৩৩ বছর অচল রাকসুর সাড়ে ৩ কোটি টাকা কোথায়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ অচল রয়েছে ৩৩ বছর
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ অচল রয়েছে ৩৩ বছর  © টিডিসি ফটো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) অচল রয়েছে ৩৩ বছর। নির্বাচন না হলেও একজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রতি বছর ছাত্র সংসদ ফি বাবদ নেওয়া হচ্ছে ১৫ টাকা। অন্যদিকে আবাসিক হোক কিংবা অনাবাসিক, একজন শিক্ষার্থীকে বাধ্যতামূলক ৩০ টাকা হারে দিতে হচ্ছে হল সংসদ ফি। তিন  দশকেরও বেশি সময় ধরে রাকসু অচল থাকলেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এ খাতে ফি নেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

হিসাব কষে দেখা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীকে তার ৫ বছরের শিক্ষাজীবনে রাকসু বাবদ ফি দিতে হচ্ছে ২২৫ টাকা। দীর্ঘদিন নির্বাচন না হওয়ার ফলে তৈরি হচ্ছে না রাকসু বডি। এতে নির্দিষ্ট ফি দিয়েও একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি-নির্ধারণে তার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে পারছে না।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাবিতে বর্তমানে নিয়মিত শিক্ষার্থী আছেন ২৬ হাজার ৩১৫ জন। ফলে প্রতি বছর রাকসু ও হল সংসদ ফান্ডে জমা হচ্ছে ১১ লাখ ৮৪ হাজার ১৭৫ টাকা। শিক্ষার্থী সংখ্যা কিছুটা কমিয়ে ধরলেও ৩৩ বছরে কেবল রাকসু ফান্ডেই জমা থাকার কথা প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা।

ছাত্র সংসদ ফি থেকে প্রাপ্ত এ টাকা আসলে কোথায় যাচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে রাকসুর কোষাধ্যক্ষ ড. মো. জাফর সাদিক বলেন, ছাত্র সংসদের টাকা ফান্ডেই জমা আছে। আমি যোগ দেওয়ার আগে একবার স্পোর্টস প্রোগ্রামের জন্য মনে হয় এখান থেকে খরচ করা হয়েছিল, এছাড়া আর কোনও খাতে রাকসুর টাকা খরচ হয়নি। রাকসু নির্বাচন যখন হবে, তখন নিয়মানুযায়ী যেভাবে টাকাটা খরচ হওয়ার কথা, সেভাবেই হবে।

নির্বাচন না দিয়ে ফি নেওয়া কতটা যৌক্তিক এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আপনি এসব প্রশ্ন সভাপতিকে জিজ্ঞাসা করেন। আমাকে নয়।’

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন খান রাকসু ফি নেওয়ার যৌক্তিকতা নেই উল্লেখ করে বলেন, ‘যেটি ফাংশনাল না বছরের পর বছর ধরে, সে খাতে শিক্ষার্থীদের কাছ ফি নেওয়া হচ্ছে।  নীতিগতভাবে তো নয়ই, আইনগতভাবেও এর কোনো যৌক্তিকতা থাকার কথা নয়। রাকসু যেহেতু ফাংশন করছে না, আমি মনে করি এ বাবদ ফি আদায় অবিলম্বে স্থগিত করা উচিত।’

রাবিতে বর্তমানে নিয়মিত শিক্ষার্থী আছেন ২৬ হাজার ৩১৫ জন। ফলে প্রতি বছর রাকসু ও হল সংসদ ফান্ডে জমা হচ্ছে ১১ লাখ ৮৪ হাজার ১৭৫ টাকা। শিক্ষার্থী সংখ্যা কিছুটা কমিয়ে ধরলেও ৩৩ বছরে কেবল রাকসু ফান্ডেই জমা থাকার কথা প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সাকলাইন গৌরব বলেন, ‘রাকসু নির্বাচনের খবর নেই, ছাত্র সংসদ অকার্যকর হয়ে আছে। অথচ প্রশাসন প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অনৈতিকভাবে রাকসুর ফি নিচ্ছে। ৩৩ বছরে জমা ফান্ডের টাকার হিসাব কি তারা আদৌ দিতে পারবে?’

রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সমন্বয়ক আব্দুল মজিদ অন্তর এ বিষয়ে বলেন, ‘আমরা সবার আগে চাই রাকসু নির্বাচন। রাকসু কার্যকর হলে, এ ফান্ডের অর্থ নিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ প্রশাসনের কাছে কৈফিয়ত চাইবে। তবে যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচন হচ্ছে না, সেক্ষেত্রে রাকসু ফি সাময়িকভাবে স্থগিত করা যেতে পারে।’

আরো পড়ুন: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অডিট আপত্তি শূন্যের কোটায় চায় ইউজিসি

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ৪ ডিসেম্বর ১১ দিনব্যাপী স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে রাকসুর আয়োজনে একটি ক্রিড়া উৎসব হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি হলের ৮৫০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন এ ক্রীড়া উৎসবে। এতে হ্যান্ডবল, ফুটবল, বাস্কেটবল, ভলিবল ও অ্যাথলেটিকস খেলায় সর্বমোট ৩০৩টি পুরস্কার দেওয়া হয়।

সার্বিক আয়োজনে রাকসু ফান্ড থেকে ব্যয় হয় ১২ লাখ টাকা। ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়া রাকসুর নাম ব্যবহার করে অনুষ্ঠান করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলো তখন এর প্রতিবাদ জানায়।

রাকসু ফান্ডে বর্তমানে কত টাকা জমা আছে এবং কী খাতে এই টাকা খরচ হয় তা জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক অবায়দুর রহমান প্রামাণিকের সাথে যোগাযোগ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী অর্থ ও হিসাব সংক্রান্ত সার্বিক বিষয়ের তত্ত্বাবধানে থাকেন কোষাধ্যক্ষ। তবে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য দিতে রাজি হননি। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম সাঊদের কাছেও একই প্রশ্ন নিয়ে হাজির হন এ প্রতিবেদক। তিনিও রাকসু ফি নেওয়ার যৌক্তিকতা প্রসঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ‘রাকসু সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে রাকসুর সভাপতি অর্থাৎ উপাচার্যকে জিজ্ঞেস করুন। এ বিষয়টি নিয়ে আমার জায়গা থেকে কোনো মন্তব্য দেওয়ার সুযোগ নেই।’

রাকসু সম্পর্কিত এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। উপাচার্য অফিসে সকল নিয়ম মেনেই দেখা করার সময় চাওয়া হয়। কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে মোবাইল ফোনে রাবি উপাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য দিতে রাজি হননি।


সর্বশেষ সংবাদ