ফোন রেকর্ড এডিট করে আমাকে ফাঁসানো হয়েছে: রাবি ছাত্রলীগ নেত্রী

আতিফা হক শেফা
আতিফা হক শেফা  © ফাইল ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের এ ছাত্রীকে নির্যাতন ও গণধর্ষণের হুমকির ঘটনায় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগের পাশাপাশি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন অভিযুক্ত মন্নুজান হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আতিফা হক শেফা। তার অভিযোগ, ফোন রেকর্ড এডিট করে অর্ধসত্য তথ্যের মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করে তাকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হচ্ছে। 

গতকাল রবিবার (৫ মার্চ) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর তিন পৃষ্ঠার একটি লিখিত অভিযোগসহ ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপের কিছু স্ক্রিনসট দেন শেফা। তারপর নিজের নিরাপত্তার জন্য থানায় জিডি করেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে দেওয়া লিখিত অভিযোগে আতিফা হক শেফা বলেন, গত ২৪ তারিখে একই ইনস্টিটিউটের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফাতিন নওয়াল নেহাল ফেসবুকে সিনিয়র শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে ‘অপমানজনক’ পোস্ট করলে, সেখানে ইনস্টিটিউটের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী লাবণ্য খান প্রজ্ঞা সিনিয়রদের উদ্দেশ্য করে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে। এর প্রেক্ষিতে ফোন কলের মাধ্যমে আমি তার সাথে (নেহাল) প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে পোস্টের কারণ সম্পর্কে জানতে চাই। কিন্তু সে আমার কথা গ্রাহ্য না করে ওই দিন মধ্যরাতে সকল সিনিয়রকে উদ্দেশ্য করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে তার ফেসবুক আইডি থেকে একটি 'মাই ডে' দেয়।

অভিযোগপত্রে শেফা বলেছেন, উক্ত ফেসবুক পোস্ট এবং মাই ডে‘র প্রেক্ষিতে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি আনুমানিক সকাল ১০টায় শেখ রাসেল মাঠের পুকুর পাড়ে নেহালকে ডাকা হয়। ব্যাচের অন্য শিক্ষার্থীরা সেখানে উপস্থিত হওয়ার আগে থিমি এবং আমার সাথে সিরাজী ভবনের সামনে নাসিরের চায়ের দোকানে নেহালের প্রথমে কথা হয়। সিনিয়র আপু হিসাবে আমি তাকে বোঝাতে থাকি যে, এই কাজটি তার করা ঠিক হয়নি। কিন্ত সে আমাদের সামনেই ‘আমি সিনিয়রদের কাওকেই ... না’ বলে গালি দেয়, উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমাকে উত্তেজিত করে এবং সে কথা গুলো রেকর্ড করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।

অভিযোগপত্রে শেফা বলেন, ব্যক্তিগতভাবে লাবণ্য খান প্রজ্ঞার সাথে আমার কোন যোগাযোগ হয়নি। তাকে আমি কোনদিন ফোন দেইনি, মেসেজ করিনি। আর আমি যেদিন ব্যাচ অনুযায়ী প্রজ্ঞার সাথে বসি, সেখানে আমি কোন প্রকার বাজে মন্তব্য করিনি কিংবা তার সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ রাখিনি। তা সত্ত্বেও আমার রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উদ্দেশ্যেমূলক ভাবে ছড়িয়ে দিয়ে আমার বেঁচে থাকার সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে।

শেফা আরও বলেন, ২৫ ফেব্রুয়ারি এক পর্যায়ে নেহাল তার সিনিয়র আতিকুর রহমানকে উদ্দেশ্য করে বলে ‘হ্যাঁ ভাই মাইডে তে উল্লেখিত আপনাদের ...না।’ এমতাবস্থায়, আতিকুর রহমান ও নেহালের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হতে থাকে এবং নেহাল আতিকুর রহমানের টি-শার্টের কলার ধরে টানাটানি করে। পরবর্তীতে আমি নেহালকে বোঝানোর চেষ্টা করলে তৎক্ষণাৎ নেহাল ঔদ্ধত্য হয়ে আমার গায়ে অশালীনভাবে হাত দেয় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যাড টাচ করে। উক্ত বিষয়টি একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী দেখেন।

এছাড়া অভিযোগে শেফা আরও বলেছেন, ঘটনার পরদিন নেহালের মা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে কল দিয়ে আতিকুর রহমানকে হত্যার হুমকি দেয়। সেখানে তিনি বলেন, আমার বাসা রাজশাহীতে। আমি তোমাকে যে কোন সময় গুম করে দিবো।' তারপর আতিক আতঙ্কিত হয়ে ফোন কেটে দেয়। এছাড়া সেদিন সিরাজী ভবনের সামনে অবস্থিত নাসিরের চায়ের দোকানে প্রজ্ঞা, তাজনোভা সরকার থিমির শারীরীক গঠন নিয়ে কুৎসিত মন্তব্য করে।

শেফা বলেন, এছাড়াও আমার অজান্তে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে করা রেকর্ড এডিট করে সাংবাদিকদের কাছে পৌঁছে দেয় নেহাল এবং প্রজ্ঞা। সারাদেশে আমার ছবি ব্যবহার করে, অর্ধ-সত্য তথ্য পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে, আমাকে রেপিস্ট সজিয়ে যে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে আমি মানসিকভাবে পুরো ভেঙ্গে পড়েছি এবং আমার মনে হচ্ছে আমার আর বেঁচে থাকার কোন মানে নেই। অতিরিক্ত ডিপ্রেশনের কারণে আমার আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতএব, আমি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

লিখিত অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, আমাকে দুই পক্ষই লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের জন্য আমি অভিযোগ দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জিডির বিষয়ে জানতে চাইলে মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, গতকাল আতিফা হক শেফা থানায় জিডি করেছেন। আমরা কোর্টে আবেদন জানিয়েছি। এবার আমরা তদন্ত শুরু করব।

উল্লেখ্য, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক ছাত্রীকে গালিগালাজ, শারীরিক নির্যাতন ও বন্ধুদের দিয়ে গণধর্ষণের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তিন ছাত্রলীগ নেতা-নেত্রীসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয় ভুক্তভোগী ছাত্রী। 

এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন মন্নুজান হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আতিফা হক শেফা ও আরেক সহ-সভাপতি তাজনোভা থিমী, সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আতিকুর রহমানসহ ওই বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান, শাহবাজ আহমেদ তন্ময় ও আকাশ মাহবুব। এ ঘটনায় বিভাগের অভিযোগ তদন্ত কমিটির সভাপতি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টার কাছে লিখিত অভিযোগও দেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। 


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence