আপোষহীনতার পঞ্চাশ বছরে জাবিসাস

আপোষহীনতার পঞ্চাশ বছরে জাবিসাস
আপোষহীনতার পঞ্চাশ বছরে জাবিসাস  © টিডিসি ফটো

৫০ বছর বা অর্ধশতাব্দী মহাকালের হিসাবে কিছু কম হলেও একটি সংগঠনের জন্য তা অনেক বেশি। এই সময়ে একটি বৃক্ষ চারা যেমন পত্র পল্লবে, ফুলে-ফলে বিকশিত হয় তেমনি বিকশিত হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি যা সংক্ষেপে জাবিসাস নামে পরিচিত। এই সংগঠনটি স্বাধীন বাংলাদেশের ক্যাম্পাসভিত্তিক প্রথম সাংবাদিক সংগঠন হিসেবে স্বীকৃত। গত ৩ এপ্রিলে পঞ্চাশ বছরে পা রেখেছে এই সংগঠনটি। চলুন জেনে নেয়া যাক ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার পুরোধা এই সংগঠনটি সম্পর্কে।

শুরুটা চ্যালেঞ্জিং মুহূর্তে: চারিদিকে তখন ফিনিক্স পাখির মত জেগে উঠবার লড়াই। সবকিছু নতুন করে সাজাবার প্রচেষ্টা। ভস্মস্তূপ থেকে নতুন করে পথ চলতে শুরু করেছে গোটা দেশ। সেই লড়াইয়ে যেন যুক্ত হল নতুন মাত্রা। সাতজন সদস্য নিয়ে সূচনা হয়েছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (জাবিসাস) নামের ক্যাম্পাস ভিত্তিক সাংবাদিক সংগঠন। আল বেরুনী হলের ক্যান্টিনের পাশে একটি রুমে কয়েকটি চেয়ার ও টেবিল নিয়েই যাত্রা শুরু। সভাপতি পরিসংখ্যান বিভাগের ১ম ব্যাচের রাশেদ আহমেদ আলী, সম্পাদক একই ব্যাচের অর্থনীতি বিভাগের আবুল কাসেম। এই প্রচেষ্টায় সহযোগীতা করেছিলেন তৎকালীন উপাচার্য বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী। সেদিনের সেই চিত্র যেন আজ শুধুই স্মৃতি। যুগের পরিক্রমায় সদস্যদের আন্তরিকতা, কর্মনিষ্ঠা আর উদ্যমের জন্য বর্তমানে জাবিসাসের রয়েছে দৃষ্টিনন্দন কার্যালয়, পাল্টে গেছে সেই চিত্র।

মিথ ভেঙে সত্যের সারথী: দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শুধু নয় বরং সর্বত্র একটি রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, ‘নিজেদের নেতিবাচক বিষয়গুলো উপস্থাপন করা যাবে না। এতে মানহানি ঘটবে-লোকে খারাপ বলবে’। বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা মিথ ভেঙে সাহসের সাথে সত্যকে তুলে ধরেছে। তারা বার বার প্রমান করেছে ‘সত্য যত তিক্তই হোক তা বলতে হবে দেশ ও জাতির কল্যাণে’। আমরা দেখেছি ঢাকা শহরের অদূরে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জন্ম নিয়েছে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করা ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলন। যে আন্দোলনের প্রেক্ষিতে মহামান্য উচ্চ আদালত সব বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল গঠনের রুল জারি করতে বাধ্য হয়েছিল। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে সংগঠিত যেকোন অনিয়ম-দুর্নীতি প্রকাশে জাবিসাসের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। 

অ্যাক্টিভিজম নয়, পেশাদারিত্ব: জাবিসাস তার শুরু থেকেই সবকিছুর উপরে পেশাদারিত্বকেই প্রাধান্য দিয়েছে। কোন এজেন্ডা সৃষ্টি কিংবা বাস্তবায়ন নয় বরং সংগঠনটির কার্যক্রমে ফুটে উঠেছে সততার সাথে সত্যকে তুলে ধরার দীপ্ত প্রয়াস। এই সাংবাদিক সংগঠনটি উদাহরণ সৃষ্টি করেছে কিভাবে মোকাবেলা করতে হয় সুবিধাবাদী শ্রেণীকে, কিভাবে দাড়াতে হয় বঞ্চনার শিকার মানুষের পাশে। পড়াশুনার পাশাপাশি সংগঠনটির প্রত্যেক সদস্য এখনও ‘সাদাকে সাদা বলার সংগ্রামটুকুই করে যাচ্ছেন।’ স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে অকপটে বলছেন নানা অনিয়মের কথা। 

আরও পড়ুন: সাংবাদিক খুনের ঘটনায় মাত্র ১৪ শতাংশ অপরাধীর বিচার হয়

আপোষহীন পথচলা: শুরু থেকে আজ পর্যন্ত জাবিসাসের ইতিহাস পুরোদস্তুর ‘আপোষহীনতার ইতিহাস’। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলন, সর্বশেষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংঘটিত আন্দোলনে জাবিসাসের আপোষহীন এবং বস্তুনিষ্ঠ অবস্থানের কারণেই পত্রিকার পাতায় ওঠে এসেছে প্রকৃত ঘটনা। এই পথচলায় নানা ঘাত প্রতিঘাত সত্ত্বেও জাবিসাস বজায় রেখেছিল তার পেশাদারিত্ব ও ন্যায়সঙ্গত অবস্থান। বস্তুনিষ্ঠটা রক্ষার্থে ক্যারিয়ার ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তুলে ধরেছেন বিশ^বিদ্যালয়ের কল্যাণের কথা। জাবিসাস এভাবেই সাহসিকতার প্রদীপ জ্বেলে আলোকোজ্জ্বল সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ^বিদ্যালয়ের সকল সুবিধাবঞ্চিতদের অধিকার রক্ষায় অটুট আছে সত্যের পথে। সংগঠনটি প্রমাণ করেছে আপোষহীন পথচলায় সংকট আসতে পারে, সেই সংকট মোকাবেলা করে সত্য বলতে পারলে তা ইতিহাসের আয়নায় চির ভাস্বর হয়ে থাকে। 

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পুরোধা: সাংবাদিক সংগঠন হিসেবে জাবিসাস গতানুগতিক কাজের বাইরেও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে জারি রাখতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু করেছেন সেরা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার। প্রত্যেকবছর সেরা অনুসন্ধানী সংবাদগুলোকে দেশসেরা সাংবাদিকদের বিচারের ভিত্তিতে পুরস্কৃত করা হয়। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার প্রতি উৎসাহিত করতে জাবিসাস এই উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। 

অধিকার আদায়ে অগ্রণী: সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে জাবিসাস ছিল সর্বদায় সোচ্চার। যে কোন সংকটে এর অবস্থান ছিল চোখে পড়ার মত। কোন সাংবাদিক আক্রান্ত হলে প্রতিবাদের ঝড় তুলে পাশে দাড়ায় সংগঠনটি। সকল হুমকি ও রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে দলমত নির্বিশেষে জাবিসাস হয়ে উঠেছে সাংবাদিকদের গ্রহণযোগ্য ও নিরাপদ আশ্রয়স্থল। 

গণতান্ত্রিক নেতৃত্বের ক্রমধারা: সূচনালগ্ন থেকে সংগঠনটি পরিচালিত হয়ে আসছে গণতান্ত্রিক ধারায়। এই পর্যন্ত ৪০টি কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত হয়েছে সদস্যদের ভোটে। যা দেশের ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা ও নেতৃত্ব বাছাইয়ে অনন্য নজির। এখান থেকে সাংবাদিকরা বর্তমানে দেশে-বিদেশে বড় বড় মিডিয়ায় নেতৃত্ব দিচ্ছে। সংগঠনটি সফলতার মূলে ও যোগ্য নেতৃত্ব তৈরীতে বিরাট ভূমিকা রাখছে।

শিখনেই সীমাবদ্ধ নয়: দক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিক তৈরিতে বদ্ধপরিকর সংগঠনটি। যার প্রমাণ বিগত দিনের সাংবাদিকতার প্রশিক্ষণ কর্মশালাগুলো। যেখানে দেশি ও বিদেশি মিডিয়ার নামকরা সাংবাদিকরা প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। এছাড়া দেশের সাংবাদিকতার শিক্ষকদের নিয়েও আয়োজন করা হয়েছে বহু প্রশিক্ষণ কর্মশালা। যা প্রকৃত দক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিক তৈরিতে মাইলফলক হিসেবে ভূমিকা রাখছে। 

প্রগতিশীলতার অনন্য প্ল্যাটফর্ম: সংস্কৃতিমনা ও প্রগতিশীল মানুষ তৈরির অনন্য মঞ্চ হিসেবে কাজ করছে সংগঠনটি। যার ধারায় জাহাঙ্গীরনর পরিচিতি পেয়েছে সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে। এখানে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন। এখানে বছরজুড়েই থাকে শিল্প ও সংস্কৃতি চর্চার নানা অনুষ্ঠান। সাংবাদিকরা এ অনুষ্ঠানগুলো আন্তরিকতার সাথে সংবাদ মাধ্যমে উপস্থাপন করে। 


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence