ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ছাত্র রাজনীতির সংস্কার চায় সব সংগঠন, রূপরেখা দিচ্ছে না কেউ

ছাত্র রাজনীতির সংস্কার চায় ঢাবির ছাত্র সংগঠনগুলো
ছাত্র রাজনীতির সংস্কার চায় ঢাবির ছাত্র সংগঠনগুলো  © ফাইল ছবি

সংস্কারের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি চালু রাখার দাবি জানিয়েছে ছাত্র সংগঠনগুলো। তবে সংস্কার কেমন হবে, তা নিয়ে কোনো প্রস্তাবনা বা রূপরেখা দেয়নি তারা। ফলে ছাত্র রাজনীতির কেমন সংস্কার হবে এবং সেটি শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ- তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। এরইমধ্যে ক্যাম্পাসে দলীয় লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষাবিদদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করার উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

জুলাই-আগস্টে ছাত্র- জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পুরোনো ধাঁচের দখলদারিত্ব ও দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে অবস্থান নেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধে সরব থাকতে দেখা যায় তাদের। তবে এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নিয়ে শ্রেণি কার্যক্রম চালুর ঘোষণা দিলে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

এদিকে শিক্ষার্থীদের এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্রুত শ্রেণি কার্যক্রম চালু করতে গত ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের জরুরি একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সে জরুরি সভায় ক্যাম্পাসে সব ধরনের দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির বিষয়ে পরবর্তী করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি বন্ধের খবরটি ছড়িয়ে পড়ার পর ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। কোনো সংগঠনই ছাত্র রাজনীতি বন্ধের পক্ষে অবস্থান নেয়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২১ সেপ্টেম্বর সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে বসে ঢাবি প্রশাসন। সেখানে দু’দফায় ৯টি ছাত্র সংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। এতে রাজনীতি বন্ধ না করে সংস্কার করে চালু রাখার প্রস্তাব দেয় সংগঠনগুলো।

একাধিক সিন্ডিকেট সদস্য সেখানে রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বলে জানালেও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেছিলেন, ‘রাজনীতির বিষয়ে সিন্ডিকেট সদস্যরা মতামত দিয়েছেন। সেগুলো পর্যালোচনা করে শিগগিরই একটি সারসংক্ষেপ বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করা হবে।’ তবে এখনো তা নিয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি বন্ধের খবরটি ছড়িয়ে পড়ার পর ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। কোনো সংগঠনই ছাত্র রাজনীতি বন্ধের পক্ষে অবস্থান নেয়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২১ সেপ্টেম্বর সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে বসে ঢাবি প্রশাসন। সেখানে দু’দফায় ৯টি ছাত্র সংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। এতে রাজনীতি বন্ধ না করে সংস্কার করে চালু রাখার প্রস্তাব দেয় সংগঠনগুলো।

আলোচনায় যৌক্তিক সংস্কার করে ক্যাম্পাসে সুস্থ ধারার ও শিক্ষার্থীবান্ধব ছাত্র রাজনীতি চালু রাখার দাবি জানান সংগঠনগুলোর নেতারা। আলোচনা শেষে গণমাধ্যমকে তারা এমন তথ্য জানিয়েছিলেন। এরপর ২০ দিন পার হয়ে গেলেও এখনও হয়নি কোনো কমিশন। পাশাপাশি ছাত্র সংগঠনগুলোও দেয়নি কোনো সংস্কার নীতি। কী ধরনের সংস্কার করা হবে, সেটি নিয়েও নেই কোনো আলোচনা।

সংস্কার ও নীতিমালার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদ সারাদেশে সাংগঠনিক সফরের মাধ্যমে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করছে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে ছাত্রদল তাদের আনুষ্ঠানিক রূপরেখা প্রকাশ করবে।

তিনি বলেন, ‘ছাত্র রাজনীতি হবে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে। আমাদের রূপরেখায় ছাত্রলীগের দীর্ঘ দেড় দশকের কলুষিত রাজনীতির বিপরীতে গিয়ে ছাত্র-জনতার এ গণঅভ্যুত্থানকে ধারণ করে একটি শিক্ষার্থীবান্ধব ছাত্র রাজনীতি উপহার দেবে।’

