চবিতে বাকি খেয়ে টাকা দেননা শিক্ষার্থীরা, হোটেল মালিকদের মাথায় হাত

হোটেল মালিক ওলি আহমেদ
হোটেল মালিক ওলি আহমেদ  © টিডিসি ফটো

‘ছাত্রদের আর বাকিতে খাওয়ানো আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। আমার বিকাশ নাম্বারটা দিয়ে গেলাম। যারা আমার হোটেল থেকে বাকিতে খেয়েছেন তারা প্রত্যেকেই জানেন, কে কত খেয়েছেন। সুতরাং আখিরাতের কথা চিন্তা করে হলেও তারা আমার টাকাগুলো দিয়ে দিক।’ -কথাগুলো হোটেল মালিক ওলি আহমেদের। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শাহজালাল হলের সামনে অবস্থিত প্রয়াস হোটেলের মালিক।

শিক্ষার্থীদের বাকি খেয়ে টাকা না দেওয়ার সংস্কৃতি ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু হলের ডাইনিংই নয়, এবার হোটেল ছাড়তে বাধ্য হলেন মালিক ওলি আহমেদ।

আরও পড়ুন: যেকোন সময় ৪০তম বিসিএসের গেজেট প্রকাশ

সপ্তাহ খানেক ধরে বন্ধ ‘প্রয়াস হোটেল’। ১৯৮৮ সালে বরিশাল জেলা থেকে আয়ের উৎসের খোঁজে চবি ক্যাম্পাসে স্বপরিবারে ছুটে এসেছিলেন মালিক ওলি আহমেদ। কিন্তু পাঁচ ছেলের জনক এই হোটেল মালিক বিগত পাঁচ ছয় বছর ধরে ব্যবসায় ভালো করতে পারছিলেন না। তার অভিযোগ, শিক্ষার্থীরা বাকিতে খেয়ে যায়, কিন্তু পরে আর টাকা দেয় না। এর মধ্যে কিছু রাজনৈতিক দলের কর্মীরাও রয়েছে।

তার অভিযোগ, গত পাঁচ ছয় বছরে তার হোটেলে প্রায় চার থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা শুধু বাকিই পড়েছে। যে টাকা দেওয়ার কোন নাম-গন্ধও নেই। যার কারণে তিনি ব্যবসায় অনেক বড় রকমের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তাই তার কাছে দোকান ছেড়ে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না।

এর মধ্যে তার এক ছেলের মাথায় টিউমার ধরা পড়ায় সে ছেলেকে নিয়ে তিনি এখন ঢাকার একটি হাসপাতালে অবস্থান করছেন।

হোটেল মালিক ওলি আহমদ বলেন, ‘প্রায় ৩৫ বছর ধরে আমি এখানে ব্যবসা করে আসছি। হোটেল চালিয়ে কোনরকম খেয়ে-পরে কাটিয়ে দিতাম। কিন্তু ইদানীং তা-ও পারছি না। আনুমানিক প্রায় চার-পাঁচ লাখ টাকা বাকি থাকলে হোটেল চালাব কীভাবে? কি দিয়ে বাজার করব আর কি দিয়েই বা নিজেরা চলব?’

আইন বিভাগের অধ্যাপক মোঃ. জাকির হোসেন ফেসবুকে এক পোস্টে বলেন, ‘ক্ষুধার্ত আপনাকে অলি আহমেদ নিজের অর্থ খরচ করে রান্না করে খাইয়েছেন। আপনার বকেয়া পরিশোধ করে সর্বস্বান্ত অলি আহমেদের পাশে দাঁড়ানো আপনার আইনগত, নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব। অন্যথায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় পাস করলেও মনুষ্যত্বের পরীক্ষায় আপনি চূড়ান্তভাবে অকৃতকার্য।’

চবির সাবেক শিক্ষার্থী চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফ বলেন, ‘কি নিষ্ঠুর আমাদের ছাত্রদের মন। এত কষ্ট করে বাজার করে রান্না করে যারা খাওয়াচ্ছে আমরা তাদের প্রাপ্য টাকাটা পর্যন্ত দিই না! অনেকে অলি ভাই কিংবা হলের ক্যান্টিনের মালিকের জন্য মন খারাপ করছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে মন আমারও খারাপ।’

তিনি আরও বলেন, ‘একসময় এরাইতো বিসিএস ক্যাডার হবে, পুলিশ, কাস্টমস, ট্যাক্স ক্যাডারের কর্মকর্তা কিংবা আমার মত বিচারক হবে। কেউ কেউ শিক্ষক হবে। সরকারি বেসরকারি বড় বড় পদে বসবে। তখন এরা টাকার লোভ সামলাবে কি করে? অন্যের হক তাদের কাছে নিরাপদ থাকবে কি করে?’

চবি ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ. আখতার হোসেন বলেন, ‘আমাদের প্রায় সবগুলো দোকানেই বাকি আছে। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের পরিচয় দিয়ে অনেকেই বাকি ও ফাও খেয়ে চলে যায়। দোকানদারেরা কিছু বলতে পারে না। কেননা, পরে তাদের বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যার কারণে, অতিরিক্ত বাকির ভারে ওলি ভাইকে শেষ পর্যন্ত ক্যাম্পাস ছেড়েই চলে যেতে হয়েছে।’

এর আগে গত ৩ অক্টোবর ‘দয়া করে সকলে নগদ খান, আমি বাজার করতে পারিনা’ লিখে ক্যাশ কাউন্টারের সামনে টাঙিয়ে দিয়েছিলেন চবির আলাওল ও এ এফ রহমান হলের ক্যান্টিন ম্যানেজার হেলাল হোসেন (৬০)।

এছাড়া আলাওল হলের সাবেক ম্যানেজার ইকবাল হোসেনও ছাত্রদের কাছ থেকে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা বাকির টাকা উঠাতে না পেরে শেষ পর্যন্ত ২০২০ সালের দিকে ডাইনিংয়ের দায়িত্ব ছেড়ে দেন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence