ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
হরতাল-অবরোধেও সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা, নিরাপত্তাহীনতায় শিক্ষার্থীরা
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:৫০ PM , আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৩, ১১:৩৬ PM
বিএনপি ও জামায়াতের ডাকা হরতাল-অবরোধের মধ্যেও সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা চালু রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সব বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে। ঢাকা শহর ও আশপাশের বিভিন্ন মেস-বাসায় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির যেসব শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসে নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন, সারা দেশে চলমান টানা তিনদিনের সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচিতে বিপাকে পড়ছেন এসব শিক্ষার্থী। মঙ্গলবার থেকে এই কর্মসূচি শুরু হয়ে চলবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। এর আগে গত রবিবারের হরতালেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা চালু ছিল।
হরতাল-অবরোধ চলাকালে ক্লাস-পরীক্ষা চালু থাকায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার সকালে শিক্ষার্থীদের একটি পরিবহনকারী বাস বনানী পৌঁছালে সেখানকার কাছাকাছি এলাকায় একটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে বাসে থাকা হলে শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তবে নিরাপদে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছেন এসব শিক্ষার্থীরা।
ক্ষণিকা নামের ওই বাসের সভাপতি মাহদী হাসান জানান, সকাল ৬টা ৪০ মিনিটের বাসটি বনানী পৌঁছালে দূরে একটা ককটেল বিস্ফোরণ হলে শিক্ষার্থীরা ভয় পেয়ে যায়। পরে আমরা অন্য রুট দিয়ে চলে আসি। এটা আসলে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।
অন্যদিকে, পূজার ছুটিতে এক সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর গত রবিবার ক্যাম্পাস খোলা হয়। দেশের এই রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিবেশে এই ছুটিতে বাড়ি যাওয়া অনেক শিক্ষার্থী এখনো ফিরেননি ক্যাম্পাসে; বিশেষ করে যারা হলে থাকেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের অভিভাবকরা রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তাদেরকে আসতে দিতে চাচ্ছেন না।
এদিকে চলমান অবরোধের ফলে ঢাকার অভ্যন্তরে বা আশপাশে মেস-বাসা নিয়ে থাকা শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আসতে ভয় পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জে অবস্থানরত এক শিক্ষার্থী জানান, বাসার বাইরের অবস্থা খুব একটা ভালো না। বাসা থেকে অভিভাবক ক্যাম্পাসে যেতে দিচ্ছে না। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস রয়েছে, তবুও অবরোধের কারণে একটা ভয় কাজ করছে। তবে একদিকে ক্লাসও মিস হয়ে হচ্ছে।
সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক শিক্ষার্থী জানান, আমি ক্যাম্পাসের বাইরে থাকি। রাস্তায় অনেক সমস্যার কারণে যেতে পারিনি। তবে অবরোধের কারণে শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে সবগুলো ক্লাস বাতিল করেছে স্যাররা।
আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থী জানান, অবরোধজনিত কারণে স্যাররা আমাদের ক্লাস বাতিল করেছেন। তবে অফিসিয়ালি কোনো ধরনের নোটিশ দেয়া হয়নি।
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন, আমরা দেশের সার্বিক অবস্থা বুঝতে পারছি। তবে ছুটির পর সবে তো ক্লাস শুরু হয়েছে। অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যানরা যদি এ বিষয়ে আমাদেরকে জানায় তবে আমরা একটা ব্যবস্থা নেবো। এখনো আমাদেরকে কেউ কিছু জানায়নি। তবে সেমিস্টার সিস্টেমের কারণে ক্লাস বন্ধ না রেখে অনেক শিক্ষক অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন।
এদিকে ঢাবি ক্যাম্পাসে অবরোধের কারণে সৃষ্ট কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এখনো চোখে পড়েনি। মঙ্গলবার সকাল থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মধুর ক্যান্টিনে অবস্থান করেছিল। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ক্যাম্পাসে এসেছিলেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, বিএনপির এ ধরনের সহিংসতার ফলে শিক্ষার্থীদের মনে একটা ভয়ভীতি আছে এটা স্বাভাবিক। শুধু শিক্ষার্থী না ঢাকা শহরের মানুষের মধ্যেই একটা ভয় কাজ করছে কারণ তারা তো দেখছে এই সহিংসতা। বিকল্প হিসেবে আমি যতদূর জানি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকগুলো বিভাগে অনলাইন কার্যক্রম চালু রয়েছে। একই সাথে আমি শিক্ষার্থীদেরকে নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে চাই যে তাদের নিরাপত্তার জন্য ছাত্রলীগ সোচ্চার রয়েছে। ক্যাম্পাসে বিএনপি বা ছাত্রদল কর্তৃক কোনো ধরনের বোমাবাজি বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে চাইলেও সেটা সম্ভব না। আমরা প্রস্তুত রয়েছি। এ ধরনের কোনো ঘটনা কেউ ঘটাতে আসলে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।
এদিকে সকালে বকশী বাজার থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ পর্যন্ত মিছিলে করেছে ঢাবি শাখা ছাত্রদল। পরবর্তীতে তারা কিছু সময়ের জন্য রাস্তাও অবরোধ করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের সেশনজটে ফেলতে চাই না। ২০১০ সাল থেকে হরতাল অবরোধের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছিল বিধায় শিক্ষার্থীদের সেশনজট থেকে মুক্তি দিতে পেরেছিলাম। করোনার মধ্যেও আমরা লস রিকভারি প্ল্যান করে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়েছি, যেন শিক্ষার্থীরা অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী তাদের শিক্ষা কার্যক্রম শেষ করতে পারে। কোনো রাজনৈতিক দল হরতাল-অবরোধ দিলো আর তা দেখে আমরা ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেব, এমনটা হলে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘস্থায়ী ভোগান্তি বাড়বে।
শিক্ষা কার্যক্রম অনলাইনে করা যায় কিনা, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করোনার সময় আমরা অনলাইনে কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। বর্তমান পরিস্থিতি বেশি খারাপ নয়। যদি পরিস্থিতি খারাপের দিকে যায় তাহলে আমরা আবার অনলাইন ক্লাসের দিকে মনোযোগ দিব। তবে শিক্ষার্থীদের প্রতি পরামর্শ থাকবে তারা যেন সর্বদা সতর্ক থাকে এবং নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভাবে।