জাবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে ফলাফল জালিয়াতির অভিযোগ, তদন্ত কমিটি গঠন

তালা ঝুলিয়ে দ্বিতীয় দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন বিভাগের একদল শিক্ষার্থী
তালা ঝুলিয়ে দ্বিতীয় দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন বিভাগের একদল শিক্ষার্থী  © সংগৃহীত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে একই বিভাগের এক শিক্ষার্থীর অভিযোগের ঘটনার প্রতিবাদে বিভাগের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দ্বিতীয় দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন বিভাগের একদল শিক্ষার্থী। বিভাগের ঐ শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় মূল্যায়ন সংক্রান্ত বিষয়ে প্রদত্ত পারস্পরিক অভিযোগসমূহ তদন্ত করতে ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন৷ 

বুধবার (১৬ এপ্রিল) সকাল নয়টায় প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থী বিভাগের সামনে জড়ো হয়ে বিভাগের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন৷ একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক রাশিদুল আলম বিভাগের শিক্ষকদের নিয়ে উপস্থিত হলেও শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিতে অনড় রয়েছেন৷ 

অবস্থানকারী শিক্ষার্থীরা গতকাল থেকে যে ৪ দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছেন সেগুলো হলো- থিসিস মূল্যায়নে পরীক্ষক নির্বাচনে ড. আফসানা হকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মানহানি করার ব্যাপারে বিভাগ থেকে সকল শিক্ষকের স্বাক্ষর যুক্ত করে সুস্পষ্ট বিবৃতি প্রদান করতে হবে, সাজিদ ইকবালের আনীত অভিযোগ অনুযায়ী তার থিসিসের উন্মুক্ত মূল্যায়ন তিন পরীক্ষক দ্বারা ১৭ এপ্রিল বিকাল ৫টার মধ্যে করতে হবে, যেখানে প্রত্যেক শিক্ষকের মূল্যায়ন ব্যাখ্যা উন্মুক্তভাবে প্রদান করতে হবে, বিভাগের অতি গোপনীয় তথ্য সাজিদ ইকবাল (৪৯) কে বা কারা দিয়েছে এর দায়ভার বিভাগ কে নিয়ে এর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত বিভাগ থেকেই করতে হবে এবং তথ্য প্রদানকারীর নাম সকলের কাছে উন্মুক্ত করতে হবে। একই সাথে ভবিষ্যতে এরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় তা নিশ্চিত করতে লিখিতভাবে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করতে হবে এবং সাজিদ ইকবালের আনিত অভিযোগ যদি মিথ্যা প্রমাণিত হয় তাহলে বিষয়টি নিয়ে বিভাগ সাজিদ তার ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত নিবে তা লিখিতভাবে সকলের কাছে উন্মুক্ত করতে হবে। 

এছাড়াও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, ৪ দফা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত বিভাগের সকল ক্লাস, পরীক্ষা ও অন্যান্য অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করবে না এবং ৪ দফা দাবিসমূহ বাস্তবায়নে বর্তমান বিভাগীয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যর্থ হলে, কর্তৃপক্ষকে তাদের অপারগতা স্বীকার করতে হবে। তার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ ব্যক্ত করবে।

দাবি বাস্তবায়ন না হলে বিভাগের সকল ক্লাস, পরীক্ষা ও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করবে না' মর্মে অভিযোগপত্র উল্লেখ করা হয়৷ এ বিষয়ে বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বললে তারা জানান, তারা এ বিষয়ে তেমন কিছু জানেন না৷ ড. আফসানা হকের অনুসারী শিক্ষার্থীরা নিজেদের মতো করে সবার মতামত না নিয়েই কীভাবে এমন সিদ্ধান্ত জানাতে পারে তা আমাদের বোধগম্য নয়৷ এ ব্যাপারে ব্যাচ ভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপেও পক্ষে-বিপক্ষে কথা উঠেছে বলে জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা৷ 

শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করে ড. আফসানা হক তাদের আন্দোলনে নামিয়েছেন বলে জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষার্থী৷ এ ব্যাপারে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের পরামর্শে গতকাল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক লুৎফুর রহমানসহ কয়েকজন শিক্ষক বিভাগের ৪৮ থেকে ৫৩ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ডেকে নিয়ে অভিযোগকারী সাজিদ ইকবালের গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করে প্রবন্ধের ভুল দেখিয়ে বলেছেন ভালো থিসিস করতে হলে এরকম ভুল করা যাবে না৷ আর এ থিসিসটি দুর্বল থিসিস হয়েছে বলে শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরে তাদের ব্যবহার করে আন্দোলন নামানোর এক প্রকার পরিকল্পিত ভিত্তি তৈরি করা হয়েছে বলে জানান তারা৷ 

এছাড়া ড. আফসানা হক এরকম পরিস্থিতিতে উক্ত বিভাগে শিক্ষকতা চালিয়ে যেতে অনিচ্ছার কথা জানিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে দোয়া তাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে মেসেজ করেছেন বলে জানান ঐ বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী৷ শিক্ষার্থীদের সহানুভূতি কাজে লাগিয়ে নিজ স্বার্থসাধন করতেই এমনটা দাবি করছেন তারা৷ 

এছাড়াও বিভাগীয় সভাপতি অবস্থান কর্মসূচি পালনকারীদের শিক্ষার্থীদের স্বাক্ষর সম্বলিত দাবি বিভাগে জমা দিতে বলেন৷ পরে ৪ দফা দাবির স্মারক বিভাগে জমা দেয়ার লক্ষ্যে উপস্থিত বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়৷ তবে ব্যাচ ভিত্তিক সকল শিক্ষার্থীদের স্বাক্ষর নিতে তাদের অনলাইন গ্রুপগুলোতে ড. আফসানা হকের অনুগত শিক্ষার্থীরা দাবিনামা উপস্থাপন করে এবং 'কারো আপত্তি আছে কি না' তাৎক্ষণিক জানতে চান৷ আর 'আপত্তি আছে' প্রত্যুত্তর না আসলে সকলের সম্মতি আছে হিসেবে ধরে নিয়ে স্বাক্ষরে সবার নাম দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে৷ এ বিষয়ে বিভাগের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বললে তারা জানান এটা স্পষ্টতই শিক্ষার্থীদের মতামতকে অবমূল্যায়ন করা এবং কতিপয় শিক্ষকদের স্বার্থ হাসিলের হীন চেষ্টা ছাড়া অন্য কিছু নয়৷ 

এদিকে বিভাগের ৪৯তম আবর্তনের শিক্ষার্থী সাজিদ ইকবালের অভিযোগের ঘটনায় ওই শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় মূল্যায়ন সংক্রান্ত বিষয়ে প্রদত্ত পারস্পরিক অভিযোগসমূহ তদন্ত করতে ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল বুধবার (১৬ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ড. এ বি এম আজিজুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। 

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের একজন শিক্ষক এবং একজন শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় মূল্যায়ন সংক্রান্ত বিষয়ে প্রদত্ত পারস্পরিক অভিযোগসমূহ তদন্ত করে সুপারিশসহ প্রতিবেদন পেশ করার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির সভাপতি হিসেবে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মাহবুব কবির, সদস্য হিসেবে আছেন ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ নজরুল ইসলাম, ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সোহেল রানা এবং সচিব হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে ডেপুটি রেজিস্ট্রার (টিচিং) ড. বি. এম. কামরুজ্জামান। বিজ্ঞপ্তিতে আগামী ১০ (দশ) কর্মদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন প্রদানের জন্য কমিটিকে বলা হিয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ১৮ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে ফলাফল বিপর্যয় হয়েছে বলে উপাচার্য বরাবর অভিযোগ করেন উক্ত বিভাগের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. সাজিদ ইকবাল। বিভাগের অধ্যাপক মো. শফিক-উর-রহমান, সহযোগী অধ্যাপক লুৎফর রহমান, সহযোগী অধ্যাপক ড. আফসানা হকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগে তিনি দাবি করেন,  ১ম থেকে ৭ম সেমিস্টার পর্যন্ত তার সিজিপিএ ৩.৮১ থাকলেও দুর্নীতি ও কারসাজি করে ৮ম সেমিস্টারে ছয় ক্রেডিটের থিসিসে বি+(৩.২৫) দিয়ে রেজাল্টে ধস নামানো হয়েছে। 


সর্বশেষ সংবাদ