বুদ্ধিজীবী হত্যা হিটলারের ইহুদি হত্যাযজ্ঞকেও হার মানায়: রাবি অধ্যাপক

রাবি অধ্যাপক মলয় কুমার ভৌমিক
রাবি অধ্যাপক মলয় কুমার ভৌমিক  © টিডিসি ফটো

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে দেশের স্বনামধন্য বুদ্ধিজীবীদের ধরে ধরে হত্যা করাকে জার্মানির নাৎসি নেতা এডলফ হিটলারের ইহুদি গণহত্যাকেও হার মানায় বলে মন্তব্য করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক, বিশিষ্ট নাট্যকার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মলয় কুমার ভৌমিক। 

বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক চত্বরে আয়োজিত শহিদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যদের স্মৃতিচারণ ও স্মারক প্রদান এবং আলোচনা সভায় তিনি এমন মন্তব্য করেন। 

অধ্যাপক মলয় কুমার বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে স্বাধীনতা পর্যন্ত বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করার চেষ্টা হয়েছে। এসময় ২০ হাজার বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়। ঐ সময় তারা গভর্নর হাউজে বুদ্ধিজীবীদের নিমন্ত্রণ করতো এবং সেখানে তাঁদের হত্যা করা হতো। এটা হিটলারের যে হত্যাযজ্ঞ, ইহুদীদের যে হত্যাযজ্ঞ সেটাকেও ছাড়িয়ে যায়। পাক হানাদার বাহিনী আমাদের ভাষার উপর উর্দুকে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। ইতিহাসকে ধ্বংস করার জন্য তারা বুদ্ধিজীবীদের খুঁজে খুঁজে হত্যা করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, আমাদের ভাষা, দেশ ও স্বাধীনতায় আছে বুদ্ধিজীবীদের অবদান। দীর্ঘ ৫২ বছর ধরে শহিদ পরিবার তাদের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ বয়ে বেড়াচ্ছেন। এই দিবসে আমি আশা করব নতুন করে যেন তাদের কাছে আর কোনো শোক না আসে, হৃদয়ে রক্তক্ষরণ না হয়। আমাদের স্বাধীনতায় বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা কতটা এই বিষয়ে আরো চর্চা হওয়া উচিত। এগুলো নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা উচিত। শহিদ বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা কত এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছেন। এখনকার প্রজন্মকে সঠিক তথ্যটি জানানো আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।

উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ১৯৪৭ সালে একজন তরুণ যুবক বাংলাদেশকে নিয়ে চিন্তা করেছিলেন। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁরই চিন্তার ধারাবাহিকতায় তিনি ৬ দফা দাবি পেশ করেন। বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তা বা চর্চা যারা করেন বঙ্গবন্ধু প্রথম থেকেই তাদের স্মরণ করতেন। ৬ দফা যে আমাদের মুক্তির সনদ সেটা কিন্তু বুদ্ধিজীবী শ্রেণির যারা অর্থনীতিসহ জাতির সামগ্রিক চিন্তা করেন তাদের ছোঁয়া ছিল। বঙ্গবন্ধুর কথা আমাদের মাঝে বার বার ফিরে আসে। 

তিনি আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের প্রিয় মানুষগুলো শহিদ হলেন কেন? তারা তো আরও বাঁচতে পারতেন। যারা মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন তারা কি আত্মহত্যা করতে গেছেন? ওনারা তো জানতেন মুক্তিযুদ্ধে গেলে মারাও যেতে পারেন। ওনারা আসলে দেশের জন্য আত্মাহুতি দিয়েছেন, দেশমাতৃকাকে রক্ষা করতে গিয়ে আত্মদান করেছেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে কিছু রাজাকার-আলবদর ছাড়া সবাই মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। ফলে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। বঙ্গবন্ধু বুদ্ধিজীবীদের সবসময় শ্রদ্ধা করতেন। বাঙালি জাতির জন্য বুদ্ধিজীবীদের অবদান অনস্বীকার্য।

এসময় শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন কমিটির সভাপতি উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীরের সভাপতিত্বে মুক্তিযুদ্ধে শহিদ শিক্ষক মীর আব্দুল কাইয়ূমের স্ত্রী অধ্যাপক মাসতুরা খানম স্মৃতিচারণ করেন। 

এদিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাবির প্রশাসন ভবন, আবাসিক হল ও অন্যান্য ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত উত্তোলন করা হয়। সকাল ৮টায় উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকে এবং সকাল সাড়ে ৮টায় শহিদ মিনার ও বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এসময় শহিদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন তাঁরা।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence