জাবি শিক্ষকের যৌন হয়রানির অভিযোগের তদন্ত নিয়ে ‘লুকোচুরি’র অভিযোগ

জাবি শিক্ষকের যৌন হয়রানির অভিযোগের তদন্ত নিয়ে ‘লুকোচুরি’র অভিযোগ
জাবি শিক্ষকের যৌন হয়রানির অভিযোগের তদন্ত নিয়ে ‘লুকোচুরি’র অভিযোগ  © টিডিসি ফটো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান জনির যৌন হয়রানির তদন্ত নিয়ে লুকোচুরির অভিযোগ তুলেছেন প্রগতিশীল শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি তারা এ ঘটনার সঠিক ও দ্রুত তদন্ত দাবি করেছেন।

মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে উপাচার্যের সাথে সাক্ষাতকালে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর একাংশ এ অভিযোগ আনেন।

সাক্ষাত শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মাহমুদুর রহমান জনি ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ছাত্র রাকিব আহমেদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্তে স্পষ্টত লুকোচুরি করছে।

এসময় দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘আমরা জেনেছিলাম গত বছরের ৮ই ডিসেম্বরে জনির বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। তবে এক মাস অতিবাহিত হলেও তদন্ত কাজ শুরু হয়নি। অথচ আজকে জানলাম সিন্ডিকেট কর্তৃক কোন তদন্ত কমিটিই গঠিত হয়নি। সিন্ডিকেটের রেজ্যুলেশনে তদন্ত কমিটি গঠনে উপাচার্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এরপর আরও একটি সিন্ডিকেট সভা হলেও উপাচার্য তদন্ত কমিটি গঠন করেননি। পরে, মাসখানেক সময় অতিবাহিত হলে একটি প্রাথমিক কমিটি গঠন করেছে। অথচ কথা ছিলো সিন্ডিকেট থেকে স্ট্রাকচারাল কমিটি গঠনের।’

মাহমুদুর রহমান জনিকে শিক্ষকতা থেকে অপসারণের দাবি জানিয়ে অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিবিধি অনুসারে জনি ইতোমধ্যে নৈতিক স্খলনের কারণে শিক্ষক হওয়ার অযোগ্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। তার যৌন নিপীড়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর কালিমা লেপন করেছে।’

ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক অনীছা পারভীন জলি বলেন, ‘জনির বিরুদ্ধে একটি পক্ষপাতমূলক দলীয় কমিটি গঠন হয়েছে। যাদের থেকে ন্যায় বিচার আশা করা কঠিন। এছাড়াও রাকিব আহমেদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিচার নিয়েও একটা গড়িমসি আমরা লক্ষ্য করেছি।’

তদন্তে লুকোচুরির বিষয়ে হুশিয়ারি জানিয়ে অনিচ্ছা পারভীন বলেন, ‘এই দুটি ঘটনার দ্রুত বিচার হওয়া প্রয়োজন। বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো। অচিরেই একটি মোর্চা গঠন করা হবে। শীঘ্রই আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে। আমরা চাই না বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন নিপীড়কের কারণে শিক্ষার্থীরা অনিরাপদ হোক।’

সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন দর্শন বিভাগের অধ্যাপক কামরুল আহসান, ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আনীছা পারভীন, সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচী, ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক আলিফ মাহমুদ, ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক কনোজ কান্তি রায়সহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

এর আগে মাহমুদুর রহমান জনির বিরুদ্ধে যৌন কেলেঙ্কারি ও অনৈতিকভাবে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তারের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ার খসরু পারভেজকে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে এ মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। অন্যদিকে, গত ৯ই জানুয়ারি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিব আহমেদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত রিপোর্ট উপাচার্য বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।

অধ্যাপক আনোয়ার খসরু পারভেজ বলেন, ‘আমি কয়েকদিন আগে তদন্ত কমিটির চিঠি পেয়েছি।’

অভিযোগের ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম বলেন, ‘কিছু প্রক্রিয়াগত কারণে আমাদের দেরি হয়েছে। কিন্তু দেরিতে হলেও প্রাথমিক সত্যাসত্য তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। আশা করি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত শেষে সঠিক বিচার সম্পন্ন হবে।’

প্রসঙ্গত, গতবছরের ৮ই ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সিন্ডিকেট সদস্য জনির বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন।