ভিসি অফিসে ভাঙচুরের পর শাটলের চাবি নিয়ে গিয়েছিল ছাত্রলীগ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

নিজেদের পছন্দের প্রার্থী নিয়োগ না পাওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ভিসি কার্যালয়ে ভাঙচুরের পর শাটল ট্রেন আটকে চাবি নিয়ে গেছে শাখা ছাত্রলীগের কর্মীরা। মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) শহর অভিমুখে রওনা করা শাটল অবরোধ করে সংগঠনটির নিষিদ্ধ বগিভিত্তিক উপগ্রুপ কনকর্ড অনুসারীরা। এ সময় ফতেয়াবাদ রেল স্টেশনে ট্রেনটি পৌঁছালে অবরোধকারীরা চাবি নিয়ে চলে যায়। এতে বিপাকে পড়েন শহরগামী হাজারো শিক্ষার্থী।

অবরোধের বিষয়টি স্বীকারও করেছেন শাখা ছাত্রলীগের কর্মসূচি, পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ও কনকর্ড নেতা তাসনিমুল বশর সাদাফ। তিনি জানিয়েছেন, আমরা প্রক্টর অফিসে গিয়েছিলাম। তিনি আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন। তাই ট্রেন আটকিয়েছি। আমাদের সিনিয়ররা প্রক্টরের সঙ্গে কথা বলছেন। সমাধান হলে ছেড়ে দেব।

এদিন শহর অভিমুখে রওনা করা শাটল অবরুদ্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েন শিক্ষার্থীরা। তারা ক্লাস শেষে যথাসময়ে বাসায় ফিরতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিগত কয়েকমাস ধরেই নানা কারণে সংঘর্ষসহ বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে শাখা ছাত্রলীগ। সংগঠনটির এমন আচরণে অনেকটা বিপাকে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি তাদের।

শাখা ছাত্রলীগের আচরণে ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা

বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মাদ রাকিব বলেন, চবিতে ভর্তি হওয়ার পর অনেক কষ্টে একটা টিউশন ম্যানেজ করেছি। কিন্তু অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও শহরে যেতে পারিনি। অথচ আজ আমার টিউশনে প্রথম মিট করার কথা ছিল।

আরও পড়ুন: চাকরি না পেয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলা, চবিতে তদন্ত কমিটি

আইন বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, কিছু হলেই ছাত্রলীগের নেতারা শাটল আটকে দিচ্ছে। এতে যারা শাটলে নিয়মিত যাতায়াত করেন তারা দীর্ঘসময় অপেক্ষা করেও শহরে যেতে পারছে না। ক্যাম্পাস থেকে যথাসময়ে ফিরতে না পারলে সবকিছুই এলোমেলো হয়ে যায়।

জানা যায়, রাইয়ান আহমেদ নামে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের একজন সদস্য শিক্ষক নিয়োগপ্রার্থী ছিলেন। তবে তিনি মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়ায় বাদ পড়ে যান। গত সোমবার (৩০ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৪১তম সিন্ডিকেট সভায় রাজনীতি বিজ্ঞান, ইসলামিক স্টাডিজ, মেরিন সায়েন্সেস এবং ফিশারিজসহ বিভিন্ন বিভাগের সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীদের নিয়োগ অনুমোদন করা হয়। সভা শেষে উপাচার্যের কার্যালয়ের বাইরে ভাঙচুর করা হয়।

এদিন ক্যাম্পাসে ভিসি কার্যালয়ে ভাঙচুরের পর শাটল ট্রেন সাড়ে পাঁচটার দিকে ফতেয়াবাদ গেলে চাবি নিয়ে আটকে দেয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। দীর্ঘ সময় পরে চাবি দিলে শাটল ক্যাম্পাসে ফিরে আসে। পরে ক্যাম্পাসে ট্রেন ফিরে আসলে স্টেশন থেকে ফের চাবি নিয়ে যায় ছাত্রলীগের কর্মীরা। প্রায় দুই ঘন্টা পরে আবার চাবি দিলে শাটল শহরের উদ্দেশ্য ছেড়ে যায়।

শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সংরক্ষণের পরিবর্তে ভোগান্তি তৈরি করা ছাত্র সংগঠনের কাজ নয় বলে মনে করছে ছাত্রদল। শাখা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ইয়াসিন বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপকার না করলেও ক্ষতি করার অধিকার ছাত্রসংগঠনের নেই। যারা শাটল বন্ধ করে দেয় এবং শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিতে ফেলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা প্রয়োজন।

'শিক্ষার্থীদের ক্ষতি করার অধিকার ছাত্রলীগের নেই'

শাখা ছাত্রলীগের এমন আচরণের সমালোচনা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষকরাও। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের শিক্ষক অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, ছাত্রলীগ হোক আর যেইহোক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাঙচুর করার অধিকার কারো নেই। বিশ্ববিদ্যালয় জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পরিচালিত হয়। উপাচার্য কিংবা সিন্ডিকেট সদস্যের উপরে রাগ কিংবা ক্ষোভ থেকে কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাঙচুর করতে পারেনন না।

আরও পড়ুন: চবি ছাত্রলীগ ও ছাত্র অধিকারের ১৮ নেতা-কর্মী বহিষ্কার

তিনি বলেন, উপাচার্যের উপরে আচার্য আছেন। যদি যোগ্য কাউকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া না তাহলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এর প্রতিবাদ করা দরকার। কিন্তু যা ভাঙচুর করেছে সেটা জনগণের ক্ষতি করেছে। এটা উপাচার্য কিংবা সিন্ডিকেট সদস্যের সম্পত্তি নয়। তারা ট্রেনের চাবি নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা শিক্ষার্থীদের আটকে রেখেছে। এতে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হয়েছে। এই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের হতে পারে না।

শাটল ট্রেন আটকে দেওয়ার বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শাটল কারা বন্ধ করে দিয়েছে এবং তারা ছাত্রলীগের সাথে জড়িত কি-না এবিষয়ে তদন্ত করার জন্য আমরা একটি কমিটি গঠন করে বিষয়টা খতিয়ে দেখবো। যারা এতে জড়িত তাদের নাম কেন্দ্র পাঠিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেব। 

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, ভিসি কার্যালয়ে ভাঙচুরের বিষয়ে খুব শিগগিরই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। সিসিটিভি ফুটেজসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো তদন্ত কমিটি যাচাই-বাছাই করবেন। এখন পর্যন্ত কাউকে শনাক্ত করা গেছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রক্টর বলেন, তদন্তের স্বার্থে আমরা বিষয়গুলো এখন বলতে চাই না।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখ্তার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, নিয়োগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাঙচুরের মতো একটি অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। যারা এ ঘটনায় জড়িত তাদের বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া যারা শাটল আটকে দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে প্রক্টরিয়াল বডি কাজ করছেন। আপনারা শিগগিরই ফলাফল দেখবেন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence