সুইজারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা, রয়েছে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ
- সাগর হোসেন
- প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:৫১ PM , আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০:১৪ PM
নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরপুর ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ সুইজারল্যান্ড। বিখ্যাত CERN (European Council For Nuclear Research) ল্যাবরেটরী এদেশের জেনেভা শহরেই অবস্থিত। ব্যাংকিং, শিক্ষাব্যবস্থা এবং উন্নত জীবনযাত্রার মানের জন্য বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলোর মধ্যে সুইজারল্যান্ড অন্যতম। সুইজারল্যান্ডের সাথে জড়িত রয়েছে বিজ্ঞান-গবেষণা ও আপেক্ষিকতার জনক আইনস্টাইনের নাম। মানব সম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে সুইস সরকার বরাবরই জোর দিয়ে আসছে শিক্ষার ওপর। সরকারি তহবিলের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও দিয়ে থাকে উচ্চশিক্ষায় স্কলারশিপের সুযোগ। এর ফলে বর্তমানে প্রচুর শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য পাড়ি জমাচ্ছে সুইজারল্যান্ডে।
সুইজারল্যান্ডের ডিগ্রিসমূহঃ
সুইস বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতক ডিগ্রী (৩/৪ বছর মেয়াদী), স্নাতকোত্তর ডিগ্রী (১.৫-২ বছর মেয়াদী) এবং পিএইচডি ডিগ্রী (৩-৫ বছর মেয়দী) করানো হয়। আপনি যদি স্নাতক ডিগ্রির জন্য কোন সুইস বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে চাইলে শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হতে হবে। আর ভাষাগত দক্ষতা-আপনাকে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ভাষায় পড়ানো হয়, সে ভাষায় দক্ষ হতে হবে। স্নাতকোত্তর ডিগ্রীতে আবেদন করার জন্য আপনার কমপক্ষে ১৬ বছরের শিক্ষা জীবন (Schooling) থাকতে হবে। ভাষাবিষয়ক দক্ষতা থাকতে হবে। এজন্য IELTS-এ আপনাকে 6.5 থেকে 7.00 পেতে হবে। এখানে উল্লেখ্য যে বেশ কিছু সুইস বিশ্ববিদ্যালয়ে GRE/ GMAT চাইতে পারে। সুইজারল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয় ইংরেজী, ফরাসি, জার্মানি এবং ইতালীয় ভাষায়। তাই, আপনি বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে জার্মান কিংবা ইতালীয় ভাষায় দক্ষতা অর্জন করে আবেদন করতে পারেন।
ভর্তির সময়
সুইজারল্যান্ডে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারনত বছরে দুইবার আবেদন করা যায়। (১) সামার সেশন (Summer Session) (২) উইন্টার সেশন (Winter Session)। শীতকালীন সেশনে আবেদন অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যভাগ এবং গ্রীষ্মকালীন সেশনে আবেদন মার্চ বা এপ্রিলের মধ্যবর্তী সময় থেকে জুন বা জুলাইয়ের মধ্যবর্তী সময় পর্যন্ত হয়ে থাকে। সাধারণত ৬-৮ মাস আগেই ভর্তির আবেদন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সুইস বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে বিজ্ঞপ্তি দেখে অনলাইনে আবেদন করতে হবে।
আরও পড়ুন: ইডেন ছাত্রলীগ সভাপতি রিভা-সম্পাদক রাজিয়ার বিরুদ্ধে মামলা
পড়াশুনার খরচ ও জীবনযাত্রার ব্যয়ঃ
অন্যান্য দেশের তুলনায় সুইজারল্যান্ডে পড়াশুনার খরচ অনেক বেশী। কারণ এটি বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল দেশ। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে খরচ কম বেশি হয়ে থাকে। আপনাকে ব্যাচেলর ডিগ্রির জন্য বছরে প্রায় ৮ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা, মাস্টার্স ডিগ্রীর জন্য বছরে ১০ লাখ থেকে ১৪ লাখ টাকা গুনতে হবে। সুইজারল্যান্ডে জীবনযাত্রার ব্যয়ও অনেক বেশী। স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে আপনাকে বাৎসরিক প্রায় ৮০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ টাকা গুনতে হবে।
ভিসা আবেদন ও প্রয়োজনীয় নথিঃ
বাংলাদেশীরা সুইজারল্যান্ডের ডি ভিসার (D- Visa) জন্য আবেদন করতে পারবে। আপনি চাইলে ভিসা আবেদন সম্পর্কিত পরামর্শের জন্য ঢাকাস্থ সুইস এম্বেসীতে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনি এম্বেসীর মাধ্যমেই আবেদন করতে পারবেন।
ভিসা আবেদনের জন্য সাধারণত নিম্নোক্ত নথিগুলোর প্রয়োজন হয়ে থাকে,
• আবেদন ফর্ম ।
• ছবি ।
• পাসপোর্ট এর ফটোকপি।
• সিভি।
• মোটিভেশন লেটার।
• সকল একাডেমিক কাগজপত্র।
• অফার লেটার (সুইস বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সত্যায়িত)।
• ঘোষণা পত্র যে, আপনি পড়াশোনা শেষে নিজ দেশে ফিরে আসবেন।
• স্পন্সর কর্তৃক হলফনামা (এফিড্যাভিট)।
• আয়ের উৎস হিসেবে ১২ মাসের ব্যাংক স্ট্যাটমেন্ট/সনদ, ইনকাম ট্যাক্স পেপার, ফিক্সড জামানত ইত্যাদি এবং যদি ব্যাংক লোন হয় তাহলে ব্যাংককে নিশ্চিত পত্র ইস্যু করতে হবে তা প্রমাণের জন্য।
• কমপক্ষে ১ বছরের টিউশন ফি পরিশোধের প্রমাণ কপি।
• IELTS পরীক্ষার সনদ
সুইজারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষায় স্কলারশিপ:
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য সুইজারল্যান্ডের সরকারি স্কলারশিপ হচ্ছে গভর্নমেন্ট এক্সিলেন্স স্কলারশিপ। প্রতিবছর যেকোনো বিষয়ে বহিরাগত স্নাতকোত্তর গবেষকদের এই স্কলারশিপটি দেওয়া হয়। এর মধ্যে মাসিক জীবনযাত্রা, পড়াশোনার সম্পূর্ণ খরচ, স্বাস্থ্য বীমা, ভ্রমণ খরচ/বিমান ভাড়া এবং আবাসন খরচ অন্তর্ভুক্ত। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ডক্টরেট বা পোস্ট-ডক্টরাল স্তরে গবেষণার জন্য সুইজারল্যান্ডগামী হয় হাজার হাজার শিক্ষার্থী।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর স্কলারশিপের মধ্যে ইটিএইচ জুরিখ এক্সিলেন্স মাস্টার্স স্কলারশিপ, মাস্টার্স ডিগ্রীধারীদের জন্য ইপিএফএল এক্সিলেন্স ফেলোশিপ, গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট জেনেভা স্কলারশিপ, পিএইচডির জন্য জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় স্কলারশিপ, আন্তর্জাতিক মানবিক আইন এবং মানবাধিকার জেনেভা একাডেমি স্কলারশিপ অন্যতম।
এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বছরে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার সুইস ফ্রাঙ্ক পর্যন্ত অনুদান দিয়ে থাকে, মার্কিন ডলারে যার মূল্যমান দাঁড়ায় ৬৫ হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে পড়াশোনার খরচ ছাড়াও আবাসনসহ জীবনযাত্রার অন্যান্য খরচও মিটে যায়।
পার্ট টাইম জব
সুইজারল্যান্ডে পড়াশুনার পাশাপাশি আপনি সপ্তাহে ১৫ ঘন্টা কাজ করা করার সু্যোগ পাবেন। আবার শর্ত সাপেক্ষে অনেক সময় ফুল টাইম কাজ করারও অনুমতি পেতে পারেন। তবে প্রথম ৬ মাস আপনি কোন কাজই করতে পারবেন না। ৬ মাসের পরে আবেদন করে অনুমতি নিয়ে আপনি পার্ট টাইম কাজ করার সুযোগ পাবেন।
চাকুরি এবং স্থায়ী বসবাসের (পিআর) সুযোগ
সুইজারল্যান্ডে পড়াশুনা শেষ করে আপনি ৬ মাসের জব সার্চ ভিসা পাবেন। আর নাগরিকত্ব পেতে সুইজারল্যান্ডে আপনাকে বসবাস করতে হবে ১২ বছর।