ঢাবির বিজয় একাত্তর হলে
গেস্ট রুমে নির্যাতন করে হল থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২১ মে ২০২৩, ১২:১৬ AM , আপডেট: ২১ মে ২০২৩, ১২:১৬ AM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিজয় একাত্তর হলের গেস্ট রুমে এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করে হল থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল ১৯ মে (শুক্রবার) রাত ১২ টার দিকে ঢাবির বিজয় একাত্তর হলের প্রোগ্রাম পূর্ববর্তী গেস্ট রুমে ঠিক সময়ে উপস্থিত থাকতে না পারায় শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করে রুম থেকে বের করে দেওয়া হয়।
বর্তমানে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মেহেদী ভয়ে হলে আসার সাহস পাচ্ছেন না বলে তার মামার বাসায় অবস্থান করছেন। কখনো হলে উঠতে পারবেন কি-না তা নিয়েও শঙ্কায় রয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর নাম ইমন। সে আন্তর্জাতিক ব্যাবসা (আইবি) বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের বিজয় একাত্তর হলের শিক্ষার্থী। রাজনীতিতে ইমন ছাত্রলীগের কুমিল্লা ব্লকের ক্যান্ডিডেট আনোয়ারুল কবির দীপুর অনুসারী এবং দীপু ছাত্রলীগের ঢাবি সভাপতি মাজহারুল কবির শয়নের অনুসারী।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, আজ শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে টিএসসিতে আয়োজিত এক প্রোগ্রামে সকলের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য গতকাল রাত ১১:৩০ মিনিটে গেস্ট রুম ডাকে কুমিল্লা ব্লকের ছাত্রলীগের নেতারা। এসময় মেহেদী দেরি করে গেস্ট রুমে প্রবেশ করায় ক্ষিপ্ত হন তার ইমিডিয়েট সিনিয়র ইমন। তখন মেহেদীকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করা হয়। কেন সে দেরি করে গেস্ট রুমে আসলো, কেনই বা সে নিয়মিত প্রোগ্রাম করে না এসব বলে অশ্লীল অকথ্য গালাগালি করতে থাকে ইমন।
গালাগালির একপর্যায়ে মেহেদীকে অনেকগুলো চড় থাপ্পড় মারেন ইমন। এতেও ক্ষ্যান্ত না হয়ে একপর্যায়ে গণরুমে গিয়ে মেহেদীর ব্যাবহৃত বেডিংপত্র, ট্রাংক ও অন্যান্য আসবাবপত্র বাইরে ফেলে দেন এবং মেহেদীকে হল থেকে বের করে দেন।
ভুক্তভোগীর বন্ধুদের মাধ্যমে জানা যায়, ঘটনার রাতে মেহেদী তার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সাথে ক্যাম্পাস ও আশেপাশে ঘুরাঘুরি করছিলো। যখন তাকে গেস্ট রুমে থাকার জন্য বলা হয় তখন সে আসতে একটু দেরি হবে বলে জানায়। কিন্তু সকল কিছু ফেলে তাকে সঠিক সময়ে গেস্ট রুমে থাকতে বলে ইমন। কিন্তু হলে ফিরতে ১৫ মিনিট দেরি হয় মেহেদীর। এতেই তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে অকথ্য গালিগালাজ করে চড় থাপ্পড় মারেন ইমন। পরবর্তীতে তার বেডিংপত্র ও অন্যান্য আসবাবপত্র বাইরে ফেলে দিয়ে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়।
এ সম্পর্কে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মেহেদী হাসানকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে ভয়ে কেঁদে ফেলেন তিনি এবং ভয়ে কিছু বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন এই ভেবে যে তাকে আর হলে উঠতে দেয়া হবে না কিংবা হলে প্রবেশ করলে আবার মারধর করা হতে পারে।
অভিযুক্ত শিক্ষার্থী ইমনের সাথে যোগাযোগ করতে চেয়ে কল করা হলে সাংবাদিক পরিচয় দেয়ায় তিনি কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ফোন কেটে দেয় এবং কিছুক্ষণ পরে কল দিলে বলেন, রাতে গেস্ট রুম ছিলো কিন্তু সেটা বাতিল হওয়ায় আমি গতকাল রাতে রুমেই ছিলাম। এসময় ভুক্তভোগী মেহেদীকে মেরে রুম থেকে বের করে দেয়ার ঘটনাকে অস্বীকার করেন।
হলের কুমিল্লা ব্লকের ক্যান্ডিডেট আনোয়ারুল কবির দিপু ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ঘটনা সম্পর্কে আমি অবগত নই। আমার কোরাম হবার পর থেকে তেমন কোন প্রোগ্রাম কিংবা গেস্ট রুম করানো হয় না। তবে আমি মনে করি ঘটনাটি অতিরঞ্জিত এবং বানোয়াট। তবুও যদি ঘটনা এমন কিছু হয়ে থাকে, যদি দুজনের মনোমালিন্যের কোন ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে আমি এর সুষ্ঠু সমাধান করে দেবো।
ছাত্রলীগের ঢাবি সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন বলেন, আমি এমন কোন ঘটনা শুনিনি, এখনই শুনলাম। যদি এমন কোন ঘটনা সত্যিই ঘটে থাকে আমি এর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে আমি বলবো তুমি নির্ভয়ে থাকো, আমরা এমন ঘটনায় আপোষহীন। তুমি আমার রুমে আসো আমি সব শুনে ঘটনার সত্যতা যাচাই করে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।
ঘটনা প্রসঙ্গে বিজয় একাত্তর হলের প্রাধ্যাক্ষ অধ্যাপক ড. আবদুল বাসির বলেন, এমন ঘটনা ভুক্তভোগী বা অন্য কেউ আমাকে জানায়নি। আমি আপনার মাধ্যমেই ঘটনাটি জানতে পারলাম। এই অপরাধ যেই করুক না কেন, সে যত বড় নেতাই হোক না কেন আমি কালই তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের এক আতঙ্কের নাম গেস্ট রুম। যেখানে ম্যানার শেখানোর নামে চলে অকথ্য গালিগালাজ, মাঝেমাঝে সিনিয়রদের কথা না শোনায় নির্যাতনের শিকারও হতে হয় জুনিয়র শিক্ষার্থীদের। এসময় জুনিয়রদের অন্যায় কাজ করতেও উদ্বুদ্ধ করেন অনেক সিনিয়র। তারই ছোট একটি উদাহরণ এই বিজয় একাত্তর হলের শিক্ষার্থী নির্যাতন।