায় এখনও নির্যাতনে সৃষ্ট ক্ষত রয়েছে। তাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে তাতে সে মরেও যেতে পারত। এরপর আমাদের এই শিক্ষার্থী যখন বিচারের দাবিতে পুলিশের কাছে গেল তখন তাদের কাছ থেকে কোন সহযোগিতা পায়নি। ঢাবির সাবেক একজন শিক্ষার্থীদের সাথেই পুলিশ যদি এমন আচরণ করে তাহলে অন্যদের সাথে তারা পুলিশ কেমন আচরণ করে বোঝার বাকী থাকে না। সে যদি ভাবে, একজন বিচারক হওয়ার কারণে তার বিচার হবে না তাহলে সেটা ভুল। তাই এ ঘটনায় সরকারের সকল মহলকে সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে বিচার করা আহ্বান জানাচ্ছি।"

মানববন্ধনে সংস্কৃত বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ময়না তালুকদার বলেন, "যে জজ নিজের ঘরের নারীদের সম্মান করেতে পারে না সে কীভাবে সমাজের অপরাধীদের বিচার করবে। তাকে সহকারী জজ পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক। এমন বিচারক আমাদের সমাজের দরকার নেই।"

পুলিশের অসহযোগিতা কথা বর্ণনা করতে গিয়ে সংস্কৃত বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ফখরুল ইসলাম সিরাজ বলেন, "কিছু দিন আগে মামলার অগ্রগতি জানার জন্য ফাতেমা আপুর শাহবাগ থানায় গিয়েছিলাম। তখন থানার কয়েকজন কর্মকর্তা আমাদের বলেছিনেন, সবকিছু করার ক্ষমতা আমরা হাতে নেই, কমিশনার স্যারের সাথে কথা বলে আমারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আজকে আমরা স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তীর সময় একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের উপর হওয়া নির্যাতনের বিচারের দাবিতে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে দাড়িয়েছি। যা আমাদের জন্য দুঃখজনক।"

নির্যাতনের ঘটনা বর্ণনা দিতে গিয়ে ভুক্তভোগী কানিজ ফাতেমা বলেন, "আমি প্রথম থেকেই তাকে বিয়ে করতে রাজি ছিলাম না। সে আমার পরিবারকে নানাভাবে প্রেশার দিয়ে আমাকে বিয়ে করেছে। বিয়ের পর থেকেই সে নানাসময় আমার উপর নির্যাতন চালায়। এর ফলে বিয়ের দুই মাসের মাথায় আমি আত্মহত্যারও চেষ্টা করি। এরপর একটু নির্যাতন কমে। এরপর ২০২১ সালের আগস্ট মাসে বিচার বিভাগ আবাসন বিচারকদের জন্য একটি আবাসন প্রকল্প আসলে, ওই আবাসন প্রকল্পে জমি কেনার জন্য আমার স্বামী আমার কাছে ১০ লক্ষ টাকা দাবি করে। আর আমি টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় সে আমার গলায় হিজাবের পিন ঢুকিয়ে দেওয়া ও লাথি দেওয়াসহ বিভিন্ন উপায়ে আমাকে শারীরিক নির্যাতন করতে থাকে। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে নির্যাতনের বিচার চাই।"

আয়োজিত মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃত বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ময়না তালুকদার, সহযোগী-অধ্যাপক ড. চন্দনা রাণী বিশ্বাস, সহকারী অধ্যাপক ড. কালীদাস ভক্ত, সহকারী অধ্যাপক ড. প্রমথ মিস্ত্রী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেডিং সোসাইটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।


সর্বশেষ সংবাদ