শাখা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক এস এম ফরহাদ বলেন, ‘আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কোনো নীতিমালা বা প্রস্তাবনা দিইনি। আমাদের প্রস্তাবনার মধ্যে থাকবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অথোরাইজেশনে কোনো ধরনের রাজনৈতিক প্রভাব থাকবে না। হল প্রশাসন বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন স্বাধীনভাবে কাজ করবে। ছাত্র রাজনীতি হলভিত্তিক না হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রীক হবে। এক্টিভিজম হলে না হয়ে রাজুতে বা মধুতে হবে। ছাত্রনেতা হলে থাকবে ছাত্র পরিচয়ে। রাজনৈতিক কোনো প্রভাব হলে থাকবে না। কারও ওপর চাপ প্রয়োগ করে রাজনীতিতে যুক্ত করা যাবে না।’ তবে ডাকসু সম্পর্কে এখনই কোনো কথা বলতে চাননি শিবির নেতা।

ছাত্র ফেডারেশনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহবায়ক আরমানুল হক বলেন, ‘এখানে এমন কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা দরকার, যেখানে ভবিষ্যতে আর কোনো দল ক্যাম্পাস দখল করতে না পারে। সেক্ষেত্রে প্রথম বর্ষ থেকে বৈধ সিট নিশ্চিত করা প্রধান শর্ত বলে আমরা মনে করি। সামনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস হবে গণতান্ত্রিক, পরমতসহিষ্ণু, মুক্তবুদ্ধিচর্চার ক্ষেত্র, যেখানে থাকবে না কোনো পেশীশক্তির প্রদর্শনী। থাকবে না কোনও অস্ত্রের ঝনঝনানি।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ তথা ডাকসু নির্বাচন অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডারে একটা নির্দিষ্ট তারিখের জন্য নির্ধারিত করতে হবে। নির্বাচন কোনও অবস্থাতেই আটকে রাখা যাবে না। ডাকসুর গঠণতন্ত্রের মধ্যে গণতান্ত্রিক সংস্কার আনতে হবে। ডাকসুর সভাপতি ছাত্রদের মধ্য থেকে নির্বাচিত হবে। কোনোভাবেই সভাপতি ভিসি হতে পারবেন না পদাধিকার বলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশও সংস্কার করতে হবে। আশা করি, প্রশাসনের প্রতিশ্রুত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন একটা গণতান্ত্রিক রূপরেখা হাজির করবে ছাত্র সংগঠনগুলোর সংস্কার প্রস্তাবের আদলে।’

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হক বলেন, সন্ত্রাস-দখলদারিত্ব মুক্ত গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস নিশ্চিতের লক্ষ্যে এসবের মূল কারণ আবাসন সংকট দূর করে প্রশাসনিক তত্ত্বাবধানে সিট বণ্টন করা, গণরুম-গেস্টরুম নিষিদ্ধ করা, সুষ্ঠু ও কার্যকরী ছাত্র সংসদ নিশ্চিত করা জরুরি। যেহেতু প্রশাসনের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সন্ত্রাস-দখলদারিত্ব কায়েমের সুযোগ হয়, তাই সবক্ষেত্রে প্রশাসনের কার্যকারিতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা, ভিসি, সিনেট ও সিন্ডিকেট নির্বাচন সঠিক প্রক্রিয়ায় করা অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াটা চালু করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণে দলীয় প্রভাব বন্ধ করা ও স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করা জরুরি।

আরো পড়ুন: সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ছে

বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির সংস্কার প্রসঙ্গে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, ক্যাম্পাসে দলীয় লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিগগির বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেওয়া হবে। পরবর্তীতে তারা যে সুপারিশ দেবেন, তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পর্যালোচনা করে দলীয় রাজনীতি থাকবে কিনা সেটি নির্ধারণ করবে। 

জানা গেছে, অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক ও অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামদের মতো বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের নিয়ে এ কমিটি গঠন করা হবে। তারা ক্যাম্পাসের অংশীজনদের মতামত ও বক্তব্য নিয়ে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতির বিষয়ে সুপারিশ দেবে। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটে তাদের এ সুপারিশ পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এ কমিটি গঠনের পর ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতির কোনো ধরনের কার্যক্রম চালানো যাবে না জানিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এ সময়ে রাজনীতি বন্ধ রাখতে হবে। তবে ক্যাম্পাসের ছাত্র সংসদ কিংবা ক্লাবভিত্তিক যে কার্যক্রম, সেটা এর মধ্যে পড়বে না।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence