তখন মায়ের কোলে, এখন সহপাঠী হয়ে ঢাবিতে আসবেন আলিফ

  © সংগৃহীত

১৯৯৪-৯৫ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন জুলিয়া আইরিন। প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার পর তার প্রথম সন্তান মো. মুকসেতুল ইসলাম আলিফের জন্ম হয়। এরপর ক্লাস করতেন ছেলেকে কোলে নিয়ে। এভাবে তিনি অনার্সের পর মাস্টার্সও করেন ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে। ৩ দশকের কাছাকাছি সময়ের ব্যবধানে সম্প্রতি ছেলে আলিফের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগে প্রফেশনাল মাস্টার্স কোর্সে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন আইরিন।

দুজনেরই একসঙ্গে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার তথ্যটি সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানিয়েছেন আলিফ। পোস্টটি ফেসবুকে শেয়ার হচ্ছে। অনেকেই তাদের শুভকামনা জানাচ্ছেন।

জানা যায়, এইচএসসি পরীক্ষার পরপরই বিয়ে হয় জুলিয়ার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সের পরীক্ষার সময় তার গর্ভে ছিল সাত মাসের মেয়ে। একা হাতে সামলেছেন সংসার, দুই সন্তান, লেখাপড়া সবকিছু। রাতে সবাই ঘুমিয়ে গেলে তখন তিনি পড়তে বসতেন। ফলে তাকে কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে মাস্টার্স শেষ করার পর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন এলএলবি করেন তিনি। ২০০৮ সালে আইন পেশায় যোগ দেন।

আরও পড়ুন: মেডিকেলে ক্লাস শুরুর দিনক্ষণ নিয়ে যা জানা গেল

জুলিয়ার ছেলে আলিফ সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগ থেকে স্নাতক (সম্মান) করেছেন। তিনি একই বিভাগে নিয়মিত স্নাতকোত্তরে (মাস্টার্স) ভর্তি হননি। তিনি ও তার মা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগে প্রফেশনাল মাস্টার্স করার জন্য পরীক্ষা দেন। পরীক্ষায় উভয়ই ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। এখন তারা ভর্তির অপেক্ষায় আছেন। 

মা-ছেলের একসাথে পরীক্ষা দেওয়ার কারণ হিসেবে তার ছেলে মুকসেতুল ইসলাম ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমার মা আগে থেকে দুইটা মাস্টার্স শেষ করেছেন। মায়ের ইচ্ছা ছিলো আরেকটা মাস্টার্স করা। এটি যেহেতু প্রফেশনাল মাস্টার্স সে এটা করতে পারবেন বলে আবেদন করে। আমার নিজেরও এখানে পরীক্ষা দেওয়ার ইচ্ছা ছিলো। তাই আমরা একসাথে পরীক্ষা দিলাম দুইজন।

তিনি আরও বলেন, আমার মা একজন অনুপ্রেরণাদায়ক ব্যক্তি এবং বিশ্বাস করেন যে প্রত্যেকেরই এই ধরনের সুযোগগুলো পাওয়া উচিত এবং বয়স বাধা হওয়া উচিত নয় বরং প্রত্যেকেরই তাদের স্বপ্ন অনুসরণ করা উচিত।

আরও পড়ুন: জিপিএ-৫ পেয়েও ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করে কেন

জুলিয়ার মেয়ে তাসনিম বিনতে ইসলাম শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজিতে গ্রাফিক ডিজাইন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া বিভাগে অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ছেন। জুলিয়ার স্বামী মিজানুল রাজধানীর একটি স্কুলের ক্রীড়া বিভাগের প্রধানের পদে আছেন। তার স্বামী পড়াশোনা নিয়ে বরাবরই তাকে সমর্থন করে গেছেন।


সর্বশেষ সংবাদ