যবিপ্রবি প্রক্টরের বিরুদ্ধে ঢাবি শিক্ষক ও খেলোয়াড়দের হেনস্থার অভিযোগ

লোগো
লোগো  © ফাই

আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় টেবিল টেনিস প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) অবস্থান করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) খেলোয়াড়সহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের হেনস্তা ও উগ্র ভাষায় গালমন্দের অভিযোগ উঠেছে যবিপ্রবি প্রক্টর ড. হাসান মোহাম্মদ আল ইমরানের বিরুদ্ধে। গত মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) যবিপ্রবির কেন্দ্রীয় জিমনেসিয়ামে এই ঘটনা ঘটে।

পরে মঙ্গলবার (১ মার্চ) সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে ফাইনালিস্ট ঘোষনা করে। সর্বশেষ যবিপ্রবিকে চ্যাম্পিয়ন এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে রানার্সআপ ও ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়কে দ্বিতীয় রানার্সআপ ঘোষণা করে যবিপ্রবি কর্তৃপক্ষ।

টেবিল টেনিস প্রতিযোগিতায় সেমিফাইনাল খেলা পুনরায় খেলতে না চাওয়ায় ক্ষমতাবলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে ফাইনালিস্ট ঘোষণা করাকে অবৈধ দাবি করেছেন ঢাবি খেলোয়াড়রা। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) কাছে টেবিল টেনিস  ও ব্যাডমিন্টন ইভেন্টের  ফিকচার তৈরিতে অসমতা, চরম অনিয়ম, নিজেদের মনগড়া এবং নিয়ম বহির্ভূতভাবে খেলা পারিচালনা করে চরম অদক্ষতা এবং দুর্নীতি অভিযোগ তুলে আগামি ১০ বছরের জন্য যবিপ্রবিকে আন্ত:বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রতিযোগিতা থেকে বহিষ্কার করার জন্য দাবি জানিয়েছেন তারা। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার সকালে যবিপ্রবির জিমনেসিয়ামের টেবিল টেনিস গ্রাউন্ডে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এই খেলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২-১ ম্যাচে জয়ী হয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে।

তবে কিছুক্ষণ পরেই চবির খেলোয়াড়রা খেলায় আম্পায়ারের পক্ষপাতিত্ব ও অসঙ্গতিপূর্ণ আচরণের দাবি তুলে লিখিত অভিযোগসহ পুনরায় খেলার অনুরোধ জানায়। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পুনরায় খেলতে অস্বীকৃতি জানায়। এর জের যবিপ্রবি প্রক্টর ড. হাসান মোহাম্মদ আল ইমরান ঢাবিকে জয়ের পরেও বাদ দিয়ে চবিকে ফাইনালিস্ট ঘোষণার পাশাপাশি ঢাবির খেলোয়াড় ও শিক্ষকদেরকে হেনস্তা এবং উগ্রভাষায় গালমন্দ করেন।

আরও পড়ুন: আইডিয়াল-ঢাকা কলেজ সংঘর্ষে এক শিক্ষার্থী আহত

ঘটনার সূত্রপাত হয় সেমিফাইনাল ম্যাচের পরেই। চট্টগ্রাম বিশ্বিবদ্যালয়ের খেলোয়াড়রা ২-১ ম্যাচে হেরে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলোয়াড়দের সাথে আলিঙ্গনের মাধ্যমে মাঠ ত্যাগ করে। তবে খেলা শেষ করে মাঠ ত্যাগের প্রায় ১৫-২০ মিনিট পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবু সুফিয়ান নামের এক ছাত্রের উসকানিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অভিযোগ করে যে, ৩য় ম্যাচের ৫ম সেটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলোয়াড়রা  ৪টা সার্ভ পর পর করে  যদিও ২টি সার্ভ করার নিয়ম।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রের মোবাইলে ধারণ করা রেকর্ড নিয়ে তারা লিখিত অভিযোগ করেন। তবে আম্পায়ার খেলা শেষ করে দেওয়ার কথা বলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলোয়াড়রা পুনরায় খেলতে অসম্মতি জানায়। ঢাবি খেলোয়াড়রা দাবি করেন খেলার কোন অভিযোগ যদি করতে হয় তাহলে ম্যাচ চলাকালীন সময়ে করতে হবে। এই নিয়ম ‘আইটিটিএফ’ এবং ‘বিটিটিএফ’ দ্বারা অনুমোদিত। 

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে চঞ্চল নামের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক খেলোয়াড় জানান, মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে খেলা শেষের পরে আমাদেরকে পুনরায় খেলার কথা বললে আমরা কর্তৃপক্ষকে অস্বীকৃতি জানাই। পরবর্তী দিন সকালে মাঠে যাওয়ার পর কর্তৃপক্ষ তাদের জানায় ঢাবিকে পুনরায় সেমিফাইনাল ম্যাচ খেলতে হবে। এতে ঢাবি ফের অস্বীকৃতি জানালে যবিপ্রবি ঢাবিকে বাদ দিয়ে চবিকে রানার্সআপ ঘোষণা করে এবং যবিপ্রবি নিজেদের চ্যাম্পিয়ান ঘোষণা করে। দ্বিতীয় রানার্সআপ ঘোষণা করা হয় ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়কে।

অভিযোগ উঠেছে, সম্পূর্ণ অদক্ষ ও অক্ষম আম্পায়ার দ্বারা ম্যাচ পরিচালনা করেছে বিনা সম্মানিতে। যেখানে ফেডারেশন কর্তৃক স্বীকৃত আম্পায়ার দ্বারা খেলা পরিচালনা করার নিয়ম রয়েছে। তবে এই অদক্ষতার ভার আম্পায়ার বা যবিপ্রবি কর্তৃপক্ষের কাঁধে না দিয়ে সকল দোষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

যবিপ্রবি প্রক্টরের ভাস্যমতে পুনরায় সেমিফাইনাল খেলতে বারবার আপত্তি করায় ঢাবি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের হেনস্থা করেন বলে অভিযোগ করেন ঢাবির প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। নিয়ম অমান্য করা খেলা পরচালনা করে চরম অদক্ষতা এবং দুর্নীতির অভিযোগ তোলে আগামি ১০ বছরের জন্য যবিপ্রবিকে আন্ত:বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রতিযোগিতা থেকে বহিষ্কার করার জন্য দাবি জানানো হয়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে যবিপ্রবির প্রক্টর ড. হাসান আল ইমরান বলেন, তারা যেই অভিযোগ করেছে সেটা পুরোপুরিই মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। সেমিফাইনাল ম্যাচে আম্পায়ারের অসতর্কতার কারণে খেলার অসঙ্গতি নিয়ে খেলার পরবর্তীতে চবি নিয়ম মোতাবেক লিখিত অভিযোগ দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এর সত্যতাও পায়।

এ কারণে পরবর্তীতে ঢাবিকে পুনরায় ম্যাচ খেলার কথা বললে তারা গড়িমসি করে এবং একপর্যায়ে পরবর্তী দিন পুনরায় সেমিফাইনাল ম্যাচ খেলার কথা জানিয়ে মাঠ ত্যাগ করে। তবে পরবর্তী দিন ঢাবির খেলোয়াড়রা মাঠে এসে পুনরায় খেলতে অস্বীকৃতি জানায় এবং খেলাতেও বাঁধা দেয়। তাই কর্তৃপক্ষ নিয়ম মোতাবেক ঢাবি টিমকে ওয়াকওভার দেখিয়ে খেলার অবশিষ্ট অংশ শেষ করে।


সর্বশেষ সংবাদ