বাকৃবি ভেটেরিনারি শিক্ষার্থীদের কৃষিখামারে একদিন

ভেটেরিনারি শিক্ষার্থীদের কৃষিখামারে একদিন
ভেটেরিনারি শিক্ষার্থীদের কৃষিখামারে একদিন  © টিডিসি ফটো

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) দেশের বিশেষায়িত কৃষি বিষয়ক ডিগ্রি প্রদানকারী অন্যতম একটি বিশ্ববিদ্যালয়। বাকৃবি শিক্ষা কারিকুলামে তাত্বিক পড়াশোনার পাশাপাশি হাতে কলমে শিক্ষাকে প্রাধান্য দেয়। যাতে করে শিক্ষার্থীরা শ্রেণি কক্ষে যে বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে তার ব্যবহারিক প্রয়োগ উপলব্ধি করতে পারেন। এজন্য কারিকুলামের অন্তর্ভুক্ত প্রায় প্রতিটি বিষয়ের সাথে রয়েছে ব্যবহারিক ক্লাস, ল্যাব এবং মাঠ পর্যায়ের কাজ। 

সম্প্রতি বাকৃবির ভেটেরিনারি অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা প্যারাসাইটোলজির (পরজীবীবিদ্যা) হেলমেন্থোলজি (কৃমি ও কৃমিঘটিত রোগ) কোর্সের অংশ হিসেবে শিক্ষা সফরে ৩টি কৃষিখামার ভ্রমণ করেন। যেখানে শিক্ষার্থীরা লেয়ার মুরগি, ছাগল, ভেড়া ও বিভিন্ন জাতের গরু লালন পালন পদ্ধতি হাতে কলমে দেখেন। শিক্ষা সফরটি আয়োজন করে বাকৃবি ভেটেরিনারি অনুষদের প্যারাসাইটোলজি বিভাগ।

শরৎ-এর কাশফুলের মত শুভ্র আকাশের এক রৌদ্রজ্জ্বল দিনে দ্বিতীয় বর্ষের প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী যাত্রা শুরু করেন কৃষিখামার ভ্রমণের উদ্দেশ্যে। বাকৃবি ক্যাম্পাস থেকে ৪টি বাসে যাত্রা শুরু হয় ময়মনসিংহ বিভাগের ভালুকা উপজেলার দিকে। গন্তব্য সেখানকার জম জম এগ্রো খামার, সততা এগ্রো খামার এবং উসামা এগ্রো খামার।

গন্তব্য বেশি দূরে নয়, অল্প সময়ের যাত্রা তবুও বাসের মধ্যে হই হুল্লোর, নাচানাচি, খুনশুটি করে কেটে যায় পুরোটা সময়। কিছুক্ষণের মধ্যেই শিক্ষার্থীরা পৌঁছে যায় ত্রিশাল উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিস ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে। সেখানে কর্মরত উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও বাকৃবির সাবেক শিক্ষার্থী ডা. তানজিলা ফেরদৌসী ভেটেরিনারি অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের উষ্ণ অভ্যর্থনা দিয়ে বরণ করে নেয়। এরপর শিক্ষার্থীরা আবার যাত্রা শুরু হয় সততা ও জম জম কৃষিখামারের উদ্দেশে।

যমযম কৃষিখামারটি মূলত একটি লেয়ার মুরগি খামার। এখানে মুরগি পালন করা হয় ডিম উৎপাদন করার লক্ষ্যে। প্রায় ৬ বিঘা জমির উপর খামারটি গড়ে তোলা হয়। খামারে বর্তমানে প্রায় ২২০০টি ডিম প্রদানকারী মুরগি এবং আরো ২৩০০টি মুরগি রয়েছে যারা এখনো ডিম পালন শুরু করেনি। খাঁচা সিস্টেমে মুরগি গুলো পালন করা হয়। প্রতিটি খাঁচায় ৩টি করে মুরগি রাখা হয়েছিল।

পরজীবী ঘটিত রোগ ও বিভিন্ন সংক্রমণ রোগ এড়াতে খাঁচাগুলো মাটি থেকে কিছুটা উপরে নির্মাণ করা হয়। এই মুরগি গুলোকে খাঁচার মধ্যেই খাবার ও পানি দেওয়া হয় ও নির্দিষ্ট সময়ে ভ্যাকসিন সহ কৃমিনাশক প্রদান করা হয়। প্রতিদিন এই খামার থেকে প্রায় ১৮০০ ডিম উৎপাদিত হয়

এরপরে শিক্ষার্থীদের গন্তব্য ছিল উসামা বিন সারয়ার সাহেবের বিখ্যাত কৃষিখামার উসামা কৃষিখামার। একটা ছোট্ট নান্দনিক পার্কের আদলে গড়ে তোলা হয় খামারটি। একটা বড় পুকুর, পুকুর পাশে নান্দনিক বসার জায়গা, একটা নান্দনিক কারুকার্য খচিত ও নানা ধরনের আলোকসজ্জায় সজ্জিত বিশাল বহুল অতিথিশালা রয়েছে এখানে।

এই পুকুর পাড়ে সবার জন্য বসার জায়গা বানানো হয় এবং আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়। তার নিজস্ব খামারের উৎপাদিত গরুর দুধের সুস্বাদু পায়েস খেতে দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীরা সকলে তার অতিথিয়তায় মুগ্ধ হন।

উসামা বিন সারয়ার নিজের শখ থেকেই মূলত ২০১৪ সালে গড়ে তোলেন এই খামার। তিন একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত এটি। মুলত গরু, ছাগল ও ভেড়া উৎপাদন করা হয় এখানে যা কুরবানী সময় বাজারজাত করা হয়। এছাড়াও গরু পালন করা হয় দুধ উৎপাদন করার জন্য। হলিস্টান ফ্রিজিয়ান, দেশি, ব্রাহামা ক্রস, শাহীওয়াল, গীর, ইন্দ-ব্রাজিল ইত্যাদি বিভিন্ন জাতের গরু লালন পালন করে থাকেন। এদের লালন পালনে নিজেদের উৎপাদিত অর্গানিক খাবার খাওয়ানো হয়। কৃমিনাশক তিন মাস পর পর প্রদান করা হয় এবং নিয়মিত ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করা হয়।

বর্তমানে খামারে গরু আছে ২২০টা ছাগল আছে ৫০টা ভেড়া আছে ১৬টা। এক একটা গরুর ওজন মৌসুমে ৮০০-৯০০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। কোরবানীর মৌসুমে বছরে বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ২০০ টির মতো পশু। খামারের ম্যানেজার বলেন, আমরা লাভের উদ্দেশ্যে নয় বরং আনন্দ ভাগাভাগির জন্যই পশুপালন করি।

বিকেলে আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও কুইজ প্রতিযোগিতা। ভেটেরিনারি অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সিফাতের উপস্থাপনায় প্যারাসাইটোলজি কোর্স থেকে বিভিন্ন মজার মজার প্রশ্ন করা হয় সকলের উদ্দেশ্যে এবং সঠিক উত্তরদাতাকে পুরস্কার প্রদান করা হয়।

এটাই ছিল এই শিক্ষা সফরের সবথেকে মজার অংশ। এর পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান, কৌতুক ইত্যাদি পরিবেশ করেন আমাদের বন্ধু-বান্ধবীরা। ত্রিশাল উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিস ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের সার্জন মহোদয়  সুন্দর সুন্দর গান পরিবেশন করেন। সব মিলিয়ে চমৎকার একটি দিন অতিবাহিত করে শিক্ষার্থীরা।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence